২৫ জুয়াড়ি শনাক্ত বিমানবন্দরে সতর্কতা

বিশ্বকাপ ক্রিকেট সামনে রেখে সন্দেহভাজন ২৫ জুয়াড়িকে শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্বকাপ চলাকালে এরা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে জন্য বিমানবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এরই মধ্যে ২৫ জন বাজিকরের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক


টুকু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিসিবি ২৫ জনের পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি পাঠিয়েছে।
২৫ জুয়াড়ির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ১১ জনের তালিকায় রয়েছেন মুম্বাইয়ের বাজিগর জগদীশ সোদার, ভারতীয় নাগরিক অতনু দত্ত, হংকংয়ে বসবাসরত পাপু ভুটানি, ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা বরুণ গান্ধী, চেতন বালরাম ও বরুণ গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অরবিন্দ সিং খোসা। এ ছাড়া আছেন সুনীল পাশসামালাল ভাটিয়া, ব্রিটিশ নাগরিক রাজপাল অরোরা, অরুণ ভাট, সমীর খান্না ও রাহুল গুপ্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বকাপে ম্যাচ ফিঙ্ংি ঠেকাতে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি সম্প্রতি সন্দেহভাজন জুয়াড়ির তালিকা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে পাঠায়। ক্রিকেট বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তালিকাটি গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সংস্থার কাছে তালিকা হস্তান্তর করে এসব জুয়াড়ির ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে।
জানা গেছে, ১১ আলোচিত জুয়াড়ির মধ্যে অসীম খিতিরপালের বিরুদ্ধে ১৯৯৯-২০০০ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত একটি টেস্ট ম্যাচ ফিঙ্ংিয়ের অভিযোগ ওঠে। এ সময় তিনি একজন খেলোয়াড়কে তিন লাখ পাউন্ড দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে লন্ডন মেট্রো পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছিল। কিন্তু ওই যাত্রায় অসীম খিতিরপাল ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে রক্ষা পান। অভিযোগ রয়েছে, ২০০০ সালে জগদীশ সোদাকে সঙ্গে নিয়ে অসীম ইংল্যান্ডে তিন খেলোয়াড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে চেয়েছিলেন। পরে এ বিষয়ে তদন্ত করে সিবিআই। ভারতীয় পাসপোর্টধারী অসীম খিতির পাল ১৯৬০ সালের ২৬ এপ্রিল ভারতে জন্ম নেন। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর জি-৪৭৯১৭০২।
সন্দেহভাজন জুয়াড়ির তালিকায় রয়েছেন ভারতীয় নাগরিক অতনু দত্ত। কলকাতার বাসিন্দা অতনুর ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর-০০৯৬০০৪। ২০১০ সালে তিনি ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দলের খেলোয়াড়দের পেছনে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করেন। খেলোয়াড়রা অতনুর সন্দেহজনক আচরণের বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন।
পাপু ভুটানির জন্ম ভারতে। তবে থাকেন হংকং। সেখানে বসেই ম্যাচ পাতানোর কলকাঠি নাড়েন। জুয়েলারি ব্যবসা করলেও তাঁর মূল ব্যবসা ম্যাচ পাতানো। ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজাহরউদ্দিনকে দিয়ে ম্যাচ পাতানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভুটানি খেলোয়াড়দের উপঢৌকন ও টাকা দিয়ে খবর সংগ্রহ করেন।
চেতন বালরাম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও ম্যাচ নিয়মিত দেখেন। ভারতীয় এ নাগরিককে সন্দেহভাজন জুয়াড়ির তালিকায় রাখা হয়েছে। যিনি বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বাজি ধরার কাজটা করে থাকেন। চেতন বলরাম ২৩ জুলাই ১৯৭৩ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর এ-১৮৭১০৮৫।
ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা বরুণ গান্ধী দীর্ঘদিন ধরে ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। আর অরবিন্দ সিং খোসাকে ভারতীয় বাজিগর বরুণ গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজ পাল অরোরার জন্ম ভারতে হলেও তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। ইংল্যান্ডে বসবাসরত অরোরা টাকার বিনিময়ে খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমের খবর সরবরাহ করেন। সমীর খান্না, রাজীব শেঠি এবং দীপক পাণ্ডে নামের তিন বাজিকরের সহযোগী হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত। ইংল্যান্ডের পাসপোর্টধারী অরোরার পাসপোর্ট নম্বর-৮০১২১৩৭৮০।
সুনীল পাশসামালাল ভাটিয়া ভারতের নাগরিক। জন্ম ১৯৭২ সালে। থাকেন নাগপুরে। অত্যন্ত চতুর এ বাজিকরের পাসপোর্ট নম্বর জানা নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ভাটিয়া নিজেকে একজন ক্রিকেট পৃষ্ঠপোষক দাবি করলেও এটি সবার জানা, তিনি আরেক বাজিকর বাবুরাও যাদবের মাধ্যমে ম্যাচ ফিঙ্ংি করেন।
অরুণ ভাটের ডাকনাম অনু। ভারতের এই বাজিকর থাকেন নয়াদিলি্লতে। ভারতীয় পাসপোর্ট ধারণকারী এ বাজিকরের পাসপোর্ট নং এফ-৩১৯৪৯৭৮। বিভিন্ন দলে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ম্যাচকে প্রভাবিত করাতে তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রাহুল গুপ্তার সঙ্গে নিউজিল্যান্ড দলের খেলোয়াড়দের সম্পর্ক ভালো। অপর জুয়াড়ি সমীর খান্না থাকেন ভারতের হরিয়ানায়। এ বাজিকরের পাসপোর্ট নম্বর জে-০০৫১৪৪২। গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে রাজ অরোরা, রাজীব শেঠি ও দীপক পাণ্ডে নামে তিন বাজিকরের সঙ্গে সমিরের যোগাযোগ রয়েছে। এ দলটি এককভাবেও ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত।

No comments

Powered by Blogger.