'আবেগকে পলিটিক্যালি দেখলে চলবে না'

জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও রায় নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জাসদের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল এমপি বলেছেন, 'জনতার আবেগকে শুধু পলিটিক্যালি দেখলে চলবে না, এটাকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করতে হবে।
' তিনি বলেন, 'রায় নিয়ে গণমানুষের মূল্যায়নকে আলাদাভাবে দেখতে হবে। কারণ গণমানুষের পার্সেপশনে ভিন্ন মাত্রা আছে। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায়ের পর গণজাগরণ মঞ্চ থেকে লাখো মানুষ যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, সেই মানুষগুলো এখনো যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়। এবং বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তিও চায়। তাই বলে বলা যাবে না তারা বিচারকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে চায়। প্রভাবিত করতে চায়।' তিনি বলেন, 'বিচারে আবেগ জড়িত হলে জিনিসটা অন্য চোখে দেখার সুযোগ থাকে।'
মঙ্গলবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ২৪-এর সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে টক শো মুক্তবাক অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও দৈনিক নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, আজকে মানবতাবিরোধী রায় নিয়ে জাগরণ মঞ্চ ও জামায়াতে ইসলাম পাল্টাপাল্টি যে হরতাল পালন করল, তাতে বিচারকে রাজনীতিতে টেনে আনা হলো কি না। হয়ে থাকলে বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, 'বিচারকে রাজনীতির সঙ্গে টেনে আনলেই এমনটা হতে পারে। বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বিচারিক কাজে প্রভাব ফেলতে পারে- এমন কোনো কিছুই করা ঠিক না।'
এ সময় নুরুল কবীর বলেন, 'গণজাগরণ মঞ্চ কি রাজনৈতিক কোনো প্লাটফর্ম, তারা কেন হরতাল ডাকতে যাবে?' তখন আসিফ নজরুল বলেন, 'তারা যদিও সরাসরি কোনো ধরনের রাজনীতি করে না, তবু তারা এখন রাজনীতির অংশ। কারণ তাদের দাবিগুলো অনেকটা রাজনৈতিক।' তিনি বলেন, 'বিচারের রায় যে রকমই হোক, তা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। কারণ বিচারের রায়ে কোনো পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে। অপরাধ যত কঠোরই হোক না কেন, বিচারক ইচ্ছা করলে আসামির সাজা কমিয়ে দিতে পারেন। এটা নিয়ে কথা বলাও ঠিক না।' তিনি আরো বলেন, 'হতে পারে গহর রিজভী ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক যে বৈঠক করেছেন, তাতে কোনো আঁতাতের বিষয় ছিল। কিন্তু তা তো আর স্পষ্ট না। কারণ রাজনৈতিক দলের যে কারো সঙ্গে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের দেখা-সাক্ষাৎ হতেই পারে। তাই বলে এটা বলা যাবে না যে কোনো গোপন আঁতাত হয়েছে। সমস্যাটা হচ্ছে সরকারি তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তাই জনমনে বিভিন্ন সংশয় দেখা দিয়েছে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে মাঈনুদ্দীন খান বাদল এমপি বলেন, 'বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কেউ যদি বলেন, বিচার মনি না বা যদি বলেন, কিছুই মানি না। তাহলে তো আর কোনো বিষয় রইল না।' তিনি বলেন, 'মন্ত্রী-এমপিদের অতিকথনই যত সমস্যার মূল। অতিকথনের ফলেই অতিসমস্যা হয়।' তিনি আরো বলেন, 'বিচারকে রাজনীতিতে টেনে আনা ঠিক না।'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে একজন দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে কি শুধুই জামায়াতের নেতারা যুদ্ধাপরাধী। অন্য দলে কি যুদ্ধাপরাধী নেই?
এ সময় নুরুল কবীর বলেন, 'সব দলেই যুদ্ধাপরাধী থাকতে পারে। তবে এটা প্রমাণ করবেন আদালত। তার পরও কিছু বিষয় নিয়ে মানুষের জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। যেমন কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের কি একই ব্যক্তি? আবার দেলু রাজাকার আর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কি একই লোক? এ বিষয়ে কিন্তু সরকার থেকে কোনো সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তাই এ নিয়ে জনমনে জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। সরকারকেই এ বিষয়ে জনভাবনা দূর করতে হবে।' তিনি বলেন, 'গণজাগরণ মঞ্চ থেকে রায় নিয়ে জনগণ তাদের কথা বলতেই পারে। তবে তা হতে হবে গঠনমূলক। এর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত হলেই বিতর্কের বিষয় চলে আসে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর একটি ওয়াজের বিষয় নিয়ে সংসদে বিতর্কের বিষয়ে আলোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাঈনুদ্দীন খান বাদল বলেন, 'আল্লামা শফী যা না বলেছেন, তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সংসদে।' এ সময় নুরুল কবীর বলেন, 'যা কিছু প্রাকৃতিক, তা সভ্যতা নয়। সভ্যতা হলো যা অর্জন করা হয়।'

No comments

Powered by Blogger.