নেতিবাচকতা by একরামুল হক শামীম

নেতিবাচক চিন্তার প্রবণতা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন থেকে বঞ্চিত করে। সাফল্যের মাঝে যদি নেতিবাচকতা খোঁজা হয় তাহলে অর্জন ফিকে হয়ে যায়। তখন স্বীকৃতি না মেলার কষ্ট বড় হয়ে দাঁড়ায়।


এমনিতে বলা হয়ে থাকে, খবরের জগতে নেতিবাচক খবরের গুরুত্ব বেশি। হয়তো পাঠকদের মাঝেও এর চাহিদা বেশি। এজন্যই সংবাদপত্র, রেডিও কিংবা টেলিভিশনে প্রচারিত খবরের বেশিরভাগ নেতিবাচক খবর। কিংবা হয়তো এমনটাও হতে পারে যে, নেতিবাচক ঘটনাগুলোই বেশি ঘটছে। তবে সংবাদপত্রগুলোর সংবাদের হিসাব করলে এটি খুবই স্পষ্ট হবে যে, সেখানে ইতিবাচক খবরের তুলনায় নেতিবাচক খবর অনেক বেশি। তবে এই বিষয়গুলো আমাদের চিন্তাভাবনাকে নেতিবাচক করে ফেলছে কি-না তা ভেবে দেখা জরুরি। সাফল্যের মাঝেও যদি কেবল নেতিবাচক চিন্তা হানা দেয় তাহলে তা খুব একটা সুখকর পরিস্থিতি নয়।
সাম্প্রতিক কয়েকটি ইতিবাচক খবরের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কারণেই এত কথা বলা। এমনিতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কিত বেশিরভাগ খবর নেতিবাচক ট্রেন্ডকে প্রতিনিধিত্ব করে। এভাবে এ দেশ বাইরের মিডিয়ায় পরিচিতি পেয়েছে জনসংখ্যাবহুল, দরিদ্র, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে। এমনকি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপের ফলাফলে কয়েক বছর শীর্ষে থাকায় দুর্নীতিপ্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নাফিসের ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে অনেকেই বলছেন। এই খবরগুলো দেশের মিডিয়াতে বড় ট্রিটমেন্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু যখন বাংলাদেশের ইতিবাচক খবরগুলো বিদেশি মিডিয়াতে স্থান পায় তখন আমাদের দেশের মানুষকে কতটা আন্দোলিত করে? দেশের মিডিয়ায় সেই খবরগুলো কতটা গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়? সাম্প্রতিক দুটি ইতিবাচক খবরের ব্যাপারে আলোচনা করা যাক। ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভিতে বাংলাদেশের ইন্টারনেটের প্রসার নিয়ে ইতিবাচক একটি সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছে। অথচ তা নিয়ে আমাদের দেশের মিডিয়ার উচ্ছ্বাস নেই, এমনকি এই খবর সাধারণ মানুষও পাত্তা দেয়নি। অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায়ও মানুষের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী 'দ্য ইকোনমিস্ট'-এ সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পর্কে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন দুটির শিরোনাম_ 'বাংলাদেশ আউট অব দ্য বাস্কেট' এবং 'বাংলাদেশ দ্য পাথ থ্রো দ্য ফিল্ডস'। এই প্রতিবেদনগুলোতে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বিস্ময়কর হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বিশ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের ব্যবধানে গড় আয়ু ১০ বছর বেড়ে ৬৯ হয়েছে। অবশ্য প্রতিবেদনগুলোতে কিছু সমস্যার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তারপরও সামগ্রিক দৃষ্টিতে প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজকে তুলে ধরে। কিন্তু এই খবরগুলো দেশের মিডিয়াতে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। বেশিরভাগ মিডিয়ায় পেয়েছে সিঙ্গেল কলাম ট্রিটমেন্ট। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, নেতিবাচক কোনো খবর থাকলে তা আরও ভালো ট্রিটমেন্ট পেত। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতেও দেখলাম অনেকে বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছে, ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন হাস্যকর, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।
কিছুদিন আগে হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স ২০১২-এর তালিকায় বাংলাদেশ ১১তম স্থান পেয়েছিল। তার মানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১তম সুখী দেশ। তখনও এই খবর নিয়ে অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তার মানে কি আমাদের মধ্যে ইতিবাচক খবরগুলোকে স্বাভাবিকভাবে না নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে? সবক্ষেত্রে নেতিবাচকতা মোটেই কাম্য নয়, তা আমাদের পথচলাকে কেবল বাধাগ্রস্তই করবে।
 

No comments

Powered by Blogger.