গ্রামীণ ব্যাংককে লালন করা প্রয়োজন by ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে-বিদেশে আবারও আলোচনার শীর্ষে। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ব্যক্তি ইউনূসকে তাঁর অসাধারণ সৃষ্টি গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে আবারও।
ড. ইউনূস সম্পর্কে আলোচনা কেন জানি আবেগপ্রসূত আচ্ছন্নতায় ঘিরে থাকে; ফলে উত্তাপ যতই বেশি সৃষ্টি হয়, আলোকরশ্মি ততই কম দেখা দেয়।
অধ্যাপক ইউনূস যখন ব্যাংকসেবাকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার মহতী ও বিপুল সম্ভাবনাময় নিরীক্ষাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জোবরা গ্রাম থেকে বৃহত্তর পরিবেশে টাঙ্গাইলে স্থানান্তর করেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক (একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান) থেকে সব বাধা তুচ্ছ করে অর্থ, জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়া হয়। টাঙ্গাইল প্রকল্প এলাকায় ক্ষুদ্রঋণের সফল নিরীক্ষার পর জাতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সরকার ছাড়া কাউকে তিনি তখন পাশে পাননি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং উইংয়ে প্রণীত হলো গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (Ordinance No. XLVI of 1983)। সৃষ্টি করা হলো একটি অনন্য বিশেষায়িত সরকার পৃষ্ঠপোষিত গ্রামীণ ব্যাংক, যার মূলধনের ৬০ শতাংশ দিল সরকার, আর বাকি ৪০ শতাংশের অর্ধেক সংরক্ষণ করা হলো গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহণকারী শেয়ারহোল্ডারদের জন্য, যাঁদের ৯০ শতাংশের বেশি গ্রামীণ মহিলা। স্মর্তব্য যে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ প্রণয়ন, নিরীক্ষা ও অনুমোদনকালে অর্থমন্ত্রী ছিলেন এ এম এ মুহিত। এম সাঈদুজ্জামান ছিলেন পর্যায়ক্রমে অর্থসচিব, মুখ্য সচিব অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অর্থমন্ত্রী (জনাব মুহিতের পদত্যাগের পর)। নিবন্ধকার ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট যুগ্ম সচিব। গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি খন্দকার মোজাম্মেল হক গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন একমাত্র মহাব্যবস্থাপক হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ প্রণয়ন, নিরীক্ষা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং একে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে ছিলেন অর্থ বিভাগ ও গ্রামীণ ব্যাংকের মধ্যকার যোগসূত্র। অবশ্যই তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের স্বপ্নদ্রষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কাজ করছিলেন।
এর পরের ঘটনাপ্রবাহে বিপদে-সম্পদে-প্রয়োজনে সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে থাকে বিনা দ্বিধায়, বিনা প্রশ্নে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও গ্রামীণ ব্যাংককে আমানত নিতে শুধু ব্যতিক্রমী অনুমতিই দেওয়া হয়নি, গ্রামীণ ব্যাংকের ১০ হাজার কোটি টাকা আমানতের সুদ আয়ে আয়কর অব্যাহতিও দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যা এবং ১৯৯৮ সালের দীর্ঘতম স্থায়ী দেশের বিশাল এলাকাব্যাপী বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গ্রামীণ ব্যাংককে ৪০০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক বন্ড ইস্যুতে সরকারি নিশ্চয়তাপত্র দিয়ে একে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়া হয়। গ্রামীণ ব্যাংক যদি একটি এনজিও বা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতো, তাহলে নিশ্চয়ই সরকার ওপরে বর্ণিত সাহায্য-সহায়তা, সমর্থন ছাড়াও এর মূলধনে ৬০ শতাংশ প্রদান করত না এবং আমানতের সুদ আয়ে কর অব্যাহতি দিত না। সরকার অব্যাহতভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগে অনুমোদন দিয়ে এসেছে। উল্লেখ্য, গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ১৪ নম্বর ধারা অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবকে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয় ১৯৮৩ সালে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তিনি আইন অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংকের মুখ্য নির্বাহী ছিলেন- অর্থাৎ এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ৩৫ নম্বর ধারা অনুসারে প্রণীত বিধিমালার অধীনে অন্য কর্মকর্তার মতো অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও ৬০ বছরপূর্তিতে অবসরে যাওয়ার কথা।
