মাংস নানা রকম

পোলাও, পরোটা, রুটি যা-ই থাক। এর সঙ্গে মাংসের নানা পদ তো চাই-ই। গরু ও খাসির মাংসের কয়েক পদ রান্নার প্রণালি দিয়েছেন ফাতিমা আজিজ বিফ সাসলিক উপকরণ: হাড় ছাড়া গরুরপেছনের রানের মাংস ১ কেজি, লবণ ২ থেকে আড়াই চা-চামচ, চিনি ২ চা-চামচ, সরিষাগুঁড়া ১ চা-চামচের একটু বেশি, গোলমরিচের ফাঁকি আধা চা-চামচ,


আদা বাটা দেড় চা-চামচ, রসুন বাটা দেড় চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া দেড় চা-চামচ, দই আধা কাপ, অয়েস্টার সস আড়াই টেবিল চামচ, সরিষার তেল আধা কাপ, টমেটো বাটা আধা কাপ, পেঁপে বাটা ২ টেবিল চামচ, গরমমশলা টেলে ফাঁকি করা দেড় চা-চামচ, জায়ফল টেলে ফাঁকি করা সিকি চামচ, জয়ত্রী টেলে ফাঁকি করা আধা চা-চামচ, লবঙ্গ টেলে গুঁড়া করা সিকি চা-চামচ, টমেটো, পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকাম পরিমাণ মতো, লম্বা বা মাঝারি কাঠি পরিমাণ অনুযায়ী (২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন)।
প্রণালি: মাংস ছোট ছোট টুকরো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে পাটায় হালকা ছেঁচে নিন। বাটিতে আধা কাপ তেলের সঙ্গে টমেটো, পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকাম ছাড়া অন্য সব উপকরণ একত্রে মিশিয়ে মাংসের সঙ্গে মাখিয়ে ১২ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখুন। দুই ঘণ্টা বাইরে মেরিনেটের পর ১০ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। ক্যাপসিকাম ও টমেটো ধুয়ে বিচি ফেলে চৌকো করে কেটে নিন। পেঁয়াজ ছিলে ধুয়ে লম্বায় চার ভাগ করুন। এবারে একেকটি করে কাঠি নিয়ে প্রথমে মাংসের একটি টুকরো, তারপর টমেটো, পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকাম গেঁথে এভাবে পরপর আরও একবার গেঁথে শেষে আরও একটি মাংসের টুকরো গাঁথুন। ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে ১ টেবিল চামচ করে সরষের তেল দিয়ে চারটি করে কাঠি একবারে দিয়ে মৃদু আঁচে রাখুন। ঢেকে দেবেন। মাঝেমধ্যে ঢাকনা খুলে কাঠি ঘুরিয়েদেবেন। মাংস টমেটো, পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকাম থেকে পানি ছাড়বে। সেদ্ধ হয়ে পানি টেনে হালকা লাল হলে নামিয়ে একটি ট্রেতে রাখুন। সব কটি ভাজা হয়ে গেলে আগুনে ঝলসে নিন। একটু পোড়া পোড়া হলে খেতে ভালো লাগবে। একটি প্লেটে সাজিয়ে সালাদ বা সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

ছ্যাঁচা কিমা
উপকরণ: গরুর পেছনের রানের হাড় ছাড়া মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ গোল পাতলা করে কাটা ২ কাপ, তেল ১ কাপ বা আধা কাপ, সিরকা দেড় টেবিল চামচ, ১ টেবিল চামচ গোটা জিরার সঙ্গে আধা চা-চামচ গোটা গোলমরিচের বাটা। দারচিনি ৪-৫ টুকরা, ছোট এলাচি ৬টি, লবঙ্গ ২টি একত্রে পাটায় বাটা। জায়ফল বাটা সিকি চামচ, জয়ত্রী বাটা ১ চিমটি, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ, গরম পানি ৫ কাপ, লবণ ২ চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী।
প্রণালি: গরুর মাংস চর্বি ছাড়িয়ে ছোট ছোট পাতলা টুকরা করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। মাংসগুলো পাটায় থেঁতো করে ছেঁচে নিন। কড়াইয়ে আধা কাপ তেল গরম করে মৃদু আঁচে ১ কাপ পেঁয়াজ সোনালি করে ভেজে নিন। তাতে পাটায় থেঁতো করা মাংসগুলো দিয়ে ভেজে নিন। আঁচ মাঝারি রাখবেন। সিরকা ও লবণ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ মাংসটা ভেজে ঢেকে দিন। মাংস ভাজা ভাজা হলে বাকি তেল এবং পেঁয়াজ বাদে অন্য সব মসলা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। ১ কাপ ফুটন্ত গরম পানি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে বাকি ৪ কাপ গরম পানি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। মাংস পানি টেনে নিলে চুলার আঁচ কিছুটা কমিয়ে দিন। ফ্রাইপ্যানে বাকি আধা কাপ তেল গরম করে অবশিষ্ট পেঁয়াজ অল্প আঁচে সোনালি করে ভেজে তেলসহ বেরেস্তা মাংসে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নাড়ুন এবাং ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে আরও একবার ভালো করে নেড়ে ঢেকে দিন। মাংস থেকে তেল ছাড়া শুরু করলে চুলা বন্ধ করে ১০ মিনিট দমে রাখুন। বেরেস্তা মাংসে মেশানোর আগে কিছু বেরেস্তা উঠিয়ে রাখুন। এবারে পরিবেশনের পাত্রে বেড়ে ওপর থেকে বেরেস্তা ছিটিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। পোলাও, পরোটা বা ভাত—যেকোনো কিছুর সঙ্গে খেতে ভালো লাগবে।

