পাঠকের মন্তব্য: অনলাইন থেকে- এভাবে জাতি মূর্খতার জালে আটকা পড়ছে

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এসব মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


দেশি মাছের বন্ধু সাহিদুর
শনিবারের এই বিশেষ প্রতিবেদনে বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের পোনা সংরক্ষণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ সম্পর্কে সেলিম লিখেছেন: বিদেশে থাকি। খুব ইচ্ছা করে, দেশে গিয়ে চলনবিলে, ডাকাতিয়া বিলে আর হাওরে দেশি মাছের পোনা ও মা-মাছ ছাড়ি। আর বিদেশি মাগুর, কই, পাঙাশের চাষ বন্ধ করি।
নাজমুস সাকিব: প্রতিবেদনটি অসম্পূর্ণ। আরও গুছিয়ে লিখতে হতো। আর কিছু তথ্য নেই যা মাছচাষিদের সাহায্য করতে পারত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা। দয়া করে আরও তথ্য প্রকাশ করবেন।
মহাতাফ হোসেন: ধন্যবাদ, সাহিদুর রহমান! আপনি শুধু দেশের তথাকথিত একজন নাগরিক নন, দেশের সম্পদও বটে। আমাদের দেশের সব নাগরিক যদি এমন হতো! মানুষের অর্বাচীনতা, অজ্ঞতা, ‘পচা ঘা’ রোগ ও প্রাকৃতিক বৈরিতার কারণে দেশ থেকে দেশি মাছ আজ প্রায় উঠে যেতে বসেছে। বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বর্তমানে ‘বিপন্ন প্রজাতি’র পর্যায়ে চলে গেছে বা যেতে বসেছে। সরপুঁটি, ভাদিপুঁটি, ঘনিয়া, নান্দিনা, লংগু, মহাশোল, শিলং, বাঘা আইড় প্রভৃতি মহাবিপন্ন প্রজাতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে; আরও বেশ কিছু প্রজাতির নাম এ তালিকায় উঠি উঠি করছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যদি সাহিদুর রহমানের মতো দেশি মাছবান্ধব মানুষের আগমন না ঘটে, তবে এ মহাবিপর্যয় ঠেকানোর কোনোই পথ দেখছি না।

ঈদে বাড়ি গেলে ঘরে তালা লাগিয়ে যাবেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের এই বক্তব্যে পাঠকের মধ্যে ভীষণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে, যা ফুটে উঠেছে প্রথম আলো ডটকমে তাঁদের পাঠানো বিপুলসংখ্যক মন্তব্যে। পাঠক এম এ কিউ মজুমদার লিখেছেন: মন্ত্রী মহোদয়, আপনি কি ঢাকায় বসবাস করেন, নাকি অন্য ভুবনে? ঘরভর্তি মানুষ থাকা অবস্থায়ও ঢাকার বাসিন্দারা ঘরে তালা দিয়ে রাখে, তার পরও চুরি-ডাকাতি-হত্যা ঠেকানো যায় না। আর ঘর থেকে বের হলে তো কথাই নেই। মানুষ পারলে তাদের ঘর লোহার সিন্দুকে ভরে হাজারটা তালা লাগায়। ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলে ঘরে তালা লাগিয়ে যাবেন—এ ধরনের উপদেশ দিয়ে আপনি কি মানুষের সঙ্গে খুব বড় তামাশা করলেন না?
শফিকুল ইসলাম: আমি তো ভাবলাম, এবার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সময় ঘরে তালা দেব না, শুধু বেডরুমে তালা দেব; কারণ, উনি তো কারও বেডরুমের নিরাপত্তা দিতে পারবেন না!
পবিত্র চক্রবর্তী: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘরে তালা লাগানোর অভ্যাস নেই বোঝা যাচ্ছে। জনগণ থেকে কত দূরে চলে গেলে এ ধরনের উক্তি করা যায়! এত অনভিজ্ঞতার পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা আমাদের শাসন করেই যাবেন, আমরা শাসিত হয়েই যাব!