১৯৯৯ সালের শেষাশেষি কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকে পরিদর্শন সম্পন্ন করে। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ধরা পড়ে যে ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলেও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিধি ভঙ্গ করে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে আসীন রয়েছিলেন। তাঁকে ওই পদ থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনানুগ পরামর্শ অগ্রাহ্য করে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিধান পরিবর্তন করে এবং অধ্যাপক ইউনূসকে আজীবন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়। অধ্যাপক ইউনূসের করা মামলায় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় আপিল বিভাগ বিধিমালার পরিবর্তন রহিত করে এবং ৬০ বছরে অবসরের বিধান বহাল রাখে এবং অধ্যাপক ইউনূসের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে। এর পর থেকে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে, যা দেশের জন্য ক্ষতি বয়ে আনছে অব্যাহতভাবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবর্তমানেও গ্রামীণ ব্যাংক ভালো চলছে মর্মে উভয় মহলের মতামতে একটি অভিন্নতা লক্ষ করা যাচ্ছে। গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের পরিমাণ গত কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কর্মকর্তার সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের স্থিতিশীল কর্মকাণ্ডে আস্থা বেড়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ের প্রশ্ন এখনো থেকেই গেছে। ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে শেখ হাসিনা সরকার মুখ্যত গ্রামীণ ব্যাংকের পল্লী এলাকার ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডার মহিলাদের ভাগ্যোন্নয়নের স্বার্থে গ্রামীণ ব্যাংকের নামে গ্রামীণফোনের (মোবাইল) লাইসেন্স প্রদানের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য ছিল যে গ্রামীণফোনের লাভ থেকে ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ পাবেন এবং আর্থসামাজিক সোপান বেয়ে ওপরে উঠবেন। গ্রামীণ ব্যাংককে ওই লাইসেন্স প্রদানের অন্য দুটো উদ্দেশ্য ছিল : প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দক্ষতা তথা হ্রাসকৃত দামে মোবাইল গ্রাহকদের সেবাদান এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ তথা ১৯৯১-৯৫ সময়ের একজন মন্ত্রীর একচেটিয়া মোবাইল ব্যবসায় ইকোনমিক রেন্ট অর্জন বন্ধ করা। এটি অবশ্যই একটি রহস্য, কেন ড. ইউনূস গ্রামীণফোনের অংশীদার টেলিনরকে অস্বাভাবিক উচ্চ আনুপাতিক ৬২ শতাংশ শেয়ার প্রদান করলেন? ফলে মূলত টাকায় অর্জিত গ্রামীণফোনের মুনাফার (বার্ষিক তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা বলে জনশ্রুতি রয়েছে) ৬২ শতাংশকে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে টেলিনরের লভ্যাংশ বিদেশে পাঠানো যায়। একটি হিসাব মতে, গত ১৬ বছরে গ্রামীণফোনের অংশে লভ্যাংশ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তার অর্ধেকও যদি শেখ হাসিনা সরকারের কল্যাণপ্রসূ ধারণা অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংকের পাঁচ লাখ ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারের মধ্যে বিতরণ করা হতো, তাহলে তাঁদের প্রত্যেকে প্রায় তিন লাখ টাকা করে পেয়ে টেকসই মানব উন্নয়নের সুবিধাপ্রাপ্ত হতেন। অনেকের মতো নিবন্ধকারেরও প্রশ্ন :
ক) লভ্যাংশের অনুমিত হিসাব সত্য কি না?
খ) গ্রামীণফোনের পরিচালনালব্ধ লাভের অংশ কোথায়, কিভাবে এবং কাকে দেওয়া হয়েছে?
গ) গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা কত এবং তাঁরা ওই ২৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লভ্যাংশের কতটুকু পেয়েছেন?
