ওস্তাদ আফজালুর রহমান

ফকির আলাউদ্দিন খান, আফতাবউদ্দিন খানের জন্মভূমি তিতাসপাড়ের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মেছেন মরমি সংগীতসাধক আফজালুর রহমান। ১৯৩৫ সালে। আফজালুর রহমানের এক আত্মীয় রকিবউদ্দিন আহমেদ, বালক বয়সেই আফজালুর রহমানের হাতে বেহালা তুলে দেন।


শৈশবে ওস্তাদ ইসরাইল খাঁ ও বাবু হেমন্তকুমার রায়ের কাছে বেহালায় তালিম নেন আফজালুর রহমান। ১৯৫২ সালে কিশোর আফজালুর রহমান চলে আসেন কুমিল্লায়। এখানে ওস্তাদ আরত আলী খাঁ দৃষ্টিশক্তিহীন আফজালুর রহমানের সংগীতপ্রতিভা দেখে নিজের শিষ্য করে নেন। ১৯৫৩ সালে আফজালুর রহমান ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় রাজসভার সংগীত সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে আফজালুর রহমানের বেহালাবাদনে মুগ্ধ হন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক বেহালাবাদন প্রতিযোগিতায় আফজালুর রহমান প্রথম স্থান লাভ করেন। এর পর থেকে তিনি ঢাকা বেতারে নিয়মিত বেহালাবাদক হিসেবে যোগ দেন। সংগীতসাধনার একপর্যায়ে আফজালুর রহমান সরোদ বাজাবেন বলে মনঃস্থির করেন। ওস্তাদ আরত আলী খাঁ প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে সম্মতি দেন। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বেতারে প্রথম সরোদ বাজান এবং এর পর থেকে মাসে দুবার করে বাজাতেন। ১৯৬৭ সালে টেলিভিশনে আফজালুর রহমানের প্রথম সরোদবাদন সম্প্রচারিত হয়। এ সময় তিনি চলচ্চিত্রে আবহসংগীতের কাজও করেন। ১৯৭৪ সালে আলাউদ্দিন সংগীতায়তনে যন্ত্রসংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। এই সময়েই তিনি বেহালা, সরোদ, সেতার, বাঁশি, একতারা বাদকদের নিয়ে দল তৈরি করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও তিনি স্বাভাবিক মানুষের মতো অনেক কাজ করতে পারতেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের পাশাপাশি বিজ্ঞানেও তাঁর আগ্রহ ছিল। ১৯৭৪ সালে তিনি আনোয়ারা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী আনোয়ারা রহমানও এসেছেন সংগীতে অনুরক্ত পরিবার থেকে। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে বেতারে প্রথম নারী সরোদবাদক।
২০০৯ সালের এপ্রিলে জীবনাবসান ঘটে সংগীতসাধক আফজালুর রহমানের। ওস্তাদ আফজালুর রহমানের বর্ণিল সংগীতজীবন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইনার আইস ইনস্টিটিউশন ফর ব্লাইন্ডস নিয়ে আল-জাজিরা টেলিভিশন তৈরি করে প্রামাণ্যচিত্র দ্য মিউজিক মায়েস্ট্রো। দি উইটনেস অনুষ্ঠানে ২২ মিনিট প্রামাণ্যচিত্রটি প্রথম দেখানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.