সেই ঘাতক পতাকাধারীর প্রাণদণ্ড

একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী কুখ্যাত আলবদরপ্রধান আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তিনটিতে (১ নম্বর ও ৬ নম্বর অভিযোগ একত্রিত করে এবং ৭ নম্বর অভিযোগকে আলাদাভাবে) মৃত্যুদণ্ড, একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একটিতে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে ওই দুটিতে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
দেশে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কাউকে এই প্রথম সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হলো। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে মুজাহিদ সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ওই সময় গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে ঘুরতেন তিনি। ২০০৭ সালের ২৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের তিনি দম্ভভরে বলেছিলেন, 'বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই।' তাঁর এ কথার পর প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছয়টি মামলার রায় দিলেন। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এবং ফরিদপুরের আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলার রায় দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে সাঈদী, কামারুজ্জামান ও বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আগের দিন মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের মামলার রায়ের তারিখ ধার্য করেন। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুজাহিদকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। পরে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয় তাঁকে। ১০টা ৪০ মিনিটে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।
রায় ঘোষণা : বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিনজন বিচারক সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। ১১টা ৫ মিনিটে রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পর্যায়ক্রমে পড়া শুরু করেন তিন বিচারক। এর আগে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সূচনা বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ২০৯ পৃষ্ঠার রায়ে ৬৫৮টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ পৃষ্ঠা পড়ে শোনানো হবে। ট্রাইব্যুনালের সদস্য শাহিনুর ইসলাম রায়ের প্রথম অংশ এবং বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া দ্বিতীয় অংশ পড়েন। শেষ অংশ পাঠ করে শোনান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনিই সাজার মেয়াদ ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেন, মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। একাত্তরে তাঁর অপরাধের ধরন ও গুরুত্ব, নিহত ও নির্যাতিতদের স্বার্থ এবং মানবতার স্বার্থে তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়াই বাঞ্চনীয়। এসব বিবেচনায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া না হলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে না। ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান পর্যায়ক্রমে তাঁর অভিযোগগুলো বর্ণনা করে কোন অভিযোগে, কী শাস্তি দেওয়া হলো- তা ঘোষণা করেন।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মুজাহিদের বিচার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, তিনি কখনো এককভাবে, আবার কখনো দলবদ্ধভাবে সরাসরি অপরাধ সংঘটিত করেন। তিনি নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সহযোগিতা ও নির্দেশ দানের মাধ্যমে এসব অপরাধ সংঘটন করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
সিরাজুদ্দীন অপহরণ ও হত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা : মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর ৫ নম্বর চামেলীবাগ বাসা থেকে ইত্তেফাকের তৎকালীন নির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণ করা হয়। মুজাহিদের পরিচালনাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন সাত-আট যুবক তাঁকে ধরে মিনিবাসে তুলে নেয়। আজ পর্যন্ত তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই অভিযোগটি মুজাহিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগ ছিল, একাত্তরের ২৭ মার্চের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প তৈরি করে। সেখানে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর প্রশিক্ষণের ক্যাম্প স্থাপন করে সেখান থেকে অপরাধজনক নানা কার্যক্রম চালানো হয়। মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি (পরে সভাপতি) হওয়ায় ওই আর্মি ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছাত্রসংঘের ও আলবদর বাহিনীর নেতা হিসেবে সেখানে উপস্থিত পাকিস্তান সেনা কমকর্তাদের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন তিনি। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুজাহিদ গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন, দেশান্তর, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন। মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালত মন্তব্য করেন।
সিরাজুদ্দীন হোসেনও একজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন। এ কারণে দুটি অভিযোগ এক করে মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার ঘোষণা দেন ট্রাইব্যুনাল।
বকচর গ্রামে গণহত্যা ও ধর্ষণ : মুজাহিদের বিরুদ্ধে সপ্তম অভিযোগ ছিল, একাত্তরের ১৩ মে মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে। সেখানে বীরেন্দ্র সাহা, উপেন সাহা, জগবন্ধু মিস্ত্রি, সত্য রঞ্জন দাশ, নিরোদ বন্ধু মিত্র, প্রফুল্ল মিত্র ও উপেন সাহাকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের হত্যা করে তাঁদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাজাকাররা সুনীল কুমার সাহার কন্যা ঝুমা রানীকে ধর্ষণ করে। অনিল সাহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, মুজাহিদের প্রত্যক্ষ মদদ ও নির্দেশ প্রমাণিত হয়। এ অভিযোগেও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
