অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে চীন। এর পরও ১৩০ কোটি মানুষের দেশটিতে রয়েছে নানা সমস্যা। ১০ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার ভার পেয়েছে নতুন নেতৃত্ব।


শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বাধীন এ নেতৃত্বকে অভ্যন্তরীণভাবে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে-
মডেল পরিবর্তন : ৫০ কোটি মানুষকে দরিদ্রদশা থেকে টেনে তোলা চীনের অর্থনীতির বড় সাফল্য। উন্নয়নের পথে এগোনোর বছরগুলোতে তাদের অর্থনৈতিক মডেল ভালো কাজ দিয়েছে। তবে এখন এ মডেলের সংস্কার দরকার বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শিল্পের বেশির ভাগ খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত কম্পানিগুলোরই আধিপত্য। সময় এসেছে এসব খাতে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানার দিকে বেশি নজর দেওয়া। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কম্পানিগুলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র অর্ধেক জোগান দিলেও কম সুদের ব্যাংক ঋণের ৭০ ভাগেরও বেশি সুবিধা তারাই পায়।
নাগরিক বৈষম্য : ১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের সময়ের চেয়ে চীনারা এখন ভালো আছে। তবে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহুরে নাগরিকদের আয় বেড়েছে ব্যাপক হারে। চাইনিজ একাডেমী অব সোস্যাল সায়েন্সের হিসাবে, ১৯৮৫ সাল থেকে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চেয়ে শহরের মানুষের আয় বেড়েছে ৬৮ শতাংশ, যা এশিয়ার সবচেয়ে বড় সম্পদ বৈষম্যের উদাহরণ। সরকারের আশঙ্কা, এই বৈষম্যের ফলে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিচুয়ানের মতো দরিদ্র প্রদেশগুলোর জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প। কয়েক শতকের পুরনো কৃষি কর মওকুফসহ স্বাস্থ্যবীমার প্রসার ঘটানো হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আরো পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজকল্যাণ খাতে জিডিপির মাত্র ৬ শতাংশ ব্যয় করে চীন, যা তাদের পর্যায়ে উন্নত দেশগুলোর প্রায় অর্ধেক।
পরিবেশ বিপর্যয় : বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এখন চীন। তাদের ব্যাপক উন্নয়ন বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু পরিবেশগত পরিবর্তন ঘটিয়েছে। দেশটির জ্বালানির প্রধানতম উৎস কয়লা। ফলে আগামীতেও তাদের কার্বন নিঃসরণের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০০৩ সাল থেকে দেশটিতে গাড়ির পরিমাণ বেড়েছে চারগুণ। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ৩০টি শহরের ২০টিই চীনে। এর থেকে উত্তরণে বায়ুচালিত শক্তি উৎপাদনে জোরও দেওয়া হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের জোয়ানা মাজিক বলেন, 'এখনো ৪৮ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই। পানীয়জলের সুবিধাবঞ্চিত ১২ কোটি মানুষ।' ফলে মৌলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান।
ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা : চীনারা যত অর্থবান ও শিক্ষিত হয়েছে তাদের চাহিদার ক্ষেত্রে ঘটেছে নাটকীয় পরিবর্তন। তাই নতুন নেতৃত্ব দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সম্পদ বাড়াবে-এর মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই তাদের চাওয়া। সব ক্ষেত্রে উন্নত সেবা ও আরো বেশি স্বাধীনতা চায় তারা। প্রতিবছর চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ৬০ লাখেরও বেশি স্নাতক ডিগ্রিধারী বেরোচ্ছে। ১৯৯৮ সালের তুলনায় যা ছয়গুণ বেশি। ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে মানুষের মত প্রকাশের সুযোগ বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের ঐক্য ঘটছে বা কখনো কখনো প্রতিবাদ জানানোর ঘটনাও ঘটছে।
জনসংখ্যা তত্ত্বের সমস্যা : এক সন্তান নীতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্মহারের দেশগুলোর একটি চীন। এর ফলে তরুণ সম্প্রদায় ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক ফারাক তৈরি হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমতে থাকবে। শিগগির দেশটিতে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষের সংখ্যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও বেশি হবে। এ ছাড়া এক সন্তান নীতির কারণে অনেকেই শুধু ছেলে সন্তান নেওয়ায় আগ্রহী। ফলে এখন প্রতি ১০০ নারী সন্তানের বিপরীতে জন্ম নিচ্ছে ১২০ ছেলে সন্তান। ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, ২০২০ সাল নাগাদ দুই কোটি ৪০ লাখ পুরুষ বিয়ের জন্য নারী খুঁজে পাবে না। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.