চট্টগ্রাম বন্দর- অব্যবস্থাপনা দূর করুন

চট্টগ্রাম বন্দরকে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন বললে অত্যুক্তি হবে না। এ বন্দরের সুবিধা ব্যবহার করে আমদানি-রফতানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালিত হয়। সম্প্রতি বন্দরের সুবিধাদির আধুনিকায়ন হয়েছে।
কাস্টম হাউসের অটোমেশন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গণমাধ্যমের দৃষ্টিতেও তা ধরা পড়ে। ২০১২ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সমকালের এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল :'চট্টগ্রাম বন্দরে মন্দের চেয়ে ভালো কাজ বেশি'। এতে বলা হয়, 'দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে এখন প্রতিটি জাহাজের গড় অবস্থানের সময় দু'দিনেরও কম। ৬ বছর আগে যা ছিল ১০ দিন, তিন বছর আগে ৫ দিন, এমনকি জরুরি অবস্থার সময়েও ছিল আড়াই থেকে তিন দিন। আগে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের ২৪টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতো, সই নিতে হতো ১৬ স্থানে। শ্রমিক অসন্তোষ কমার কারণেও বন্দরের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে।' এ ধারা অব্যাহত থাকবে, এটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এ প্রতিবেদন প্রকাশের দেড় বছর পর গতকাল (৫ জুলাই, ২০১৩) সমকালের আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম একেবারেই বিপরীত :'চট্টগ্রাম বন্দরের অব্যবস্থাপনায় ব্যবসায়ীরা নাখোশ'। এতে বলা হয়, সিঙ্গাপুর থেকে মালবাহী একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁৗছে ৭ দিনে। কিন্তু সেই জাহাজ থেকে মালপত্র খালাসে এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। প্রতিবেদনে 'ওসান অ্যারো' নামে একটি জাহাজের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়, এটি বন্দরে নোঙর ফেলার পর মাল খালাস শুরু হয় ১৩ দিন পর। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে সমস্যায় পড়তে হয় পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের। বিদেশ থেকে অর্ডার গ্রহণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক তৈরি করে ক্রেতার কাছে পেঁৗছাতে হয়। পণ্য খালাসে বিলম্ব ঘটেছে কিংবা বন্দর থেকে কারখানায় যাতায়াতের পথে হরতাল-অবরোধের কারণে ট্রাক নিশ্চল হয়েছিল_ এ ধরনের যুক্তি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাদের স্পষ্ট কথা_ সময়মতো পণ্য ডেলিভারি, অন্যথায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সরবরাহকারীকে। এমনকি ভবিষ্যতে অর্ডার না আসার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের কাছ থেকে। তারা কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নত করতে বলছে এবং একই সঙ্গে দাবি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। কিন্তু উদ্যোক্তাদের শঙ্কা, এর ফলে বাংলাদেশ আর ক্রেতাদের কাছে তেমন আকর্ষণীয় থাকবে না। তারা মনে করবে যে, বাংলাদেশে ব্যয় বেশি পড়ে। এ কারণে অন্যান্য দেশের প্রতি তারা ঝুঁকে পড়বে। এ অবস্থায় উৎপাদক-উদ্যোক্তাদের জন্য একটিই বিকল্প থাকে_ অন্যান্য ব্যয় কমিয়ে আনা। যেমন, বন্দরে মালপত্র খালাসের সময় কমিয়ে ফেলা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করে উৎপাদন বিঘি্নত হতে না দেওয়া, বন্দরে যাতায়াত পথ বাধাহীন রাখা প্রভৃতি। এ কাজে সরকারের ভূমিকা মুখ্য। রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও সহযোগিতা অপরিহার্য। বন্দরের অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এতে কেবল ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন না। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে সার্বিক অর্থনীতিতেও। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বিষয়টির প্রতি মনোযোগ দেবে এবং অর্থনীতির লাইফলাইনটিকে সদা সচল রাখায় নিজেদের যথাযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.