খাসির শাহি কোরমা
উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, দেশি পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, দারচিনি ৪ টুকরা, তেজপাতা ২টি, এলাচি ৪টি, কেওড়া ২ টেবিল চামচ, টক দই আধা কাপ, দেশি পেঁয়াজ মিহি কুচি ১ কাপ, লবণ ২ চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী, চিনি ৪ চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী, কাঁচা ও পাকা মরিচ ১২টি, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, ঘি বা তেল আধা কাপের একটু বেশি, কাজু বাদাম ও কিশমিশ (একত্রে দুধ দিয়ে বাটা) ২ টেবিল চামচ, দুধে ভেজানো জাফরান সামান্য, ক্রিম ২ টেবিল চামচ, ফুটানো গরম পানি সাড়ে তিন কাপ।
প্রণালি: কাটা মাংস সব বাটা ও গোটা গরম মসলা, তেজপাতা, টক দই ও ১ টেবিল চামচ তেল বা ঘি দিয়ে মেখে অল্প আঁচে ঢেকে চুলায় বসিয়ে দিন। আধা ঘণ্টা পর ঢাকনা খুলে লবণ ও সাড়ে তিন কাপ ফুটানো গরম পানি দিন। সেদ্ধ হয়ে এলে চুলার আঁচ একেবারে কমিয়ে দিন। ঢাকনা খুলে কাজু বাদাম ও কিশমিশ বাটা, কেওড়া, ৬টি কাঁচা মরিচ ও ২টি পাকা মরিচ দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। একটু পর অন্য একটি ফ্রাইপ্যানে তেল বা ঘি গরম করে পেঁয়াজ সোনালি রং করে ভেজে মাংস বাগার দিয়ে নেড়ে চিনি, ক্রিম ও দুধেভেজানো জাফরান দিয়ে হালকা নেড়ে ঢেকে দিন। ৫ মিনিট মৃদু আঁচে রান্নার পর একটু লেবুর রস ছিটিয়ে দিয়ে নেড়ে দিন। এবার বাকি মরিচ ও এক টেবিল চামচ ঘি দিয়ে নাড়ুন এবং ঢেকে দিন। মাংস মজে তেলের ওপরে উঠলে চুলা বন্ধ করে ১০-১৫ মিনিট দমে রাখুন।

মেথি ভুনা
উপকরণ: গরুর বুকের মাংস ১ কেজি, দেশি পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদের গুঁড়া দেড় চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, ধনে গুঁড়া ২ চা-চামচ, জিরা ও গোলমরিচ দেড় চা-চামচ, তেজপাতা ২টি, দারচিনি ৪ টুকরা, এলাচি ৪টি, লবণ দেড় থেকে ২ চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী, তেল আধা কাপের একটু বেশি, মেথি সিকি চামচ, পেঁয়াজ মিহি টুকরা ১ কাপ।
প্রণালি: মাংস টুকরো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। মেথি, আধা কাপ তেল এবং পেঁয়াজের টুকরা বাদে অন্য সব উপকরণ একত্রে ১ টেবিল চামচ তেল দিয়ে মেখে হাত ধোয়া পানি দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে চুলায় বসিয়ে দিন।
১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে চুলার আঁচ সামান্য বাড়িয়ে ৩ থেকে ৪ কাপ পানি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ১৫ মিনিট পর আঁচ কমিয়ে নেড়ে আবারও ঢেকে দিন। পানি প্রায় শুকিয়ে মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে পাশের চুলায় ফ্রাইপ্যানে আধা কাপ তেলে মেথির ফোড়ন দিন। তারপর এতে পেঁয়াজ সোনালি রং করে ভেজে মাংস তরকারি বাগার দিন। তেল ও বেরেস্তার সঙ্গে মাংস যেন ভালো করে মিশে, সেটা খেয়াল রাখবেন। আধা কাপ গরম পানি দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে রান্না করুন। মাংসের গায়ে মসলা লেগে ভুনা ভুনা হয়ে তেলের ওপরে উঠলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

