গোলটেবিল বৈঠক ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বর্তমান বাস্তবতা

গত ২৯ জুন ২০১৩, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
যাঁরা অংশ নিলেন
আনিসুজ্জামান : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সালমা খান : নারীনেত্রী ও সাবেক চেয়ারপারসন জাতিসংঘ সিডও কমিটি
পঙ্কজ ভট্টাচার্য : সহসভাপতি, সামাজিক আন্দোলন
কাজী নূরুল ইসলাম : অধ্যাপক, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শাহরিয়ার কবির : নির্বাহী সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি
পি কে বড়ুয়া : মহাসচিব, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ
বেঞ্জামিন ডি কস্তা : প্রিন্সিপাল, নটর ডেম কলেজ
এ কে এম ইয়াকুব হুসাইন : প্রিন্সিপাল, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
আয়শা খানম : সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
নিরঞ্জন অধিকারী : অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট
কাবেরী গায়েন : সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু : সহকারী পরিচালক, সীমা বিহার, রামু
বিমলকান্তি আচার্য : স্কুলশিক্ষক, রাজগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: সব ধর্মের স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। গত কয়েক মাসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামুতে মন্দিরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পর নোয়াখালী, বগুড়া ও জয়পুরহাটে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আবার গত ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের পর সমাবেশ হয়। এ সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন ও দোকানপাটে আগুন, গাড়ি ভাঙচুর প্রভৃতি ঘটনায় ঢাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ধর্মের নামে এভাবে হানাহানি চলতে দেওয়া যায় না। এখন সূচনা বক্তব্য দেবেন আনিসুজ্জামান।

আনিসুজ্জামান: বাংলাদেশ একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রয়াস চলছে। সংখ্যালঘু ধর্মসম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা রাজনীতিতে কীভাবে প্রবেশ করেছে এবং কীভাবে তা দূর করা যায়, এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এখন কেবল মুখে কথা বললে হবে না, সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ করতে হবে। যে ভেদবুদ্ধি মানুষকে সম্প্রদায় দিয়ে চিহ্নিত করছে, এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজটি করতে হবে। কেবল ধর্মীয় সম্প্রীতি নয়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্যও নাগরিক সমাজসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।

বিমলকান্তি আচার্য: গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের পর আমাদের ওপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন শুরু হয়। জীবনে এমন নারকীয় ঘটনা দেখিনি। পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা। কেউ আশ্রয় পর্যন্ত দেয়নি। আশ্রয়ের জন্য বিভিন্নজনের কাছে গিয়েছি। সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে। বলেছে, ‘তোমাদের আশ্রয় দিলে আমাদের মেরে ফেলবে।’ প্রথমে চলে মন্দির ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। তারপর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। প্রথম হামলায় গ্রামের কয়েকটি বাড়ি রক্ষা পেয়েছিল। দ্বিতীয়বার গানপাউডার দিয়ে সেসব বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গ্রামের শিশু, নারী, পুরুষ সবাই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
ধর্ম ও ধার্মিক পৃথিবীকে শান্তি দিতে পারে। এর প্রমাণ সিলেটের শাহজালাল, শাহপরান, খুলনার খানজাহান আলী, চট্টগ্রামের বারো আউলিয়া, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, স্বামী বিবেকানন্দ, গৌতম বুদ্ধ, লোকনাথ ব্রহ্মচারী—তাঁরা সবাই ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করেছেন। মানুষকে শান্তি দিয়েছেন। অথচ এই ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। জ্বালাও-পোড়াও, লুটপাট করা হচ্ছে। সমাজে অশান্তি আনা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারে রক্তপাত, আহমদিয়াদের নির্যাতন, শিয়া-সুন্নিতে সংঘর্ষ মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করছে। ধর্মের অপব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংস করছে। তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে।

