তৃতীয় পক্ষের প্রভাব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে জোরালো গুঞ্জন উঠেছে তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা নিয়ে। বলা হচ্ছে, তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত প্রার্থীরা নিরপেক্ষ ভোটারদের ভোট কেড়ে নিয়ে নির্বাচনের ফলাফলে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেন।


এরা কেউ আলোচিত ব্যক্তিত্ব নন। এর পরও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নিজেদের জন্য না হলেও ওবামা বা রমনির জয়ের ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন তাঁরা। ইতিহাসে এর প্রমাণ রয়েছে।
১৯৯২ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জয়লাভের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে সড়াৎ করে পিছলে গেলেন তিনি। মাত্র ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে হোয়াইট হাউসের কর্তা বনে গেলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিল ক্লিনটন। বিশ্লেষকদের মতে, ওই সময় বুশের জয়ের পথে বাগড়া দেন তৃতীয় পক্ষ হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানো কোটিপতি রস পেরো। বুশের বেশ কিছু ভোট তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন। আট বছর পর ডেমোক্র্যাট শিবিরে একই দুর্গতির কারণ হয়ে দাঁড়ান র‌্যালফ নাডের।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এবার তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যেসব প্রার্থী বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন, এর মধ্যে প্রধান দুজন হলেন লিবার্টারিয়ান পার্টির গ্যারি জনসন ও কনস্টিটিউশন পার্টির ভার্জিল গুড। নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর গ্যারি জনসন (৫৯) ও ভার্জিনিয়ার সাবেক কংগ্রেসম্যান ভার্জিল গুড (৬৬) উভয়েই ওবামা ও রমনির প্রাপ্য ভোটে ভাগ বসাবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ওবামা ও রমনির নির্বাচনী লড়াই হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই কয়েক হাজার ভোটের ঘাটতি কোনো একজনের ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ভার্জিল গুড প্রথমে ডেমোক্র্যাট দলে ছিলেন। পরে রিপাবলিকান দলে ভিড়ে কংগ্রেসম্যান হন। অভিবাসনের বিরুদ্ধে কট্টর অবস্থান ও রক্ষণশীল কিছু নীতির সমর্থক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তাঁর। ৩৮টি অঙ্গরাজ্যে ভোটের জন্য লড়ছেন ভার্জিল গুড। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ে নিজ এলাকায় তিনি বরাবরই এক লাখ ২০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে গতবারের ১০ শতাংশ ভোটও যদি গুড পেয়ে যান, তা হলে ভার্জিনিয়া থেকে ওবামার ১৩ ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়ার বেলায় তা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
গ্যারি জনসন আলোচনায় আসেন সমকামীদের বিয়ে ও অবিলম্বের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার সমর্থন করে। ৪৩টি অঙ্গরাজ্যে ভোটের জন্য লড়বেন জনসন। তাঁর সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক ওয়েন্ডি শিলার বলেন, নিউ মেক্সিকোর এই সাবেক রিপাবলিকান গভর্নরের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। তাঁর মতে, কেবল নিউ মেক্সিকো নয়, কলোরাডো, নেভাদা ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের ইলেক্টোরাল ভোটের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে জনসনের পাওয়া ভোট।
গত মাসে সিএনএন ও ওআরসি পরিচালিত যৌথ জরিপের ফল অনুযায়ী, নেভাদায় তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীদের মধ্যে ভার্জিল গুডের সমর্থন রয়েছে চার শতাংশ এবং জনসনের তিন শতাংশ।
ভোটবিষয়ক জরিপ প্রতিষ্ঠান রাসমুসেন রিপোর্টস এর শীর্ষ কর্মকর্তা স্কট রাসমুসেন বলেছেন, তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার বেলায় ১০০টি ভোটই একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরেকজন প্রার্থী ওবামা ও রমনির জন্যহুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন। তিনি গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন (৬২)। পেশায় চিকিৎসক স্টেইন লড়বেন ৩৮টি অঙ্গরাজ্যে। তাঁর অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে আড়াই কোটি পরিবেশবান্ধব চাকরির পদ সৃষ্টি ও সামরিক ব্যয় হ্রাস।
রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান রেইন্স প্রাইবাস অবশ্য পাত্তাই দিচ্ছেন না তৃতীয় পক্ষের প্রার্থীদের প্রভাব। তিনি বলেন, ‘এখানে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের বিষয়টি নির্বাচিত হচ্ছে, সেখানে ভোটাররা যেনতেনভাবে তাঁদের ভোট দেবেন বলে মনে হয় না। তেমন কিছু ঘটবে বলে মনে করি না।’
 দাউদ ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.