যে খবর নাড়া দেয়-পথের দাবি

ভোরবেলা বেরিয়েছিলাম। গাজীপুর না পুবাইল, কোথায় যেন যাব বলে। ভোরবেলাটা ভারি মনোরম যাদের দেরিতে ঘুম থেকে জাগার অভ্যাস, তারা হয়তো জানেই না দিনের সুন্দরতম সময়টা চলে যায় তারা দিন শুরু করার আগেই। বাতাসে দূষণ সবচেয়ে কম মাত্রায়। মানুষজনের ভিড়ভাট্টা নেই।


যানজট নেই। কাঠফাটা রোদ্দুর নেই। প্রশান্তি চারপাশ ঘিরে থাকে। বছর দুয়েক আগের ভোরবেলাটাও ঠিক তেমনি ছিল। ধানমন্ডি পেরিয়ে আমরা চলে এসেছিলাম সংসদ ভবন অবধি। সংসদ ভবনের সামনের খোলা মাঠ, সবুজের সমারোহ চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছিল। এর মধ্যেই কেউ একজন চাপা কণ্ঠে বলল, ‘অ্যাকসিডেন্ট। মারা গেছে।’ ভোরবেলার প্রশান্তিটুকু নিমেষে খানখান। হাঁটতে বেরিয়েছিল মানুষটা। এখন শুয়ে আছে নিশ্চুপ। রক্তের ছোটখাটো পুকুর তাকে ঘিরে। একটা বাস ধাক্কা দিয়ে ভোরবেলার হাঁটার আনন্দ চিরতরে মাটি করে দিয়েছে অজানা পথচারীর। সেদিনকার সেই দৃশ্য আবার চোখে ভাসল ভেতরের পাতার ছোট খবরটা দেখে। নিরাপদে হাঁটার অধিকার চেয়ে র‌্যালি ও কফিন মিছিল করেছে ১১টি বেসরকারি সংগঠন। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৭ মে, ২০১২)।
মানুষের ঠেলা-গুঁতো। যত্রতত্র মলমূত্র। ফুটপাতের ওপর তেলেভাজা কিংবা কাপড়চোপড়, ফলের দোকান। খোলা ম্যানহোল। কখনো বা ফুটপাত বেয়ে চলমান মোটরসাইকেলের ধাক্কা। সংক্ষেপে রাজধানীতে এই আমাদের হন্টন অভিজ্ঞতা। তবে এসব শুধুই নিত্যকার ঝামেলা। বড়সড় বিপদের পরিসংখ্যান শুনুন—ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত একজন পথচারী মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। চিরতরে পঙ্গু হয় কতজন, তার কোনো লেখাজোকা নেই।
ফুটপাতে ঝামেলা দেখে একটুখানি রাস্তা ঘেঁষে হাঁটবেন? চালকের ক্ষণিকের ভুল আপনাকে নিয়ে যাবে পরপারে। প্রিয় ঢাকাবাসী, এইবার কি মনে হচ্ছে, নিরাপদে হাঁটার দাবির র‌্যালিটা আরও দীর্ঘ হওয়া দরকার ছিল? অথবা র‌্যালির খবরটা ভেতরের পাতার টুকরো খবর না হয়ে আরও বড় হতে পারত?
—ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.