প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু: গত ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও না কোথাও সহিংসতা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ইস্যু সামনে আসছে। তখন এক একটা ঘটনা ঘটছে। এসব থেকে বোঝা যায়, সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আমি রামুর সন্তান। স্বাধীনতার এই চার দশকে নিজেকে সংখ্যালঘু মনে হয়নি। সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার মধ্যে আছি—সেটাও মনে হয়নি। আমাদের মন্দির থেকে ১০০ গজ দূরে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। মসজিদের ১০০ গজ দূরে কেন্দ্রীয় কালীমন্দির। এগুলোর আশপাশে আরও অনেক মসজিদ, মন্দির ও বিহার আছে। সকালবেলা মসজিদের আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে। সন্ধ্যায় বিহার থেকে প্রার্থনা ও মন্দির থেকে উপাসনার সুর ভেসে আসে। সবার একই খেলার মাঠ, একই স্কুল। আনন্দ-বিনোদনের একই মিলনস্থল। প্রার্থনার সময় যে যার মতো প্রার্থনা করছে।
যেকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে সবাই সেখানে যাই। সম্প্রীতি না থাকলে এগুলো কীভাবে করতে পেরেছি, জানি না। আমার জানতে ইচ্ছে করে, আমাদের কি সম্প্রীতি ছিল না? নাকি সম্প্রীতিতে খাদ ছিল? নাকি এখন সম্প্রীতি হ্রাস পেয়েছে? এ বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশের সম্প্রীতি একেবারে হালকা করে দেখার মতো কোনো বিষয় নয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সহিংসতা হলো। ৩০ তারিখে বাংলাদেশের সব মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াল। সেদিন মনে হয়েছে, আমরা একা নই। এত সহজে সম্প্রীতি শেষ হবে না। সম্প্রীতির জয় হোক।

বেঞ্জামিন ডি কস্তা: দেশে সহিংসতা হয়ে থাকে। সেটা কখনো ধর্মের নামে হয়। কখনো অন্যভাবে হয়। কিছু মানুষ হিন্দু-বৌদ্ধ বা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে। ধর্ম এসব কাজকে পাপ ও অন্যায় বলেছে। যারা এসব করছে, তারা ধার্মিক নয়। ১৯৯৮ সালের ২৮ এপ্রিল। লক্ষ্মীবাজারে আমাদের ওপর একটি নির্মম আক্রমণ হয়েছিল। আবার বানিয়ারচরে বোমার আঘাতে গির্জাসহ অনেক কিছু ধ্বংস হয়েছিল। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ২৬ জন নিহত হয়েছিল। সমাজে বিচিত্র প্রকৃতির অধর্ম হচ্ছে। ঘুষ-দুর্নীতির অধর্ম। গরিব মানুষ প্রায়ই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত—এটা একটা অধর্ম। টাকা দিয়ে রায় কেনা যায়, এগুলো অধর্ম। বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল আচরণ অধর্ম। সহিংসতার বর্তমান ক্ষতি তো আছেই। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো, যারা আক্রমণ করেছে তাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের। আক্রমণকারীদের পরিবারসহ আপনজনেরা কেউ এগুলো সমর্থন করেনি। হয়তো সারা জীবন তাদের অপরাধবোধ কাজ করবে। শিশুরা এগুলো দেখেছে। তাদের মনে প্রচণ্ড ক্ষত সৃষ্টি হবে। এটা ৫০ বছরে মুছে যাবে না। আমাদের নেতা-নেত্রীরা তর্কে জেতার জন্য বাজে কথা বলেন। এসব অন্যদের প্রভাবিত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শিক্ষার্থীরা ধর্ম শিখছে। কিন্তু ধর্মীয় মূল্যবোধটা শিখছে না। ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

