তথ্যমন্ত্রীর বাসার সামনে বোমা ফাটাল কারা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পুলিশ এবারও ব্যর্থ by শংকর কুমার দে

বার বারই হাতবোমা বা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন, সরকারদলীয় নেতাদের বাসভবনসহ সব স্পর্শকাতর স্থান বেছে নেয়া হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে বার বারই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এবার টাইব্যুনালের তিন নেতার আদালত অবমাননা শাস্তির প্রতিবাদে ডাকা জামায়াতÑশিবিরের হরতালের আগের দিন রবিবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপির দারুসসালাম রোডের বাসভবনের সামনে তিনটি শক্তিশালী ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর পরও দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পারছে না পুলিশ ও গোয়েন্দারা। দুর্বৃত্তরা শনাক্ত না হওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছেই। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হওয়ার পর দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ ও শিরোনাম হওয়ার জন্য কোথাও ককটেল নিক্ষেপ বা কোথাও হাতবোমা রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। বার বারই এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে জামায়াতÑশিবির। জামায়াতÑশিবির তাদের ভাড়াটিয়া দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে স্পর্শকাতর স্থান ও ব্যক্তিদের টার্গেট করে বোমা বা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এবার মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক আদালত অবমাননার দায়ে তিন নেতার সাজা দেয়ার প্রতিবাদে হরতাল ডেকেছে জামায়াতÑশিবির। রবিবার হরতাল ডাক দেয়ার পর পরই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল ইক ইনুর বাসভবনে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। হরতালের আগের দিন তথ্যমন্ত্রীর বাসভবনে কারা ককটেল ফাটাতে পারে তা স্পষ্ট।
এর আগে হরতালের আগের দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির ইস্কাটনের বাসভবনের ভেতরে হাতবোমা ছোড়া হয়েছে। দীপু মনির বাসভবনের ভেতরে পর পর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে কারা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা পুলিশ উদ্ঘাটন করতে পারেনি। ককটেল বিস্ফোরণের সময় দীপু মনি বাসায় ছিলেন না। তিনি তখন বেলজিয়ামে। কালো রঙের একটি মোটরসাইকেলে করে দু’জন আরোহী বাসার সামনে এসে সে সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপ মনির ইস্কাটনের বাসভবনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর মাসাধিককাল আগে ককটেল ছোড়া হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুল-উল আলম হানিফের গুলশানের ১ নম্বরের ১১৩ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসভবনে। বাসভবন লক্ষ্য করে সে সময় কে বা কারা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে।
ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। তবে ওই হাতবোমাগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। কারা বোমা ছুড়েছিল এ বিষয়ে গুলশান থানা পুলিশ জানায়, তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলযোগে এসে বোমা তিনটি মেরে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে থানা জানায়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। এখনও পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিশ্চিত করতে পারেনি যে এই ঘটনায় কারা জড়িত। জড়িতদের গ্রেফতার করতে না পারলেও সরকারী দলের নেতাদের সন্দেহ জামায়াতÑশিবিরের দিকেই।
ককটেল নিক্ষেপের ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছিলেন, হামলা ও ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই এ ধরনের ককটেল নিক্ষেপ করা হতে পারে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সে সময় বলেছিল, জামায়াত-বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ এবং অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা নানা অজুহাতে হরতাল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা করছে। হিন্দুদের মন্দিরে হামলা করে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করছে। ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা তারই অংশ।
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, মন্ত্রী ও সরকারীদলীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসভবন লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। কিন্তু কে বা কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভবপর হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.