গানের ন্যান্সি অন্য ন্যান্সি by মেহেদী মাসুদ

: ন্যান্সি, আপনি এখন কোথায় আছেন?
: ময়মনসিংহে, শ্বশুরবাড়িতে।
: নতুন জীবন। কেমন লাগছে?
: ভালো। জায়েদ (ন্যান্সির স্বামী) পৌরসভায় চাকরি করছে, ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।
ওদের একান্নবর্তী পরিবার। ১১ জন চাচা। চারজন চাচা আর তাঁদের পুরো পরিবার এই বাড়িতেই আছে। বাড়িভর্তি মানুষ।
: নেত্রকোনার কথা মনে পড়ে?
: নেত্রকোনার সঙ্গে কোনো জায়গার তুলনা হয় না। সেই চার বছর বয়স থেকে ওখানে ছিলাম। ওখানে আমার স্কুল, বড় হওয়া, গান শেখা। বাতাসের গন্ধটাই অন্য রকম। আমাদের বাড়ি নেত্রকোনার সাতপাইতে। একেবারে শেষ সীমানায়। দোতলা বাড়ির ছাদে গিয়ে যখন দাঁড়াই, যত দূর চোখ যায়, শুধু ধানখেত। দূরে ছোট ছোট কিছু ঘর।
: আপনি তো নেত্রকোনায় বাড়ি করেছেন।
: হ্যাঁ। পড়ে আছে। আমাদের বাড়িটা ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি জমা হয়ে আছে। আম্মার স্মৃতি। আম্মার কথা খুব মনে পড়ে। আম্মাকে সবচেয়ে বেশি মিস করছি।
ন্যান্সির কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। কিছুক্ষণ নীরবতা। গত একটা বছরে ন্যান্সির জীবনে ঘটেছে অনেক ঘটনা। তার কোনোটাই এখন আর মনে করতে চান না তিনি। কিন্তু মায়ের মৃত্যু তাঁকে বেশি নাড়া দেয়। ন্যান্সি বলেন, ‘আম্মা যে আমার কত বড় অবলম্বন ছিলেন, তা বুঝতে পেরেছি আম্মার মৃত্যুর পর।’
গত রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হলো ন্যান্সির সঙ্গে। এ বছরের ৪ মার্চ জায়েদের সঙ্গে বিয়ে হয় ন্যান্সির। এর পর থেকে তিনি ময়মনসিংহেই আছেন।
: সবাই ঢাকায় আসে। আর আপনি ঢাকা ছেড়ে চলে গেলেন নেত্রকোনায়। এখন আছেন ময়মনসিংহে।
আবারও ন্যান্সির সঙ্গে কথোপকথন—
: আমার কিন্তু কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। যখন কোনো শো থাকে, টিভিতে অনুষ্ঠান থাকে কিংবা গান রেকর্ডিং—আমি ঢাকায় চলে যাই। যাঁদের সঙ্গে কাজ করছি, তাঁরা আমার সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। আর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ।
: কিন্তু সবাই তো ঢাকাতেই থাকতে চায়।
: আমিও চেয়েছি। ঢাকার উত্তরায় বাসা ভাড়া নিয়েছি। কিন্তু একা গেলে ওখানে থাকা হয় না। কেমন যেন ভয়-ভয় লাগে। আত্মীয়দের বাসায় থাকি।
: ময়মনসিংহ কেমন লাগছে?
: আমাদের বাসা নতুন বাজারে। বুঝতেই পারছেন, সারা দিন মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি। পাশেই পার্টি অফিস। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। বাড়ির বাইরে ডায়াবেটিক সমিতি। এরপর উদীচী, মহিলা কল্যাণ সমিতি, শিশু একাডেমী, নজরুল একাডেমী। বারান্দায় দাঁড়ালে অনেক বছরের পুরোনো একটি বড় হাঁড়ি চোখে পড়ে। তার পাশেই টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। রেওয়াজ করার কোনো পরিবেশ নেই। তার পরও চেষ্টা করছি।
গত এক বছরে ন্যান্সির জন্য খুব ভালো খবরের একটি হলো ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ পাওয়া। ২০০৯, ২০১০, ২০১১ আর ২০১২—পর পর চারবার তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন। তাই পুরস্কারের কথা উঠতেই ন্যান্সির কণ্ঠ বদলে যায়। যেন খুশির ছোঁয়া লেগেছে। জানালেন, এবার তিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন দেহরক্ষী ছবির ‘ভালোবাসি তোমায়’ গানটির জন্য। ধন্যবাদ জানালেন গানটির সুরকার ও সংগীত পরিচালক অদিতকে। ন্যান্সি বলেন, ‘এর আগে গানটি আরেকজন শিল্পীকে দিয়ে অদিত রেকর্ড করিয়েছিলেন। পরে তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানান।’
: এরপর?
এবার ন্যান্সির কণ্ঠে হতাশা। ‘অনেক দিন কোনো ভালো গান পাচ্ছি না। আমি তো খুব বেছে বেছে গান গাই। সামনের বছর এই প্রতিযোগিতায় আমার কোনো গান থাকবে কি না, জানি না। আমি যাঁদের সঙ্গে গান করি, তাঁদের প্রায় সবাই হাত গুটিয়ে বসে আছেন। সামনের দিনগুলোয় কী হবে—ভাবতে পারছি না!’
এর মাঝেও ন্যান্সির গান গাওয়া থেমে নেই। জানালেন, এবার ঈদে দেশ টিভিতে লাইভ শো করবেন। ঈদে তাঁর কোনো একক অ্যালবাম বের হচ্ছে না, কিন্তু গান থাকছে। মিশ্র শিল্পীর কয়েকটি অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি। বলেন, ‘এবার ঈদে শ্রোতারা সব মিলিয়ে আমার কাছ থেকে অন্তত ১০টি নতুন গান পাবেন। এবার একটি দেশের গান গেয়েছি। প্রিন্স মাহমুদের সুর ও সংগীতে। কয়েকজন শিল্পীকে নিয়ে তিনি একটি অ্যালবাম করছেন। তাতে আমার গাওয়া দুটি গান থাকছে। আম্মাকে নিয়ে আমি একটি গান গেয়েছি, এই গানটিও এবার ঈদে শ্রোতারা পাবেন। তপুর সঙ্গে একটি দ্বৈত কণ্ঠের গান গেয়েছি। কয়েকটি ছবিতেও গান গেয়েছি। সেগুলোও আসবে এবার ঈদে।’
রাত বাড়ছে। ন্যান্সি কথা থামালেন। রোদেলাকে (ন্যান্সির মেয়ে) বললেন দাদুর কাছে গিয়ে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। রোদেলা এখন তাঁর কাছেই আছে।
শেষে বলেন, ‘দোয়া করবেন, আমি আবারও যেন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনয়ন পেতে পারি।’

No comments

Powered by Blogger.