নেপথ্যের হোতাদের খুঁজে বের করুন-বিজি প্রেস কেলেঙ্কারি

রংপুরে মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র জালিয়াতেরা ধরা পড়লেও এর জাল যে কত দূর বিস্তৃত, সে রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। কয়েকজন নিম্ন-বেতনভুক্ত কর্মচারী গ্রেপ্তার ও বিজি প্রেসে লুকিয়ে রাখা ২৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হলেও রাঘববোয়ালরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই।
সরকারি প্রেসে রাষ্ট্রের সব জরুরি কাগজপত্র ছাপা হয়, যার মধ্যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও রয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে এ ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও কোনো অপরাধীর ধরা না পড়া বা শাস্তি না হওয়া উদ্বেগজনক।
কেন বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে? সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে এর নেপথ্যে কারা আছে? গুটিকয়েক নিম্ন-বেতনভুক্ত কর্মচারীর পক্ষে এত বড় জালিয়াতি করা সম্ভব নয়। এর আগে বেশ কয়েকবার বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ছাপার ক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়। কোন সেট প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তা পরীক্ষক ছাড়া কাউকে জানানো হয় না। এ ক্ষেত্রে কি বিকল্প প্রশ্ন তৈরি করা হয়েছিল? না হলে কেন হয়নি, তার উত্তরও খুঁজে বের করা জরুরি। এবারে জালিয়াত চক্র শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁসই করেনি, তারা সেই প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষার মহড়াও দিয়েছে। কয়েক শ পরীক্ষার্থীকে রংপুরে নিয়ে গিয়ে উত্তর মুখস্থ করিয়েছে। বিজি প্রেসের কাজকর্মে যেমন গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়, তেমনি প্রতিষ্ঠানটি একটি সংরক্ষিত এলাকা, যথাযথ অনুমোদন ছাড়া কোনো কিছু বের করে নেওয়া বা কোনো কিছু নিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ট্রাংকভর্তি ২৮ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। টাকাভর্তি একটি ট্রাংক ঢুকল কীভাবে? ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক একজনের ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে ৯৫ লাখ টাকা। তিনি বিজি প্রেসের এক কম্পোজিটরের ভায়রা।
এই ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে জালিয়াত চক্র বারবার অপকর্ম চালানোর সুযোগ পেয়েছে। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, সাত বছর ধরে একটি চক্র এ ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। এর আগে যখন প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, তখন যদি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তবে ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারত না। পুলিশ জানতে পেরেছে যে ছয়-সাতজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ১৫-২০ জন কর্মচারী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পর তদন্ত ও দোষীদের খুঁজে বের করতে এ পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপ আশাব্যঞ্জক। আমরা আশা করব, দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও শাস্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় বা হেলাফেলার সুযোগ নেই।
একই সঙ্গে বিজি প্রেসের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করার বর্তমান যে পদ্ধতি, তাকেও ঢেলে সাজানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। বিজি প্রেসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ব্যবস্থা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আশা করব, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে।

No comments

Powered by Blogger.