রাজধানীতে গাড়ি প্রতারক পরিবারের সন্ধান বাবা ছেলে মেয়ে চক্রের সদস্য by গাফফার খান চৌধুরী

রেন্ট-এ কারের গাড়ি ভাড়া নিয়ে নিজেদের নামে কাগজপত্র বানিয়ে ওই গাড়ি বিক্রি করে দেয়া এক প্রতারক পরিবারের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। প্রতারণায় জড়িত পরিবারটি প্রায় ১০ বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসছিল।
প্রতারক চক্রের অন্যতম সদস্য মেয়ে ইমা গ্রেফতার হওয়ার পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, বাবা তার ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রতারক চক্রটি গড়ে তুলেছে। ধৃত ইমাকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা রিজওয়ানা খালেদ ইমা (৩০)। শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ইমার বাড়ি জামালপুরে। তার পিতার নাম আলমগীর খালেদ। আর ভাই তানভীর খালেদ। ইমা ঢাকার একটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে। এরপর আর লেখাপড়া হয়নি। ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে। ফ্যাশন জগতে পা রেখেই জড়িয়ে পড়ে অপরাধের সঙ্গে। বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যাটাস বজায় রাখতে গিয়ে ইমা ভাড়া করা গাড়িতে চলাফেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে রেন্টে কার প্রতারকদের মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ে প্রতারণায়। এ কাজে তাকে সহায়তা করে ভাই তানভীর ও বাবা আলমগীর। ইমা বিভিন্ন রেন্ট-এ কার থেকে গাড়ি ভাড়া করে এ কাজ করে বলে জানা গেছে।
ডিবি সূত্র জানায় ইমা ৪-৫ মাস গাড়ির নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করত। এই ফাঁকে বিআরটিএ-এর একশ্রেণীর দালাল ও অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গাড়ির কাগজপত্র তৈরি করত। এরপর গাড়িটি বিক্রি করে দিত। এ কাজে তাকে সহায়তা করত তার ভাই ও বাবা। ইমা নিজেকে প্রায় সময়ই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্মীয় পরিচয় দিত। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে।
এমন কোন প্রতারণা নেই যা ইমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নেই। এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে অন্তত ১০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ভাড়া করে তা নিয়ে গাড়ি বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়া, বদলি, প্রমোশনসহ সব ধরনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে পরিবারটির বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি রাজধানীর জোয়ার সাহারা এলাকার আমির এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে সিআরভি জিপ (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-০২৮৫) মাসিক ৭৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেয় রিজওয়ানা খালেদা ইমা ও তার ভাই তানভীর খালেদ। চুক্তি অনুযায়ী কয়েক মাস ভাড়াও পরিশোধ করে তারা। এই ফাঁকে গাড়ির কাগজপত্র বানায়। তারপর ‘ভুয়া’ কাগজপত্র দেখিয়ে নাট্য নির্মাতা দীপংকর সেনগুপ্তের কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি মামলা রয়েছে।
এছাড়া রিজওয়ানা ও তার ভাই খালেদ একটি আরএভি জীপ গাড়ি ৯ লাখ টাকায় বিক্রির চুক্তি করেছে। বায়না হিসেবে তারা ক্রেতার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাও নিয়েছে। পরবর্তীতে ইমা গাড়ির মূল কাগজপত্র দেয়ার নামে ক্রেতাকে ঘোরাতে থাকে। এভাবে দুই মাস গড়িমসি করে। এ ঘটনায় গত ৩ জুন রামপুরা থানায় একটি মামলা করে ক্রেতা। ইমা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিচয় দেয়। আবার একেক সময় একেক ঠিকানা ব্যবহার করে থাকে। কারও কাছে বনানী, কাউকে পিংক সিটি আবার পুরনো ডিওএইচএসে বসবাস করার কথা বলে বেড়ায়। পিতা আলমগীর খালেদ, ভাই তানভীর খালেদকে নিয়ে ইমাদের প্রতারক পরিবারটি দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। তারা অন্তত ৭টি গাড়ি এভাবেই রেন্ট-এ কার থেকে ভাড়া করে নিজেরা মালিক সেজে বিক্রি করে দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ইমার পিতা ও ভাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.