কাজী নূরুল ইসলাম: ভয়াবহ সহিংসতা দেখেছি ১৯৭১ ও ১৯৬৪ সালে। এসব দেখে আমার একটি বিশ্বাস জন্মেছে। তা হলো, অজ্ঞতার জন্য মানুষ ধর্মান্ধ হচ্ছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিঘ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের ধর্মকে জানা ও উপলব্ধির চেষ্টা করেছি। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, এক বিরাটসংখ্যক মানুষ নিজ ধর্ম সম্পর্কে জানে না এবং ৯৯ শতাংশ মানুষ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানে না। সত্যিকার অর্থে মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও হিন্দু হতে পারলে বাংলাদেশে কেন, বিশ্বে কোনো সহিংসতা থাকত না। ইহুদি ধর্মের ১০টি নির্দেশের মধ্যে ষষ্ঠ নির্দেশ হচ্ছে, ‘কাউকে হত্যা কোরো না’। ইহুদিরা যদি তাদের ধর্মের এ বাণী মানত, তাহলে ফিলিস্তিনে মানুষ হত্যা করতে পারত না। হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ‘নমস্কার’ শব্দের অর্থ জানতে চাইলাম। তাদের ৯৯ শতাংশই অর্থ বলতে পারল না। এমনকি শিক্ষকেরাও বলতে পারল না। এ শব্দটা এত অর্থবহ যে হিন্দুধর্মের মূল বাণীই এর মধ্যে আছে। শব্দটার অর্থ হচ্ছে, ‘তোমার ভেতরে যে ভগবান আছে, তার প্রতি আমি মাথা অবনত করছি।’ এ সম্বোধন যে ধর্মে আছে, তারা তো অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি আঘাত হানতে পারে না।
ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে, নিরপরাধ একজন মানুষকে হত্যা করার অর্থ হলো দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করা। এবং একজন অসহায় মানুষকে রক্ষা করার অর্থ হলো, দুনিয়ার গোটা মানবজাতিকে রক্ষা করা। আমরা কি সেই অর্থ অনুভব করছি? যিশুখ্রিষ্টের আদর্শ যদি খ্রিষ্টানরা পালন করত, তাহলে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলতে পারত না। বার্ট্রান্ড রাসেল কোনো ধর্মের অনুসারী ছিলেন না। তিনি একবার বলেছিলেন, যদি কোনো ধর্ম সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু বলতে বলা হয়, আমি বলব বৌদ্ধধর্মের কথা। কারণ, এ ধর্ম স্বর্গ বা নরকের ভয়ে সৎ থাকতে বলে না, বিবেকের তাড়নায় সৎ থাকতে বলে। আজকে তাঁদের আদর্শ কোথায়? রাজনীতির সঙ্গে যখনই ধর্ম এসেছে, তখন রাজনীতি ও ধর্ম দুটোরই বারোটা বেজেছে। ধর্মকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখতে হবে।

এ কে এম ইয়াকুব হুসাইন: সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু-বৌদ্ধদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার নিন্দা করার ভাষা নেই। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভিত নড়ে গেছে। আমাদের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত এসেছে। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কমবেশি অন্য ধর্মের মানুষ জানে। কিন্তু অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে মনে হয় মানুষ কম জানে। ইসলাম ধর্মে অন্য ধর্মের প্রতি সামান্যতম আঘাতের কথা নেই। ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। তার পরও কেন সহিংসতা হচ্ছে? এটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা ছোটবেলায় হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে সবকিছু করেছি। কোনো বিষয়ে কোনো পার্থক্য করতে পারিনি। ইসলামকে একটা পূর্ণ জীবনব্যবস্থা বলা হয়েছে। ইসলামে বৈষম্য করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামে ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিক সময় তো নয়ই, এমনকি যুদ্ধের সময়ও বলা হয়েছে, কোনো উপাসনালয়ে আঘাত করা যাবে না। শিশুদের আঘাত করা যাবে না। বৃদ্ধ ও ধর্মীয় নেতাদের আঘাত করা যাবে না। এখন প্রতিটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য কমিটি গঠন করতে হবে। ধর্মীয় বাণী প্রচার করতে হবে।

আয়শা খানম: ১৯৭১ সালে ধর্মের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। মুুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। স্বাধীনতার এত বছর পরও একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকদের পুলিশি পাহারায় থাকতে হচ্ছে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ কারণে সহিংসতা হচ্ছে। মাদ্রাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় শিক্ষার পেছনে আমরা কত ব্যয় করেছি? সেখানে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে? আজকে তার ফলাফল কী পাচ্ছি? এর একটা মূল্যায়ন হওয়া দরকার। ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে কেবল কথা বললে হবে না। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বহুমাত্রিকভাবে তাদের পাশে থাকতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে নারী আন্দোলন ও রাষ্ট্র কখনো কখনো বিরোধী অবস্থানে থাকছে। আজকে হেফাজতের নাটকীয় উত্থান কীভাবে হলো? তাদের কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে? এখন তাদের ব্যবহারের জন্য প্রতিযোগিতা হচ্ছে। ১৯৭৬-এর পর থেকে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিকভাবে যে চর্চা হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনা। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর করের অর্থে জাতীয় সংসদ চলে। আর সেখানে আলোচনা হয়, কার জন্ম কোথায়। কার মা-বাবা কে। কে কোন দেশ থেকে এসেছে ইত্যাদি। বাংলাদেশে যতগুলো নীতি হয়েছে, সব কটিতে আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি। রাজনীতিতে নিজের কাজের ওপর আস্থা নেই। হুজুরের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে জিততে চাই। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সবাইকে একটা স্লোগান দিতে হবে, ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’।

