আমনের নিম্নদর-দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন

কৃষক এখনো শাঁখের করাতের মুখে। জমিতে ফলন ভালো হলেও বিপদ, না হলেও বিপদ। এই চিত্র চিরায়ত। একসময় অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টিজনিত কারণে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণে ফলন কম ও নষ্ট হতো।


তখন কৃষককে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে হতো। কৃষি আবাদে প্রযুক্তিগত সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রকৃতিনির্ভরতা হ্রাসের সুবাদে এখন প্রায় প্রতিবছরই ফলন ভালো হচ্ছে। এখন সেই বাম্পার ফলনও কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হচ্ছে না। আগের মতোই কৃষককে মাথায় হাত দিয়ে ভাগ্যের দোষ দিতে দেখা যায়। কৃষক শাঁখের করাতের মুখে পড়েছে এবার ধানের বাম্পার ফলনের পরও। উৎপাদনব্যয়ের সঙ্গে সংগতি নেই বিক্রয়মূল্যের। তাই সোনালি ধানের প্রাচুর্যেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তুলনামূলক কম খরচে আমন ফলাতে পেরেও কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে বাড়তি লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। প্রতিমণ ধানে উৎপাদনব্যয় যেখানে সাড়ে ৬০০ টাকা, সেখানে বিক্রয়মূল্য ৫০০ টাকার বেশি নয়। তাও প্রতি হাটেই আবার ক্রমহ্রাসমান। চোখ ছানাবড়া করে তাই তাকিয়ে থাকতে হয় কৃষককে। আতঙ্কে কাটে তাদের দিনরাত। কমে যাবে নাকি আরো? সান্ত্বনা দেওয়ারও কেউ নেই তাদের। ফসল ওঠার সময় মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ও কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দিতে প্রতিবছরই সরকারি ঘোষণা আসে ধান ক্রয়ের। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও লাভের গুড় চলে যায় পিঁপড়ার পেটে। ফড়িয়া-মধ্যস্বত্বভোগীদের ভাগবাটোয়ারার পর তাদের ভাগ্যে জোটে না সরকার প্রদত্ত সুবিধার ছিটেফোঁটাও। ভর্তুকি দিয়ে সার সরবরাহের দাবি করে সরকার। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে সেচকাজ বিঘ্নিত হয় বলে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয় ডিজেল। সেখানেও ছাড়-সুবিধা নেই। ফলে এত ব্যয়, এত পরিশ্রমের ফল কি হতাশায়ই পর্যবসিত হবে? এরও জবাব পায় না কৃষক। ধানের বিড়ম্বনা থেকে তাদের জীবনের বিড়ম্বনা বেড়েই চলে।
কৃষককে তাই বিকল্প পথ খুঁজতে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতার অভাবে পাটের চাষ এখন কমতে কমতে ঐতিহ্য হারানোর পথে। ধানও কি সে পথেই যাবে? এমন অবস্থা অব্যাহত রেখে ২০১৩ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ কি সম্ভব হবে সরকারের? ১৫ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ এই বাংলাদেশে এখনো পাঁচ লক্ষাধিক টন খাদ্য আমদানি করতে হয় প্রতিবছর। বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে আনার ঘোষণা কার্যকর করতে হলে, মৌলিক চাহিদা হিসেবে খাদ্যের ঘাটতি কমাতে হলে সর্বাগ্রে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষককে সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন। সামগ্রিক অর্থনীতিকে ইতিবাচক দিকে পরিচালনার জন্য তাই খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের স্বার্থ চিন্তা করতে হবে সবচেয়ে বেশি। ধান-চাল ক্রয়ের নীতিমালা যুগোপযোগী করে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দূরে থাক, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে আরো অনেক দিন লাগবে।

No comments

Powered by Blogger.