খাসির রেজালা
উপকরণ: খাসির মাংস ৫০০ গ্রাম, আদা বাটা আধা টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা সিকি কাপ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা-চামচ, ধনেগুঁড়া আধা চা-চামচ, পোস্তদানা বাটা আধা টেবিল চামচ, তেল সিকি কাপ, ঘি ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ থেকে দেড় চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী। কাঁচা মরিচ ৮টি, তেজ পাতা ১টি, দারচিনি ২ টুকরা, এলাচ ২টি, দেশি পেঁয়াজ মিহি টুকরা আধ কাপ, আলু ৪টি, কেওড়া জল ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি: খাসির মাংস টুকরো করে কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। হাঁড়িতে তেল গরম করে দারচিনি, এলাচ ও তেজপাতার ফোড়ন দিয়ে আঁচে পেঁয়াজ বাদামি করে ভাজুন। এবারে মাংস ও লবণ দিয়ে তা ১০-১৫ মিনিট ভেজে নিন।
মাংস ভাজা হলে তাতে পোস্তদানা বাটা ও জিরার ফাঁকি বাদে অন্যান্য বাটা মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে ঢেকে দিন। ১০-১৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে ১ কাপ গরম পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করুন ও ঢেকে দিন। আলুগুলো ছিলে লম্বালম্বি মাঝখান থেকে কেটে ২ টুকরা করে দিন। পানি শুকিয়ে এলে আরও ১ থেকে দেড় কাপ গরম পানি দিয়ে আলু এবং ৪টি কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর ঢাকনা খুলে জিরাগুঁড়া ও পোস্তদানা বাটা দিয়ে নেড়ে আবারও ঢেকে দিন।
আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ কমিয়ে ঢাকনা খুলে প্রয়োজন হলে আরও সামান্য পানি দিয়ে নেড়ে বাকি কাঁচা মরিচ ও কেওড়া দিয়ে হালকা নেড়ে ঢেকে দিন। মাংস মজে তেল অল্প ছাড়লে ১ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর চুলা বন্ধ করে দমে রাখুন কিছুক্ষণ। গরম গরম পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করা যাবে।

বাগদাদি খাসির ভুনা
উপকরণ: লবণ ২ চা-চামচ অথবা স্বাদ অনুযায়ী, কেওড়া এসেন্স ২-৩ ফোঁটা। খাসির মাংস (ছোট ছোট টুকরো করা) ৫০০ গ্রাম, ঘি সিকি কাপ, পেঁয়াজ মিহি টুকরা আধা কাপ, আদা বাটা ২ চা-চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, দারচিনি বাটা আধা চা-চামচ, এলাচি ৫টি, জিরা টেলে ফাঁকি করা ১ চা-চামচ, ধনেপাতা বাটা ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদের গুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, টক দই ১ কাপ, ২ টেবিল চামচ দুধে সিকি চামচ জাফরান ভেজানো। ঘি বা সামান্য মাখন দিয়ে ভাজা কাজু বাদাম ২ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, ডিম সেদ্ধ ২টি। একেকটি লম্বালম্বি করে ৪ টুকরা করা।
পোস্তদানা ১ চা-চামচ, বুটের ডাল ১ চা-চামচ, শুকনা নারিকেল কোরা ২ টেবিল চামচ, পনির ঝুরি ২ টেবিল চামচ, আলুবোখারা ১টি। পোস্তদানা ও বুটের ডাল একত্রে ফাঁকি করে আলাদা রাখুন, আলুবোখারার বিচি ফেলে টেলে নিন। শুকনো নারিকেল ও পনির তাওয়ায় দিয়েই নামিয়ে ফেলতে হবে। এগুলো একত্রে অল্প পানির ছিটা দিয়ে বেটে নিন।
প্রণালি: মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। বাটিতে টক দইয়ের সঙ্গে আদা, রসুন, ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ বাটা, হলুদ ও মরিচের গুঁড়া এবং লবণ দিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এটি মাংসে মিশিয়ে মেরিনেট করে রাখুন তিন ঘণ্টা। মাঝারি ফ্রাইপ্যানে ঘি গরম করে অল্প আঁচে পেঁয়াজ বেরেস্তা করে মেরিনেট করা মাংস দিয়ে রান্না করুন। একটু কষানো হলে মাংসের বাটিতে সিকিকাপ পানি দিয়ে তা দিয়ে ঢেকে দিন। পানি টেনে গেলে আরও দেড় থেকে দুই কাপ গরম পানি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। অল্প আঁচেই মাংস সেদ্ধ হতে দিন। মাংস অর্ধেক সেদ্ধ হয়ে এলে বাটা গরম মসলা ও জিরার ফাঁকি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ুন। এবারে অন্যান্য টালা, বাটা মসলা ও ফাঁকি দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। মসলা থেকে তেল ছাড়া শুরু হলে দুধে ভেজানো জাফরান দিয়ে ৫-৬ মিনিট ঢেকে রাখুন। তারপর ঢাকনা খুলে কেওড়ার এসেন্স ও ১ টেবিল চামচ ঘি বা মাখনে ভাজা কাজু বাদাম দিয়ে নেড়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। ঢাকনা খুলে ওপর থেকে লেবুর রস ছিটিয়ে চুলা বন্ধ করে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট দমে রাখুন। সার্ভিং ডিশে বেড়ে ওপর থেকে বাকি কাজু বাদাম ও ডিম দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

No comments

Powered by Blogger.