সব স্থানীয় সরকার সংস্থায় নির্বাচন হোক- অনির্বাচিত জেলা পরিষদ নয়

আট মাস আগে জেলা পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু এখন তারা বলছে, নির্বাচনের চিন্তা মাথায় নেই। বর্তমান সরকারের মেয়াদে নির্বাচন আদৌ হবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।


সংবিধান অনুযায়ী, প্রতিটি স্থানীয় সরকার সংস্থা নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা। যেহেতু জনপ্রতিনিধিদের পাঁচ বছর পর জনগণের কাছে যেতে হয়, সেহেতু কিছুটা হলেও তাঁরা জবাবদিহি করতে বাধ্য হন। কিন্তু অনির্বাচিত প্রশাসকদের সেই বালাই নেই।
স্থানীয় সরকারকে অধিকতর শক্তিশালী করা বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। মেয়াদের সাড়ে তিন বছর পরও সেই অঙ্গীকার পূরণের কোনো লক্ষণ নেই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পেলেও অদ্যাবধি চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানদের হাতে দায়িত্ব পুরোপুরি ন্যস্ত করা হয়নি। একদিকে সাংসদ, অন্যদিকে আমলাতন্ত্র—দুই খড়্গের নিচে পড়ে উপজেলা পরিষদ ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের যেসব বিভাগ উপজেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করার কথা ছিল, তারও অবস্থা অনেকটা ‘কাজির গরু গোয়ালে নেই, কেতাবে আছে’। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় পরিষদকে কাজে না লাগালে এই পরিষদ রাখার যৌক্তিকতা কী?
জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের সময় বলা হয়েছিল, এটি সাময়িক ব্যবস্থা। আইন অনুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে প্রতিটি জেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। কিন্তু আট মাস পর দেখা যাচ্ছে, সরকার বা নির্বাচন কমিশন কেউ-ই নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। জেলা পরিষদের দায়িত্ব হলো জেলার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা। কিন্তু অনির্বাচিত জেলা পরিষদের পক্ষে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের কাজের তদারকি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে জেলা পরিষদ না থাকা রহস্যজনক। সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে নির্বাচন দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন কেন সরকারের সেই ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার হবে? তাদের দায়িত্ব সময়মতো প্রতিটি সংস্থার নির্বাচন করা।
দেশবাসী নির্বাচন কমিশনকে একটি কার্যকর, শক্তিশালী ও স্বাধীন সংস্থা হিসেবেই দেখতে চায়। সেটি তো নিছক মুখের কথায় হবে না। জেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করেই নির্বাচন কমিশনকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা স্বাধীন, কারও মুখাপেক্ষী নয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে না পারায় নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বহু বদনাম কুড়িয়েছে। সেই বদনামের পাল্লা আরও ভারী হওয়ার আগেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশিত।

No comments

Powered by Blogger.