দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমঃ রাসুলের সা. ইন্তেকালের ৫৬ বছর পরেই বাংলাদেশে মসজিদ by মোহাম্মদ আরজু

রাসুলের সা. ওফাতের মাত্র অর্ধশতাব্দি পরেই বর্তমান বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার এক গ্রামে তৈরি হয়েছিল মসজিদ, এমনটিই লেখা আছে আবিষ্কৃত মসজিদটির স্থানে পাওয়া নিদর্শনে। একজন বৃটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ বলছেন, এতে এটা প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া যায় যে এটাই দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে আগে নির্মিত হওয়া মসজিদ- তবে চূড়ান্ত কিছু বলবার আগে এখানে পাওয়া নিদর্শনগুলোর নিরীক্ষা দরকার।

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীরা বার্তা২৪ ডটনেটকে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিরীক্ষা চালানো হয়নি এবং এমন কোনো চিন্তা সরকারের আছে বলেও তারা জানেন না।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চালিত রংপুর তাজহাট জমিদারবাড়িতে অবস্থিত যাদুঘরে মসজিদটির বেশ কিছু নিদর্শন সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে আছে আরবি ভাষায় ইসলামের ‘কালিমা তাইয়িবা’ ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে ৬৯ হিজরি সাল লেখা একটি নিদর্শনও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ‘সরকারি লোকেরা’ এসে মসজিদটির অবশিষ্টাংশ থেকে ‘প্রায় সব কিছু’ নিয়ে গেছেন। 

তবে তাজহাট জমিদার বাড়ি যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. মুজিবুর রহমান জানালেন, আবিস্কৃত প্রাচীন মসজিদটির স্থানে কোনো অনুসন্ধান চালানো বা কোনো নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়নি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পক্ষ থেকে। রংপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে শুধু একটি নিদর্শন এনে যাদুঘরটিতে দেয়া হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। তিনি জানান, মসজিদটির স্থান আবিস্কৃত হলে ৯৩’র পরে বিষয়টি নিয়ে রংপুরে একটি সেমিনার হয়েছিল দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। কিন্তু এরপর থেকে সেটি সেভাবেই যাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য সংরক্ষিত আছে। ওই নিদর্শনটি বা মসজিদটির স্থানে থাকা নিদর্শনগুলোর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তার জানা মতে, এমন কোনো চিন্তা বা উদ্যোগ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নেই।

রংপুর থেকে মহাসড়ক ধরে কুড়িগ্রামের দিকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে এ প্রাচীন মসজিদটির অবশিষ্টাংশ এখনো আছে। তবে এর ওপর নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন স্থানীয়রা। নতুন মসজিদটির ভেতরে পুরনো মসজিদের অবশিষ্টাংশ- যার অনেকটাই এখনো মাটিচাপা- তা অক্ষত রাখা হয়েছে। স্থানটির নাম  ‘মজদের আড়া’।  আঞ্চলিক ‘আড়া’ শব্দের অর্থ বন-জঙ্গলে ঢাকা স্থান। ৯৩’ সালেই জঙ্গল পরিষ্কার করার সময় ফুলের নকশা আঁকা কিছু পুরনো ইটের স্তুপ বেরিয়ে আসে। পরে মাটি সরালে একটি মসজিদের ভিত ও নকশা দেখা যায়। সেখানে পাওয়া যায় আরবি ভাষায় ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ, হিজরী সন ৬৯’ লেখা একটি বস্তুখণ্ড।

আন্তর্জাতিক টিভি নেটওয়ার্ক আল জাজিরা’য় গত শনিবার সম্প্রচারিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বৃটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ টিম স্টিল। কালেমা তাইয়িবা লেখা বস্তুখণ্ডটিকে টিম স্টিল ‘শিলালিপি’ বলে উল্লেখ করলেও তা দেখতে দেশের অন্যান্য যাদুঘরে থাকা আর কোনো ‘শিলালিপি’র মতো দেখায় না- বরং পোড়ামাটির খণ্ডের মতো দেখায়।

তাজহাট যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. মুজিবুর রহমান বার্তা২৪ ডটনেটকে জানিয়েছেন, সেটি কোনো শিলা বা পাথরে লেখা নয়- বরং মসজিদটিতে ব্যবহৃত আর ইটগুলোর মতোই একটি ইটের ওপর লেখা ছিল। তারা যেটিকে আনুষ্ঠানিক বাংলায় ‘ইষ্টকলিপি’ বলেন।

টিম স্টিল কোনো পেশাদার বা বিশেষজ্ঞ প্রত্নতত্ত্ববিদ নন, তিনি শখের বসে এ কাজ করেন। তবে তিনি নিশ্চয় করে বলছেন, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে হিজরি ৬৯ সনের কাছাকাছি সময়ে কোনো মসজিদ নির্মিত হবার নিদর্শন এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তিনি আল জাজিরা’র ঢাকাস্থ প্রতিনিধি নিকোলাস হককে বলেন, এমন প্রাচীন অনেক মসজিদের বিষয়ে লিখিত বিবরণ আছে এ অঞলের নানা দেশে- তবে এমন কোনো প্রামাণ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, হিজরি ১৩ সালে রাসুল সা. ইন্তেকাল করেন। লালমনিরহাটে এই প্রাচীন মসজিদে পাওয়া ‘ইষ্টকলিপিতে’ প্রতিষ্ঠাকাল লেখা হিজরি ৬৯ সাল। সে হিসাবে রাসুলের সা. ওফাতের মাত্র ৫৬ বছর পরেই এ অঞ্চলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে বলছে ইষ্টকলিপিটি। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে বিষয়টিতে চূড়ান্ত কিছু বলবার আগে দরকার নিদর্শনগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষা- যেমনটি বলছেন টিম স্টিল। কিন্তু মো. মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ৯৩’তে মসজিদটি আবিষ্কৃত হবার পরে রংপুর থেকে তার কর্মস্থল পরিবর্তিত হয়- এখন আবার তিনি তাজহাট জমিদার বাড়ির কাস্টোডিয়ান হিসেবে ফিরেছেন। এ দীর্ঘ সময়ে এ বিষয়ে সরকারি কোনো উদ্যোগের কথা তার জানা নেই।

No comments

Powered by Blogger.