খালেদা জিয়ার ভুল
‘কালের পুরাণ’ কলামে বিষয়টি তুলে ধরেছেন সোহরাব হাসান। এ সম্পর্কে আবদুল মজিদ কাজী লিখেছেন: ৪০ বছরে রাজনৈতিক সরকার যে কাজ করতে পারেনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছরে সে কাজ (ছবিসহ ভোটার তালিকা) করতে পেরেছে। অতিরিক্ত ১৮ মাস আর ৪০ বছরের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও অনেক ভালো কাজ করেছে—তার মধ্যে পুকুর চুরি, সাগর চুরি আর মহাসাগর চুরির নায়ক-নায়িকাদের চরিত্র জনগণের কাছে উন্মোচন করে গেছে।
হানিফ: ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তেমনি আমাদের নেতারা ক্ষমতায় থাকতে তাঁদের ভুলগুলো দেখতে পান না। দূরদৃষ্টির অভাব।

উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্প: আইন ভেঙে সরকারের সঙ্গে দুই সাংসদের ব্যবসা
শাসক দল আওয়ামী লীগের দুই সাংসদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ছিল নেতিবাচক। পঙ্কজনাথ লিখেছেন: সাংসদ হওয়া মানেই টাকার খনির সন্ধান পাওয়া। আর সেই সাংসদ যদি হন সরকারি দলের, তাহলে তো কোনো কথাই নেই—সব ধরনের লুট, দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাচার তাঁর জন্য বৈধ! একবার সরকারি দলের সাংসদ হলেই তাঁর চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারে। স্বাধীনতার পর থেকেই এ ধারা চলে আসছে।
জাহীদ হাসান: আইন তো সরকারি দলের লোকদের বেলায়, বিশেষ করে রাজনৈতিক সরকারের লোকদের বেলায় প্রযোজ্য হতে পারে না। আওয়ামী লীগের লোকেরা আইনের ঊর্ধ্বে। তাঁরা আইনপ্রণেতা। তাঁরা সাধারণ ও নিরীহ মানুষের ওপর আইন প্রয়োগ করবেন, আর দেশ ও মানুষের টাকা লুটপাট করবেন—এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া ৭৯টি ভবনের সাড়ে ছয় হাজার ফ্ল্যাটের এ প্রকল্প ‘আওয়ামী লীগ পল্লি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই ফ্ল্যাটগুলো আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এর বাইরে কোনো লোক পাবে বলে আশা করি না। জয় হোক আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের, জয় হোক নৈতিকতার।
এম শওকত আলী: এই এক আজব দেশ! সত্যিই ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’। বলতে বাধ্য হচ্ছি, আইনকানুনের সব বই-পুস্তক পুড়িয়ে ফেলা হোক। তাহলে আর আমাদের কোনো দুঃখ থাকবে না। সংবিধান থেকেও ‘দেশের সকল নাগরিক সমান’—এ বিধান মুছে ফেলা হোক। এগুলো স্রেফ বিবেকবান মানুষের মর্মযাতনা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো কাজেই আসছে না। আইনপ্রণেতারা এ দেশে আইনের রক্ষক নন, বরং মহাভক্ষক। ভবিষ্যৎ কী এ দেশের?

ফেসবুকের ছায়াবন্ধু, নাকি সামনের কায়াবন্ধু!
‘গদ্যকার্টুন’ কলামে লেখক আনিসুল হক বিষয়টি সামনে এনেছেন। এ সম্পর্কে তাজিন মাহবুব আহমেদ লিখেছেন: অসাধারণ একটি লেখা। বর্তমান প্রজন্মের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। ভার্চুয়াল জগৎ কাছের মানুষকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, আবার অজানা সুদূরের মানুষকে কাছে নিয়ে আসছে। মানুষের জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন আসছে। বেশির ভাগ সময় বিষয়টি ক্ষতিকর প্রভাব ফেললেও কখনো কখনো ইতিবাচক ও কল্যাণকরও হচ্ছে।
মো. জাহিদুল ইসলাম: ভালো লাগল লেখাটি পড়ে। তা-ও যদি তরুণ প্রজন্ম কিছু শেখে। আমি আশা করব, লেখক শুধু লিখেই ক্ষান্ত হবেন না। এই ফেসবুক ম্যানিয়া পরিমিত মাত্রায় রাখতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। লেখক চাইলে আমিও কাজ করতে পারি একসঙ্গে।
সুমন আহমেদ: অনেক অনেক ধন্যবাদ, স্যার। আমাদের নির্দয় বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন। একসময় যারা বই পড়ে সময় পার করত এক দারুণ মুহূর্তের মধ্য দিয়ে, তারা এখন ফেসবুকে সময় কাটাচ্ছে। এভাবে জাতি মূর্খতার জালে আটকা পড়ছে। ফেসবুক এখন একটি মহাপ্রতারণার কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.