পি কে বড়ুয়া: মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনা আমাদের সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। ঐক্যবদ্ধভাবে এখানে কাজ করতে হবে। প্রত্যেকে একটি শক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করি। পারিবারিক পরিবেশ ও শিক্ষার মধ্য দিয়ে এ শক্তির বিকাশ হয়। প্রত্যেক মানুষ শাস্তি ও মৃত্যুকে ভয় করে। দণ্ডের ভয় ও মৃত্যুর ভয় নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে। তাহলে কখনো অন্যকে নির্যাতন ও হত্যা করা সম্ভব হবে না। মনে করতে হবে, মেয়েটি আমার মা, বোন। তাহলে তার ওপর অত্যাচার করা সম্ভব হবে না। আমরা যে হাত দিয়ে প্রার্থনা করি, মানুষের সেবা করি, আবার সেই হাত দিয়ে কীভাবে ছুরি মারি? তাহলে কী হাতকে কলঙ্কিত করা হয় না। এই মূল্যবোধ আনতে হবে। অঙ্গুলি মালা নামের এক কুখ্যাত ডাকাত ছিল। সে গৌতম বুদ্ধের কাছে এল। তার জীবন বদলে গেল। ব্রিটিশরা এ দেশে বিরোধ, দলাদলি, হিংসা-বিদ্বেষ ও হত্যা-নির্যাতন এনেছে। ব্রিটিশের আগে এ অঞ্চলে শান্তি ছিল। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সমাজটাকে আবার সুন্দর করতে হবে।

সালমা খান: আমরা ধর্মপ্রাণ জাতি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সবাই একটা ধর্মকে ধারণ করি। আমার পাশে কোন ধর্মের কে আছে, এসব নিয়ে কখনো সমস্যা হয়নি। দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। তা সত্ত্বেও আমাদের একসঙ্গে বসবাসের ঐতিহ্য রয়েছে। এসব জেনে-বুঝেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সৎ জীবনযাপনের নাম ধর্ম। পরিবার, স্কুল, কলেজ—সব জায়গায় নৈতিকতা, মানবতা, শিষ্টাচারসহ বিভিন্ন বিষয়ের চর্চা করতে হবে। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সব ক্ষেত্রে অগণতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছে। মূলত এ করণেই সহিংসতা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রচণ্ড রকমের পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে। মানুষ প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারণে একটি মহল ধর্মীয় উন্মাদনার মাধ্যমে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, এসব কাজ বৈধতা পাচ্ছে। হেফাজতকে নিয়ে এত কিছু হলো। এখন দুই দলই বলছে, হেফাজত তাদের সঙ্গে আছে। এর অর্থ কী? নতুন দল সহিংসতা করছে। নারীর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। আবার রাজনীতি তাদের ব্যবহার করছে। এখন মুক্তিযুদ্ধেরও মালিকানা নেওয়া হয়েছে। রাজাকার, আলবদর ছাড়া আর কে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হতে পারে? ৪০ শতাংশ মানুষ কী বিপক্ষের শক্তি? ক্রমাগত এটা শুনে আসছি। কিন্তু সুশীল সমাজ থেকে এর কোনো প্রতিবাদ নেই। দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না, তখনই ধর্মীয় সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক দলগুলো এ সম্প্রীতি নষ্ট করছে। যেকোনো মূল্যে এটা ফিরিয়ে আনতে হবে।

