আমাদের বাবু মামা by ফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে।


আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বাবু মামার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও মহৎপ্রাণ মানুষ ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি ছিল অগাধ বিশ্বাস ও অবিচল আস্থা। তিনি দলের নেতাকর্মীদের অনেক ভালোবাসতেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন রাজনীতি করে। সবার সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার অসাধারণ গুণ ছিল মামার। তিনি ধনী-গরিব সবাইকে সহজে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। তিনি মানুষকে খাওয়াতে খুবই ভালোবাসতেন। নেতাকর্মী কিংবা অতিথিদের আপ্যায়ন করতে দেরি হলে তিনি খুবই রেগে যেতেন। সবসময় পরিবারের সদস্য, স্বজন ও নেতাকর্মীদের বলতেন, আমি রাজনীতি করি দেশের জন্য, এলাকার জনসাধারণের জন্য। আর ব্যবসা করি রাজনীতির জন্য।
আমার দেখামতে, তিনি তার আয়ের বিশাল অংশ খরচ করেছেন রাজনীতির জন্য, দলের জন্য এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি শুধু নেতাকর্মীদের নয়, ভালোবাসতেন আত্মীয়-স্বজনকেও। তাদের খোঁজখবর নিতেন। যার যার প্রয়োজনে সহযোগিতা করতেন। এমন কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই যে, তিনি সহযোগিতা করেননি। অত্যন্ত দয়ালু ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন বাবু মামা। যাকে যেভাবে পেরেছেন সহযোগিতা করেছেন। তিনি সবসময় আমাদের মাথার ওপর ছায়ার মতো ছিলেন। আজ আমাদের সেই ছায়া হঠাৎ সরে গেল, বড় অসময়ে। সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন আমাদের প্রিয় বাবু মামা।
মামার সঙ্গে আমার সর্বশেষ দেখা হয়েছিল গত ৭ অক্টোবর গুলশানের বাসায়। চারদিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরেন তিনি। ওই দিন ১২টার দিকে মামার সঙ্গে দেখা করতে যাই। মামাকে পায়ে ধরে সালাম করার সঙ্গে সঙ্গে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন, 'ক্যান আচ্চস? তুর বারির এ্যডে জাগাটাগা আছে না?' অর্থাৎ কেমন আছ? তোমাদের বাড়ির আশপাশে জায়গা আছে? জানতে চাইলেন, আমাদের বাড়ির পাশে কোনো জায়গা আছে কি-না। হঠাৎ জায়গা আছে কি-না জানতে চাওয়ায় একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম এবং কী ধরনের জায়গা এবং কেন জানতে চাইলে মামা বললেন, ইউসিবিএলের একটি শাখা খুলবে আমাদের এলাকায়। অর্থাৎ পটিয়ায় একটি ব্যাংকের শাখা খোলার জন্য জায়গা খুঁজছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান স্বয়ং। ব্যাংকের প্রতি কতটা দরদ থাকলে চেয়ারম্যান নিজে শাখা খোলার জন্য জায়গা খোঁজেন! আমি আশা করব, ব্যাংকের কর্মকর্তারাও হয়তো এ ব্যাপারে অবগত আছেন। মামার ইচ্ছানুসারে পটিয়ায় যাতে একটি শাখা খোলা হয়। অসাধারণ স্মরণশক্তি ছিল তার। কোনো মানুষের সঙ্গে একবার কথা বললে তার কথা তিনি সহজে ভুলতেন না। অমায়িক ও সদালাপী মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তার সহযোগিতায় এখনও চলছে অনেক পরিবার। এ রকম মহামানুষের মৃত্যু হতে পারে না। তিনি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন সুদীর্ঘ কাল।
poragrcy@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.