জিএসপি-বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপীয় কমিশন

শ্রমমান উন্নয়নের মাধ্যমে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) সুরক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশকে সাহায্য করছে।
গত বুধবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের উত্তরে ইইউ বাণিজ্য কমিশনার ক্যারল ডি গুচ এ কথা জানান। গতকাল পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
এদিকে ক্যারল ডি গুচ আগামী সোমবার জেনেভায় একটি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ও শ্রমমান উন্নয়নে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও আইএলওর ভাবনাগুলো স্থান পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে কমিশনার এমন মন্তব্য করলেন।
সাভারে রানা প্লাজা ধসের পটভূমিতে গত ৭ মে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য মার্ক টারাবেলা বাংলাদেশের শ্রমমান ইস্যু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন। গত বুধবার ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন কমিশনার ক্যারল ডি গুচ।
টারাবেলার প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইইউর বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, শ্রম মান উন্নয়নে ইইউ বাণিজ্য কমিশন কী প্রস্তাব দিচ্ছে এবং ইউরোপীয় নয়- এমন দেশগুলোর পণ্য আমদানিকারক ইউরোপীয় কম্পানিগুলোকে পণ্যের উৎস জানাতে চাপ দেওয়ার ব্যাপারে বাণিজ্য কমিশনের অনীহা কেন? উত্তরে গুচ বলেন, বাংলাদেশে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলোর পর কমিশন তার সম্মানিত সদস্যদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
ক্যারল ডি গুচ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে এ দেশের পণ্যকে ইইউর অগ্রাধিকার সুবিধা দেওয়ার ভূমিকা রয়েছে। কমিশন দেশটির শ্রমমান উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা সুরক্ষায় কাজ করছে। বাণিজ্য কমিশনার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানোর কাজেও সম্পৃক্ত রয়েছেন।
গত ২৮ মে এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা যে আহ্বান জানিয়েছেন তাতে গত ২৩ মে ইইউ পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
ক্যারল ডি গুচ আরো বলেন, শ্রমমান ও নিরাপত্তা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) যে চেষ্টা চালাচ্ছে, ইইউ বাণিজ্য কমিশন তাকে স্বাগত জানায়। গত ৪ মে আইএলওর সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় অংশীদারদের (বাংলাদেশ সরকার, মালিক, শ্রমিক) যৌথ বিবৃতির মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলোর সূচনা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ইইউ বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় আইন পরিবর্তন, বাস্তবমুখী পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে মৌলিক শ্রমমান বাস্তবায়নকে উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে ইইউ বাংলাদেশকে সাহায্য করছে।
ইইউ বাণিজ্য কমিশনার বলেন, সব কম্পানির উচিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা নীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলকে পরিচালনা করা। বড় অনেক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান ও খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড (প্রধানত ইউরোপীয়) পরিদর্শন ও প্রশিক্ষণ উদ্যোগের অঙ্গীকার করে চুক্তি করেছেন। এটি উৎসাহব্যঞ্জক বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গুচ আরো বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কমিশন ভোক্তার পণ্যের নিরাপত্তাবিষয়ক একটি আইনি প্রস্তাব অনুমোদন করে। এতে খাদ্য নয়- এমন পণ্যের ক্ষেত্রে তার উৎস জানানোর বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি ইইউতে উৎপাদিত ও বাইরে থেকে আমদানি করা- উভয় শ্রেণীর পণ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা বাতিল করার দুই দিন পর ঢাকায় ইইউ কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইইউ বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করবে না। একই সঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোর এই জোট শ্রমমান উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে।
এদিকে ইইউ বাণিজ্য কমিশনার ক্যারল ডি গুচ আগামী সোমবার জেনেভায় একটি বৈঠকের ডাক দিয়েছেন। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প পরিস্থিতি ও শ্রমমানবিষয়ক ওই বৈঠকে এ দেশের সরকার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি অংশ নেবে। এ ছাড়া পোশাক রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন, ক্রেতা ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নেবেন। জেনেভায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশবিষয়ক বৈঠকে শ্রমিকদের অধিকার, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং দায়িত্বশীল ব্যবসা গুরুত্ব পাবে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ইইউ বাণিজ্য কমিশনার এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারিও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

No comments

Powered by Blogger.