বাবু নাথকে নির্যাতনের অভিযোগ : মুজাহিদের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগে ছিল, একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে যেকোনো একদিন ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামটের (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের ছেলে রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক করে। এরপর ফরিদপুর পুরনো সার্কিট হাউসে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মুজাহিদ পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কোরাইশীর সঙ্গে কথা বলার পর বাবু নাথের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর একটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়। নির্যাতনের পর মুজাহিদের ইশারায় তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে রাজাকাররা আটকে রাখে। পরে রাতে রণজিৎ নাথ বাবু সেখান থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচান।
মুজাহিদের নির্দেশে বাবু নাথকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আলতাফ, বদি, রুমী, জুয়েল, আজাদকে নির্যাতন ও হত্যা : একাত্তরের ৩০ আগস্ট রাত ৮টায় তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি মুজাহিদ, পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলের আর্মি ক্যাম্পে যান। সেখানে তাঁরা আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমী, জুয়েল ও আজাদকে দেখে তাঁদের গালাগাল করেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেন, প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগেই তাঁদের হত্যা করতে হবে। মুজাহিদ অন্যদের সহায়তায় একজনকে ছাড়া অন্য বন্দিদের অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করেন এবং তাঁদের লাশ গুম করেন বলে মামলার সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছিল।
এই অভিযোগের সঙ্গে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ায় তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দুটি অভিযোগে খালাস : মুজাহিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল, একাত্তরের মে মাসে একদিন তাঁর নেতৃত্বে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানায় বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের ৩০০ থেকে ৩৫০টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা। পরে এলোপাতাড়ি গুলি করে ৫০-৬০ জন হিন্দু নর-নারীকে হত্যা করা হয়। চতুর্থ অভিযোগে ছিল, একাত্তরের ২৬ জুলাই সকালবেলায় ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে স্থানীয় রাজাকাররা মো. আবু ইউসুফ পাখিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করে। এরপর পাখিকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আটক করা হয়। বন্দিদের মধ্যে আবু ইউসুফ পাখিকে দেখে মুজাহিদ সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি মেজরকে কিছু একটা বলার পরই তাঁর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেখানে এক মাস তিন দিন আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনের ফলে আবু ইউসুফ পাখির বুক ও পিঠের হাড় ভেঙে যায়।
এ দুটি অভিযোগ আসামির বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা আসামির উপস্থিতি বা সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।
যেভাবে বিচার : গত বছরের ২৬ আগস্ট আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। শুরুতে সাক্ষ্য দেন শাহরিয়ার কবির। এরপর রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকসহ মোট ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে মুজাহিদের পক্ষে একমাত্র সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তাঁর ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর। যদিও আসামিপক্ষে তিনজনের সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অন্য কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেননি।
গত বছরের ২১ জুন মুজাহিদের বিরুদ্ধে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এর আগে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রসিকিউশন একই বছরের ১১ ডিসেম্বর মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে। কিন্তু তা যথাযথ না হওয়ায় একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর ফেরত দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি পুনরায় ফরমাল চার্জ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। একই বছরের ২৬ জানুয়ারি মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এরই মধ্যে ২ নম্বর ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে মামলাটি ওই বছরের ২৫ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মুজাহিদের বিরুদ্ধে গত বছর ২১ জুন অভিযোগ গঠন করা হয়। এর কয়েক দিন পর ৭ জুলাই মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে প্রসিকিউশন। কিছু ছোটখাটো ত্রুটি দূর করতেই রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদন করে। পরে শুনানি শেষে ১৫ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করে আদেশ দেন।
গত ২২ এপ্রিল প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর ৫ মে মুজাহিদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন তাঁর ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর। উভয় পক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৭ মে থেকে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে। রাষ্ট্রপক্ষ মোট ছয় কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করে। এরপর আসামি পক্ষে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমান, ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির ও ইমরান সিদ্দিকী ছয় কার্যদিবস যুক্তি উপস্থাপন করেন। উভয় পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ৫ জুন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মুজাহিদ গ্রেপ্তার হন। একই বছর ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.