চরাচর-সংবিধান দিবস by সুস্মিতা সাহা

মুক্তির আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। সাতচলি্লশের দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতায় বাঙালি সে মুক্তির স্বাদ খুঁজেছিল। কিন্তু মুক্তির বদলে পেল চরম পরাধীনতা। ভাষা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ঘটল বাঙালিকে সমমর্যাদা দেওয়ার অস্বীকৃতি।


বাঙালির পরিচয়-সংকট ঘুচল না। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল ঐতিহাসিক বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও সত্তরের নির্বাচন- এসব পর্যায়ের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নসৌধ। তারপর একাত্তরে একদিকে আলোচনার প্রহসন, অন্যদিকে ২৫ মার্চের কালরাত্রির গণহত্যা। এ অবস্থায় ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালির রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালি যখন প্রায় স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, তখন পাকিস্তান সরকার নিজেদের পরাজয় বুঝতে পেরে বাঙালির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টায় আবারও আঘাত হানে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের ওপর। কিন্তু কোনো কিছুই বাঙালির মুক্তির স্বাদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে আটকে রাখতে পারেনি। বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করে। জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কিছু বিধিমালার প্রয়োজন। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে থাকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, যাকে 'সংবিধান' বা Constitution বলা হয়। সংবিধান একটি রাষ্ট্রের দর্পণস্বরূপ। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল চালিকাশক্তিই হলো সংবিধান। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই সংবিধান রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর ও ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা গণপরিষদের সদস্য বলে বিবেচিত হন। গণপরিষদের সদস্য ছিলেন ৪৩০ জন। বাংলাদেশ সংবিধান রচনা কমিটির সদস্য ছিলেন ৩৪ জন। সংবিধান রচনা কমিটির প্রধান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করা হয়। সংবিধানের খসড়া সর্বপ্রথম গণপরিষদে উত্থাপিত হয় ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া গণপরিষদে গৃহীত হয়। এ জন্য ৪ নভেম্বর 'সংবিধান দিবস' হিসেবে পালিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর ও প্রবর্তিত হয় ১৯৭২-এর ১৬ ডিসেম্বর। আজ 'সংবিধান দিবস'। এই দিনে প্রত্যাশা, ১৯৭২ সালের সংবিধান হয়তো সম্পূর্ণরূপে ফিরিয়ে আনা যাবে না; কিন্তু এমন কোনো সংশোধনী আনা ঠিক নয়, যা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ব্যাহত করে। আবার বৃহত্তর জনপদে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কাম্য।
সুস্মিতা সাহা

No comments

Powered by Blogger.