বাজেট নিয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত ওবামা-* নির্বাচনের পর ওবামার প্রথম সংবাদ সম্মেলন -* ধনীদের অবশ্যই আরো কর দিতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ধনীদের কর বাড়ানো বিষয়ে আবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বাজেট নিয়ে বিরোধী রিপাবলিকানদের সঙ্গে লড়াইয়ে নিজের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন তিনি। পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে গত বুধবার প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন ওবামা।


ওবামা জানান, যাঁদের আয়সীমা আড়াই লাখ ডলারের বেশি তাঁদের কর বাড়বে। এর বিকল্প কোনো বাজেট সমঝোতায় তাঁর সম্মতি থাকবে না। এ কারণে যদি অর্থনীতি মন্দার দিকে যায়, তাও সই। অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ধনীদের কর অনেকটাই বাড়িয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে জর্জ বুশের আমলে বিশেষ ব্যবস্থায় কর কমিয়ে আনা হয়। এই ব্যবস্থার মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা বিষয়টি নিয়ে সমঝোতায় পেঁৗছাতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লিনটন আমলের উচ্চ করব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। ঘণ্টাব্যাপী চলমান সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, শীর্ষ ধনীদের জন্য ক্লিনটন আমলের উচ্চ করের হার কম রাখতে রিপাবলিকানদের সঙ্গে সমঝোতায় প্রস্তুত তিনি।
তবে রিপাবলিকানরা জানিয়েছে, ওবামার প্রস্তাবে সায় নেই তাদের। এ প্রস্তাব অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরির জন্য ক্ষতিকর হবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
ওবামা বলেন, বুশ প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থায় শীর্ষ ধনীদের (তাদের হার জনসংখ্যার ২ শতাংশ) ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হতো। ক্লিনটনের সময় এ হার ছিল ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ওবামা এই হার বহাল করতে না চাইলেও বুশের অবস্থানেও অব্যাহত থাকতে চাইছেন না। তিনি রিপাবলিকানদের সঙ্গে আলোচনা করে এর মাঝামাঝি একটা হার ঠিক করতে আগ্রহী। এক হিসাবে দেখা যায়, আগামী ১০ বছরে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় তিন ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। হোয়াইট হাউস এর মধ্যে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার জোগাড়ের কথা জানিয়েছে। শীর্ষ ধনীদের ওপর থেকে কর ছাড় তুলে নিলেই আগামী ১০ বছরে দুই ট্রিলিয়ন ডলার পাওয়া সম্ভব। বাকিটা সেবা খাতের ব্যয় কমিয়ে সমন্বয় করা হবে। তবে এত সরল অঙ্কে সমাধান আসবে না বলেই আশঙ্কা করছেন ওবামা।
রাইসের পক্ষ নিলেন ওবামা
জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সুজান রাইস গত সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, জনতার স্বতঃস্ফূর্ত হামলায় লিবিয়ার বেনগাজিতে অবস্থানকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেনস নিহত হন। তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকান সিনেট জন ম্যাককেইন ও লিন্ডসে গ্রাহাম। রাইসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হলে তাও আটকে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। তাঁদের এ অবস্থানের তীব্র প্রতিবাদ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ওবামা। তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে কাউকে দোষারোপ করতে চাইলে তাঁরা আমাকে বেছে নিতে পারেন।' উপযুক্ত মনে করা হলে রাইসই হবেন পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেও উল্লেখ করেন ওবামা।
পেট্রায়াস কেলেঙ্কারি : কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই
ওবামা বলেছেন, যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে সিআইএর প্রধান ডেভিড পেট্রায়াস পদত্যাগ করলেও বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে নেই যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, 'ওই ঘটনায় কোনো গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে_এমন প্রমাণ আমার হাতে নেই।'
অভিবাসন ও জলবায়ু
অভিবাসন-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ওবামা। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রিপাবলিকানদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে জনগণ। এ ছাড়া তিনি বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে নতুন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন। তবে তিনি জানান, অর্থনীতি মজবুত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.