আটক উ.কোরীয় জাহাজে থাকা অস্ত্রগুলো কিউবার

পানামা খাল থেকে আটক উত্তর কোরীয় জাহাজে পাওয়া অস্ত্রশস্ত্রের মালিকানা স্বীকার করেছে কিউবা। সমাজতান্ত্রিক দেশটি বলেছে, সোভিয়েত আমলে তৈরি ওই অস্ত্রগুলো মেরামত করার জন্য তারা উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে পাঠিয়েছিল। পানামার প্রেসিডেন্ট রিকার্ডো মার্টিনেইলি গত মঙ্গলবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, পানামার কর্তৃপক্ষ উত্তর কোরিয়ার ‘অঘোষিত সামরিক সরঞ্জামবাহী’ একটি জাহাজ আটক করেছে। গতকাল বুধবার কিউবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শান্তি, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণসহ নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা’ প্রদর্শন প্রশ্নে কিউবা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিবৃতিতে বলা হয়, পানামায় আটক হওয়া জাহাজটিতে ২৪০ টন ওজনের ‘সেকেলে’ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, নয়টি ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ, দুটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ও ১৫টি মিগ ইঞ্জিন। কিউবা বলেছে, ওই প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সবই বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে তৈরি। সেগুলো উত্তর কোরিয়ায় নিয়ে মেরামতের পর কিউবায় ফেরত আনা হতো। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা থেকে কিউবা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করেছিল। বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচির কারণে উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের অস্ত্র আমদানি বা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। চোং চোন গ্যাং নামের উত্তর কোরীয় পতাকাবাহী জাহাজটিতে পরিবহন করা মূল মাল হচ্ছে ১০ হাজার টন চিনি। জাহাজটি গত ১২ এপ্রিল রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য থেকে ছেড়ে যায়। প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক উপকূলের কিউবায় যেতে সেটি জুনের শুরুতে পানামা খালে প্রবেশ করে। পানামার কর্মকর্তারা বলেছেন, জাহাজটি পানামা খালে চলার সময় ধাতুর পাত বহন করছিল। তবে খালের ক্যারিবীয় অংশ ছেড়ে যাওয়ার পর তা স্যাটেলাইটের নজরদারি পদ্ধতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১১ জুলাই আবার এর অবস্থান শনাক্ত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবস্থান শনাক্তের এই পদ্ধতি জাহাজের নাবিকেরাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরে পানামার কর্মকর্তারা জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন। তাঁদের সন্দেহ হয়, এতে অবৈধ কোনো পণ্য বহন করা হচ্ছে। বিশেষ করে মাদকদ্রব্যের চালান রয়েছে বলে তাঁরা প্রাথমিকভাবে মনে করেছিলেন। পানামার কর্মকর্তাদের যোগাযোগের চেষ্টায় জাহাজটির নাবিকেরা তখন কোনো সাড়া দেননি। উত্তর কোরিয়া ও কিউবা উভয়ই কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। দেশ দুটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। গত জুন মাসের শেষেও উত্তর কোরিয়ার উচ্চপর্যায়ের একটি সামরিক প্রতিনিধিদল কিউবায় যায়। অস্ত্র পাচারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হাফ গ্রিফিথস মনে করছেন, জাহাজে অস্ত্র পরিবহনের এ ঘটনাটির মধ্যে কিউবা ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বড় পরিসরে নবায়ন করার আভাস রয়েছে। পানামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটির পাঁচটি কনটেইনারের মধ্যে তাঁরা কেবল একটিতে তল্লাশি চালিয়েছে। তল্লাশি শেষ করতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। জাহাজটির ৩৫ জন নাবিককে আটক করা হয়েছে। তাঁরা অবৈধ অস্ত্র পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি মুখপাত্র প্যাট্রিক ভেনট্রিল পানামা কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আটক জাহাজটিতে তল্লাশির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন রয়েছে। পানামা এ বিষয়ে সাহায্য চাইলে ওয়াশিংটন তা দিতে প্রস্তুত। বিবিসি, এএফপি ও আল-জাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.