ভাসমান দোকানের দখলে ফুটপাত

ঈদ সামনে রেখে নগরের প্রায় সব সড়কের ফুটপাতজুড়ে গড়ে উঠেছে ভাসমান দোকান। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সড়কের দুই পাশে চলাচল করেন পথচারীরা। এতে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে পড়ায় মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে যানজট।
সরেজমিনে নগরের পুরোনো রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতজুড়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে অনেকগুলো ছোট ছোট দোকান তৈরি করা হয়েছে। এগুলোতে বিক্রি হচ্ছে লুঙ্গি, গামছা, শার্ট, চশমা, মুঠোফোনসহ নানা রকম পণ্য। পথচারীদের চলাচলের ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় তাঁরা হাঁটাচলা করছিলেন সড়ক দিয়ে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।
কারা বসার অনুমতি দিয়েছেন, তা বলতে রাজি হচ্ছিলেন না এখানকার হকাররা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য পরিচয়ে কিছু তরুণকে এবং পুলিশ সদস্যদের দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা দিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন তাঁরা।
শুধু স্টেশন রোড নয়, নগরের ইপিজেড, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, জুবিলি রোড, বিআরটিসি, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও আমতলের মতো ব্যস্ত এলাকার চিত্রও প্রায় একই রকম। এসব এলাকায় ভাসমান দোকানের কারণে দিনভর যানজট লেগেই থাকে।
হকার সমিতি সূত্রে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের হকারদের নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি সংগঠন। এগুলো চট্টগ্রাম হকার্স লিগ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হকার সমিতি এবং চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতি। এ তিন সংগঠন মিলে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার ফেডারেশন। তিন সংগঠনের অধীনে প্রায় ১২ হাজার হকার ফুটপাতে ব্যবসা করেন বলে জানান হকার নেতা মিরন হোসেন। তবে নগরের বিভিন্ন এলাকার হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর বাইরেও ঈদ উপলক্ষে আরও দুই থেকে তিন হাজার মৌসুমি হকার নগরের ফুটপাত এবং বিভিন্ন রাস্তায় পসরা নিয়ে বসেছেন।
রিয়াজ উদ্দিন বাজার, নূপুর মার্কেট থেকে শুরু করে পুরোনো জলসা সিনেমা হয়ে আমতল পর্যন্ত বিশাল এলাকার ফুটপাতের পুরোটাই হকারদের দখলে। এই এলাকায় ফুটপাত-সংলগ্ন সড়কও দখল হয়ে গেছে। এখানকার হকারদের বেশির ভাগই হকার সমিতির সদস্য বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন হকার বলেন, প্রতিদিন তাঁরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে সমিতিকে চাঁদা দিয়ে ব্যবসা করছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন জানান, তাঁরা এলাকার বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রের পাশের জায়গায় বসার জন্য দোকানমালিককে টাকা দিয়ে থাকেন।
আমতল এলাকার ভ্রাম্যমাণ হকার, টুপি বিক্রেতা রহুল মিয়া বলেন, ‘আমাদের বহু কষ্টে ব্যবসা করতে হয়। পুলিশকে টাকা দিয়ে আবার তাদের ধাওয়াও খেতে হয়।’
মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ হিল বাকি প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
আগ্রাবাদ এলাকার হকার রহিম উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে শুধু ফুটপাত দখলের অভিযোগ তোলেন সবাই। কিন্তু আমাদের বসার জায়গা দিলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।’
এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের যানবাহন বিভাগের উপকমিশনার (বন্দর) নিহার রঞ্জন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নগরবাসী ও যানবাহনের স্বচ্ছন্দ চলাচলের জন্য আমি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সড়কের মোড় হকারমুক্ত করেছি। ভবিষ্যতে বারিকবিল্ডিং এবং নিমতল মোড় হকারমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মিরন হোসেন ফুটপাতে হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা হকারদের কাছে দৈনিক ১০ টাকা ছাড়া আর কোনো চাঁদা নিই না। এ ছাড়া যার যার নামে যত টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে তাই জমা দিতে হয়। তাঁরা ফেডারেশনের নামে বরাদ্দ বিদ্যুৎ মিটারের অধীনেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন।’ মিরন বলেন, ‘স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামে হকারদের জন্য কোনো মার্কেট হয়নি। ফলে ফুটপাত ছাড়া তাদের আমরা কোথাও জায়গা করে দিতে পারিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে নগরের জাম্বুরি মাঠে হকারদের জন্য একটি মার্কেট করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাজি না হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এতে ফেডারেশনের ছয়জন এবং করপোরেশনের ছয়জন কর্মকর্তা রয়েছেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, ‘আমরা হকারদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিচ্ছি। এ ব্যাপারে রমজানের পর কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আপাতত শুধু রাস্তায় অবস্থানকারী হকারদের সরিয়ে দিচ্ছি। রমজান উপলক্ষে অন্য হকারদের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে এ ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।’

No comments

Powered by Blogger.