ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নে এশিয়া এনার্জির নতুন প্রস্তাব by অরুণ কর্মকার

ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নে এশিয়া এনার্জি সরকারকে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। এতে ৬ শতাংশ রয়্যালটি ছাড়াও ১০ শতাংশ ‘ইকুইটি শেয়ার’ প্রদান এবং নিজস্ব বিনিয়োগে খনিমুখে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।


দিনাজপুরের ওই খনি প্রকল্পের বিষয়ে এশিয়া এনার্জির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝেমধ্যে আলোচনা চলে এসেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এশিয়া এনার্জি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সাড়া পায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে তাঁদের কেউই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রত্যেকেই বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কিছুই বলতে পারবেন না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশে এশিয়া এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্ট (জিসিএম) রিসোর্সেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি এন লাই বলেন, অনেক প্রস্তাবই দেওয়া হয়েছে। সেগুলো কেউ যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে দেখছেন বলে মনে হয় না।
গ্যারি এন লাই বলেন, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী এশিয়া এনার্জি অনুসন্ধান, মজুত নির্ধারণ, খনির পানি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, পুনর্বাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে ২৩০টি সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এসব সমীক্ষার ভিত্তিতে সরকারের কাছে খনির উন্নয়ন পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে। এর পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা চুক্তিতে রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তা জানায়নি।
এর পরও এশিয়া এনার্জি বসে আছে কেন? ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নের কাজ এশিয়া এনার্জিই পাবে এমন নিশ্চয়তা তাঁরা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে গ্যারি লাই বলেন, এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকারের চুক্তি আছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত জানাতে সরকার কেন দেরি করছে তা জানার জন্য মাঝেমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁরা যোগাযোগ করে চলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো জবাব পাননি।
তার পরও নতুন প্রস্তাব দেওয়ার যুক্তি হিসেবে গ্যারি লাই বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। যেমন ২০০৫ সালে দেশে কয়লা ব্যবহারের ক্ষেত্র ছিল সীমিত। কাজেই রপ্তানি অপরিহার্য ছিল। সরকার এখন কয়লাভিত্তিক প্রচুর বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। তাই এখন রপ্তানির প্রশ্ন নেই। তবে ফুলবাড়ী খনিতে যে প্রায় ৩০ শতাংশ ‘কোকিং কোল’ (ইস্পাত ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহারোপযোগী অতি উন্নত মানের) রয়েছে তা ব্যবহারের কোনো ক্ষেত্র এখনো বাংলাদেশে নেই। আর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্যও সরকার বিদেশি বিনিয়োগ চায়। এশিয়া এনার্জি এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী। কারণ শুধু ফুলবাড়ী খনির কয়লা দিয়েই চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রায় ৫০ বছর ধরে উৎপাদিত হতে পারে।
তবে গ্যারি লাই যা-ই বলুন, সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকারের চুক্তি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। প্রথমত, ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকার অস্ট্রেলীয় কোম্পানি বিএইচপির সঙ্গে যখন মূল চুক্তিটি করে, তখন আইনে ২০ শতাংশ রয়্যালটির বিধান থাকলেও চুক্তি করা হয় ৬ শতাংশে। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ওই চুক্তি এশিয়া এনার্জি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরে অনুমোদন দেয়। এ ছাড়া মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে লাইসেন্স নবায়নের বিধান থাকলেও বিএইচপির লাইসেন্স নবায়ন করা হয় মেয়াদ শেষে।
দ্বিতীয়ত, ১৯৯৪ সালের ১০ জুলাই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির (বিসিএমসিএল) সঙ্গে বিএনপি সরকার চুক্তি করে ২০ শতাংশ রয়্যালটিতে। এর মাত্র এক মাস ১০ দিন পর বিএইচপির সঙ্গে চুক্তি করে ৬ শতাংশ রয়্যালটিতে, যা আইনের পরিপন্থী।
তৃতীয়ত, এশিয়া এনার্জির কাছে বিএইচপির চুক্তি হস্তান্তর হয় ১৯৯৮ সালে। কিন্তু এই হস্তান্তরের বিষয়ে গেজেট প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালের পয়লা জুন। সরকারি সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন বাস্তবায়নের জন্য গেজেট প্রকাশের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে গেজেট জারির আগ পর্যন্ত সময় এশিয়া এনার্জির কার্যক্রম বৈধ বলে গণ্য করা যায় না বলে সরকারি সূত্রগুলো জানায়।

No comments

Powered by Blogger.