সংঘাত নয়, সম্প্রীতির হাত সম্প্রসারিত করুন পার্বত্য চট্টগ্রামে অযৌক্তিক হরতাল

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ সংশোধনের। দেরিতে হলেও সরকার সেই সংশোধনী অনুমোদন করে বাস্তুত্যাগী পাহাড়িদের সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার পথ সুগম করেছে।
এর সঙ্গে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত বাঙালিদের আইনগত অধিকার বা স্বার্থহানির আশঙ্কা না থাকা সত্ত্বেও ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’ ধারণা নিয়ে কয়েকটি সংগঠন রোববার থেকে তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টা হরতাল পালন করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি আইনটি সংশোধন করা হয়েছে মূলত পাহাড়িদের স্বার্থ রক্ষা এবং বাস্তুত্যাগীরা যাতে ফের নিজেদের ঘরবাড়িতে ফিরে যেতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে; সেখানে বসবাসরত বাঙালিদের বিতাড়িত করতে নয়। গত ১৫ বছরে বাঙালিরা এমন একটি উদাহরণ দিতে পারবে না, যেখানে কোনো বাঙালিকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে; এমনকি পাহাড়িদের জমি বা সম্পত্তি কিনতেও তাদের বাধা নেই।
তার পরও ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধন নিয়ে এ ধরনের জবরদস্তিমূলক কর্মসূচি পরিস্থিতিকে যেমন উত্তপ্ত করবে, তেমনি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বাড়াবে। কোনো অঘটন ঘটলে তার দায়ও হরতাল আহ্বানকারী সংগঠনগুলোকেই বহন করতে হবে। সম-অধিকারের দাবিদারদের বুঝতে হবে, পাহাড়ে পৈতৃক বাস্তুভিটা ও সম্পত্তি হারিয়েছে আদিবাসীরা, বাঙালিরা নয়। যেসব বাড়িঘর ও সম্পত্তি থেকে পাহাড়িরা বিতাড়িত হয়েছে, তাদের কাছে তা ফিরিয়ে দিলে বাঙালিরা আপত্তি করবে কেন? ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে তাদের এই আন্দোলন কেবল অযৌক্তিক নয়, পার্বত্য চুক্তিরও পরিপন্থী।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তিতেও আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের কথা আছে। সে ক্ষেত্রে আইনটি সংশোধনের পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের পুনর্বাসনের কাজ শেষ করা জরুরি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী ও বাঙালিরা শান্তি-সম্প্রীতিতে বসবাস করুক। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে পীড়কের ভূমিকায় না থেকে সবার নাগরিক ও মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.