শাহরিয়ার কবির: সরকারি দল, বিরোধী দল সবাই আল্লামা আহমদ শফীকে হুজুর বলছে। সবাই জানেন, একাত্তরে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী ছিলেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এক শর অধিক জঙ্গি সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। হেফাজতের বেশির ভাগ নেতা জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিত। জঙ্গি মৌলবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দুই হাজারেরও বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এই সহিংসতার ক্ষেত্র কে তৈরি করেছে? ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আল্লামা আহমদ শফী চারটি দৈনিক পত্রিকায় খোলা চিঠি লিখেছেন। এসব চিঠিতে সাম্প্রদায়িকতার চরম উসকানি দিয়েছেন। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের আগে থেকেই সহিংসতার ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছিল। রায়ের তিন দিন আগে থেকেই বিমল বাবুর এলাকায় ওয়াজ হয়েছে এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য হিন্দুদের রাখা হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। তার পরই সহিংসতা। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর নমনীয় মনোভাব লক্ষ করা গেছে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের অর্থ হচ্ছে বিশেষ সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দেওয়া। অন্যদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করা। ২০০১ সালের নির্যাতনে তিন লাখ লোক দেশ ছাড়ে। পরবর্তী সময়ে দুই লাখ ফেরত আসে। আইনি জটিলতার কারণে এক লাখ মানুষ ফিরতে পারছে না। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আমরা তিন হাজার নির্যাতনের ঘটনার কথা জানি। জামায়াতের কোনো নেতার লেখায় মানবতার কথা নেই। তারা ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদ, হত্যাসহ নানা ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি মিসর থেকে ফিরেছি, তারা বলেছে, ‘ব্রাদারহুড নামক মৌলবাদীদের ছাড় দিয়ে আমরা যে ভুল করেছি, তোমরা এ ভুল কোরো না।’

কাবেরী গায়েন: জাতীয় সংসদে কে কাকে বিয়ে করেছে, কার বংশপরিচয় কী—এসব অপ্রয়োজনীয় কথা বলা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য, কোনোভাবে কারও সঙ্গে অমুসলিমের সম্পর্ক খুঁজে বের করা এবং এ অজুহাতে সামাজিকভাবে তার রাজনৈতিক পরিচয় ধ্বংস করা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান ঘটে। প্রতিদিনের সামাজিক কাজকর্মে সংখ্যালঘুদের অপমান করা হয়। ধর্মে রাজনীতির ব্যবহার চরমে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অংশ ছিল ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ। বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার কারণে ২০১১ সালে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। চিলিরবন্দর, সাতক্ষীরা, হাটহাজারী, পাথরঘাটা, রাঙামাটি ও রামুর পর আমরা ভেবেছিলাম, এবার বোধ হয় থামবে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ের পর চার শর ওপর মন্দির ভাঙা হলো। তাহলে শেষ কোথায়? রামুতে মন্দির পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি মন্দির ভাঙা মানে কেবল একটি স্থাপনা ভাঙা নয়, একটি বিশ্বাস ভাঙা। একটি বোধকে শেষ করে দেওয়া। পুনর্নির্মাণ করলে এটি ফিরে আসবে কি না, জানি না। চার সিটি নির্বাচনের পর লালমোহনে আবার মন্দির ভাঙা হয়েছে। পাকিস্তানের আদালত বলেছেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করা যাবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবাই জানি, কীভাবে ধর্মের ব্যবহার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ধর্মীয় খেলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যেকোনো মূল্যে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ৪০০ মন্দির ভাঙা হলো। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোথাও প্রতিরোধ করেননি।

