মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড-হরতাল-নৃশংসতা বন্ধ করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল বুধবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।
একাত্তরে মুজাহিদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক এবং আলবদর বাহিনীর শীর্ষ নেতা। শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যা, সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ ও রুমীসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাসহ তাঁর বিরুদ্ধে যে সাতটি অভিযোগ ছিল এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। দুটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড, দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, একটি অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য দুটি অভিযোগ থেকে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রায়ে শহীদদের পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোকজন সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আগের মতোই মুজাহিদের মামলার রায়ের দিন অর্থাৎ গতকালও জামায়াতে ইসলামী হরতাল ডেকেছিল এবং সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক সহিংসতায় নেমেছিল। আগামীকালও হরকাল ডাকা হয়েছে। এর আগে সোমবার জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের রায়ের দিন এবং রায় ঘোষণার পরদিনও তারা হরতাল ডেকেছিল। এই তিন দিনের হরতালে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে বহু যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করেছে। তাদের নিক্ষিপ্ত বোমায় চট্টগ্রামে এক যুবকের পা উড়ে গেছে। গাজীপুরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে শিবিরের বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ অনেকেই আহত হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরেরও বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। এ সবই দুঃখজনক, বেদনাদায়ক। কেন এই হরতাল? জামায়াত-শিবির আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। শুনানিকালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। উচ্চতর আদালতে আপিল করছে। অর্থাৎ সব ধরনের আইনগত সুবিধা ভোগ করছে। তার পরও রায় ঘোষণার দিন রায় কী হবে, না জেনেই হরতাল ডাকার কী যুক্তি থাকতে পারে? কেন সারা দেশে নাশকতা, নিষ্ঠুরতা চালানো হচ্ছে। বগুড়ায় রেললাইনের আট শতাধিক ক্লিপ খুলে ফেলা হয়েছে। এর ফলে যদি একটি রেল দুর্ঘটনা ঘটত, তাহলে কত লোকের মৃত্যু হতো? সেই রেলযাত্রীদের কী দোষ? কেন তারা নৃশংসতার শিকার হবে? পরপর তিন দিনের হরতালের কারণে রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। পবিত্র রমজান মাসে এর ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কারা? জামায়াত-শিবির যেহেতু আইনের সুবিধা নিচ্ছে, তাই তারা অবিলম্বে তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে- সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। ঘোষণা অনুযায়ী আপিল করুন। আইনি লড়াই চালিয়ে যান। হরতালের নামে এই সহিংসতা কারো কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.