গ্রামীণ ব্যাংক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান, তাই স্বচ্ছতার খাতিরে এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার অধিকার জনসাধারণের রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামো সম্পর্কে একটি অহেতুক প্রস্তাব নিয়ে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে সংগত কারণে। এর কাঠামো পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই; কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে, বর্তমান বাস্তবতায় কিছু আইনি সংশোধনের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাই মুক্ত মনে নিম্নোক্ত প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করে দেখতে পারেন :
গ্রামীণ ব্যাংকের কাঠামোতে কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডিং মূলধন পুনর্বিন্যাস করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জন্য ৪৯ শতাংশ এবং গ্রামীণ ব্যাংক বরাবর ৫১ শতাংশ বরাদ্দ করা হবে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের জন্য।
একটি পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে, যার মাধ্যমে প্রতি তিন বছরে একবার গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডাররা পাঁচটি অঞ্চল থেকে একজন করে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে তিন বছরের জন্য মোট পাঁচজন প্রতিনিধি নির্বাচন করে পাঠাবেন। গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রুপ গতিময়তার সুবাদে গুচ্ছ গুচ্ছ কার্যকারণে এ নির্বাচন কঠিন হলেও দুরূহ হবে না।
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে মোট ১১ জন সদস্য থাকবেন : গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের পাঁচজন প্রতিনিধি; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পাঁচজন প্রতিনিধি এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যাঁর নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, তবে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে।
পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে বর্ণিত আইনি সংশোধনের তারিখ থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মান ও অবদানের কথা বিবেচনায় রেখে আগামী দুই বছরের জন্য একটি সেতুবন্ধ ব্যবস্থাপনার বিধান করা হবে।
ক. বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের যে ৯ জন প্রতিনিধি রয়েছেন, তাঁরা ওই অন্তর্বর্তীকালীন দুই বছরের পরিচালনা পর্ষদের জন্য পাঁচজন প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যার মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
খ. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে এর পাঁচজন প্রতিনিধি মনোনীত করবে।
গ. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আগামী দুই বছরের জন্য ৬০ বছরের অবসর গ্রহণের বিধান শিথিল করে ড. খন্দকার মোজাম্মেল হককে অথবা অন্য কোনো উপযুক্তজনকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেবে।
ঘ. গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ওই ১১ জন সদস্য আগামী দুই বছরের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং এর পরবর্তী সংশোধনের বিধানাবলির পুনর্নিরীক্ষণ করে গ্রামীণ ব্যাংকের সব সহযোগী (সাবসিডিয়ারি) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অভিভাবক-পৃষ্ঠপোষক-অঙ্গসংগঠনমূলক যোগসূত্র স্থাপন করা হবে, যার মাধ্যমে প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের অর্জিত ব্যয় বাদে আয় তথা মুনাফার বিতরণ হবে গ্রামীণ ব্যাংক ২০ শতাংশ, সহযোগী অঙ্গসংগঠন ৪০ শতাংশ ও গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ।
ক. গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাভাবিক ও নিয়মিত ব্যবস্থাপনা প্রথা চালু হবে দুই বছরের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনাকালের পর। তখন গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে (ক) গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডাররা তিন বছরের জন্য পাঁচজন প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। (খ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পাঁচজন প্রতিনিধি মনোনীত করবে। (গ) গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেবে (পাঁচ বছরের জন্য), যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যও হবেন।
খ. এই ১১ জন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে (ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদে) তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করবেন। ৯) গ্রামীণ ব্যাংককে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির কর্তৃত্বাধীনে এবং ব্যাংকিং কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেশনে আসতে হবে।
১০) গ্রামীণফোনের অর্জিত মুনাফা তথা লভ্যাংশ ও এর বিতরণের বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে এবং প্রয়োজনে পুনঃ বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিষয়টি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার সব বিষয় সম্মানজনকভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে বলে গণ্য করা হবে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর

No comments

Powered by Blogger.