নতুন বীমা কম্পানি-রাজনৈতিক বিবেচনা কাম্য নয়

আরো ১১টি বীমা কম্পানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আবেদন আহ্বানের আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নতুন বীমা কম্পানির প্রয়োজন নেই বলে জানানো হলেও শেষ সময়ে এসে সরকার কেন এই সিদ্ধান্ত নিল, তা প্রশ্ন আকারে দেখা দিয়েছে।
দেশের অর্থনীতির আকার ও বাণিজ্যসুবিধা সীমিত হওয়ার কারণে এমনিতেই পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে; সেখানে নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্ম হওয়া তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ব্যবসায় প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক হওয়ার পরও অস্বাভাবিক অবস্থা কাম্য নয়। আর এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরির পেছনে বাণিজ্যের চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনাই কাজ করছে বলে এরই মধ্যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী কয়েকজনের নাম থাকায় স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগটির কিছুটা হলেও সত্যতা পাওয়া যায়।
বীমা কম্পানির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ অনেক আগেই সরকারকে তাদের মতামত জানিয়েছে। তারাও বর্তমান বীমা কম্পানিগুলোর মতোই মনে করেছে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থকাঠামোর মধ্যে নতুন কোনো বীমা কম্পানি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। তার পরও সরকার তাদের দলীয় চিন্তাকে উর্ধ্বে স্থান দিয়েছে বলে ধারণা করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। বীমা ও ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সরকারগুলো দলীয় স্বার্থকে প্রায়শই ব্যবহার করে। আর আলোচিত বীমা কম্পানিগুলো এমন সময় অনুমোদন পেল, যখন সরকার তার মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে। এতে বোঝা যায়, তাড়াহুড়ো করে দলীয় লোকদের সুবিধা প্রদান করাই সরকারের উদ্দেশ্য। যে অভিযোগ কিছুদিন আগে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়াকে কেন্দ্র করেও উত্থাপিত হয়েছিল।
কোনো ব্যবসায়ী রাজনীতি করতে পারবেন না কিংবা কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ব্যবসা করতে পারবেন না- এমন কোনো বিধান নেই। কিন্তু সব কিছুর পেছনেই স্বচ্ছতা ও সততা থাকার প্রয়োজন আছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের চিফ হুইপ, মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য কিংবা নিকটজন যখন সহযোগিতা পান, তখন সংগত কারণেই প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। প্রথম দফায় ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও তিন দফা সময় বাড়ানোর পেছনে দলীয় সুবিধা লাভের বিষয় কাজ করেছে বলে জানা গেছে।
দেশের অর্থনীতির স্বার্থে অর্থনীতিকেই প্রাধান্য দিতে হবে, সেখানে রাজনীতি যদি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে, তাহলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে- এটাই স্বাভাবিক। সরকার এ বিষয়টি বিবেচনায় আনলেই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.