নিরঞ্জন অধিকারী: ১৯৭৫ সালের পর সংবিধানের চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছে। ৩০ বছর যাবৎ টেক্সট বুক বোর্ডের গ্রন্থ রচনার সঙ্গে জড়িত। একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সব ধর্মকে যুক্ত করে একটি ধর্মীয় বই হবে। পরে এ সিদ্ধান্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে অন্য ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জানছে না। ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের হেফাজতে ইসলাম তাদের কাজে ব্যবহার করতে পেরেছে। তাহলে কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে? শিক্ষার্থীরা তাদের ভালো-মন্দ বুঝতে পারছে না। কেবল গতানুগতিক শিক্ষায়ও হবে না। প্রত্যেককে মানবিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়। এটা ১৯৪৭ সালের মতো সাম্প্রদায়িকতা নয়; হিন্দু দেখলেই আক্রমণ। এখন সম্পত্তি দখলের চিন্তা থেকে আক্রমণের ষড়যন্ত্র হয়। কোনো কিছু করে তাড়িয়ে দিতে পারলেই সম্পত্তি দখল করতে পারব, অথবা কম দামে কিনতে পারব। এসব অর্থনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। কিছু মানুষ ধর্মীয় নিরপেক্ষতার কথা বলেন। কিন্তু তাঁরা ধর্মীয়বলয় থেকে বেরোতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে জনগণকে বোঝাতে হবে। ধর্ম এক বিষয়। রাজনীতি অন্য বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা যাবে না। এখন জামায়াত ও হেফাজত ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি করছে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য: মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্জন। ১৯৯০ সালে একটি পক্ষ বাবরি মসজিদ ভাঙার মিথ্যা প্রচার করে দাঙ্গা বাধিয়ে দেয়। সরকারের প্রশ্রয়ে এটা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা গ্রহণ। তখন সরকারি প্রশ্রয়ে গণধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি দখল, সংখ্যালঘুদের পঙ্গু করাসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটে। ২০১২-১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের জেগে ওঠা। একশ্রেণীর গণমাধ্যমে আস্তিক-নাস্তিক নিয়ে মিথ্যা প্রচার। মানবতাবিরোধী অপরাধে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড। এসব ঘটনায় আরও একবার সহিংসতার ভয়াল তাণ্ডব আমরা লক্ষ করলাম। গত ৫ মে হেফাজতের শেষ মহড়ায় বিএনপির সমর্থন। এখান থেকে যুদ্ধ ঘোষণা। বৈদ্যুতিক করাতের ব্যবহার, গানপাউডার, আর্জেস গ্রেনেড, স্বয়ংক্রিয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক, দোকানপাটসহ বিভিন্ন ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া—সবকিছু মিলিয়ে মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে ছিল। এসব ছিল তৃণমূল পর্যায়ে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির এক গভীর ষড়যন্ত্র। হাটহাজারীতে শত শত খুদে বার্তা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, হিন্দুরা মসজিদ ভেঙেছে, অথচ পরে জানা গেল, জসিম নামের একজনকে ৫০ টাকা দিয়ে মসজিদের একাংশ ভাঙানো হয়। এসব থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে—এক. রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা। দুই. সর্বস্তরে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তিন. রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ওপর সীমাহীন অনাস্থা-অবিশ্বাস দূর করা। চার. প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান। পাঁচ. সংখ্যালঘুদের ওপর অবিচার, বৈষম্য ও অধিকারহীনতা দূর করতে মাইনরিটি কমিশন গঠন করতে হবে। ছয়. সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং একজন পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব বণ্টন। সাত. শিক্ষাব্যবস্থাকে অভিন্ন অসাম্প্রদায়িক ধারায় নিয়ে আসা।

আনিসুজ্জামান: আলোচনায় এসেছে, সব ধর্মে উদারতার বাণী আছে। যারা অন্য ধর্মের মানুষকে আঘাত করে, তার ধার্মিক নয়। সংঘাতের কারণ ধর্ম নয়, কিছু মানুষের দুর্বৃত্তপনা। এসব কারণে বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভিত নড়ে গেছে। কয়েক দশক ধরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। কেউ কেউ বলেছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এসব হয়েছে। তদন্ত ব্যর্থ হয়েছে। নাগরিক প্রতিরোধও খুব দুর্বল। আমি চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা হলো, প্রশাসনিক শক্তি কম। ৩০০ লোক মিছিল নিয়ে মন্দির ভাঙছে। সেখানে থানায় পুলিশ হয়তো মাত্র আটজন। ৩০০ মানুষকে আটজন প্রতিরোধ করতে পারে না। আবার এটাও সত্য, অনেক জায়গায় প্রশাসনের উদাসীনতা আছে। কোথাও কোথাও উসকানি আছে। কেউ বলছেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাতে হবে।
কেউ বলছেন, মানবিকতা শেখাতে হবে। শেষে বলা হয়েছে, বহুধর্ম শেখাতে হবে। স্কুলে ধর্মীয় রীতিনীতির শিক্ষা দেওয়া হয়। নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়া হয় না। আমাদের নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। সেখানে আমরা নানা ধর্মের নৈতিক শিক্ষার কথা বলতে পারি। প্রধানত, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ ঘটানো ও ধর্মীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে নাগরিক উদ্যোগ জোরদার করা দরকার। ২০০১ সালে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। এবার বিগ্রহকে আঘাত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ভয় পাইয়ে দেওয়া, যাতে তারা দেশ ছেড়ে চলে যায়। ভোট পাওয়ার প্রলোভনে সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস বন্ধ না করলে এ সহিংসতা চলতে থাকবে।

আব্দুল কাইয়ুম: গত কয়েক মাসে হঠাৎ করেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন ছিল। আজকের আলোচনা ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রশাসন, নাগরিক সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এগিয়ে নেওয়া। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আপনারা সময় দিয়েছেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। এ জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.