লবণের মূল্যহ্রাস-নিত্যপণ্য নিয়ে কেন ছিনিমিনি খেলা?

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর লবণ মার্চ বা লবণ সত্যাগ্রহ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। লবণ বাণিজ্যে ব্রিটিশ কোম্পানির মনোপলির প্রতিবাদে এবং স্থানীয় উৎপাদকদের ওপর অতিরিক্ত করারোপের বিরুদ্ধে অহিংস আইন অমান্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।


এই আন্দোলন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেছিল। শুধু লবণ সত্যাগ্রহই নয়, উপমহাদেশের রাজনীতিতে লবণ আরও বহুবার গণআন্দোলনের বিষয় হয়ে উঠেছে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের আগে লবণের দাম ১৬ টাকা উঠেছিল। বলা হয়ে থাকে, সে নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয় আর মুসলিম লীগের পরাজয়ের পেছনে লবণের মূল্যবৃদ্ধি ছিল অন্যতম কারণ। বাঙালির খাদ্য তালিকায় লবণ চাহিদা সামান্য কিন্তু আবশ্যিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। এর দাম নিয়ে কোনো কারসাজি মানুষ সহ্য করতে রাজি নয়। প্রতিদিনের রান্নায় খুব সামান্য পরিমাণে লবণ দরকার হয় কিন্তু ওইটুকু দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বাঙালির উৎকণ্ঠা সীমাহীন। স্বাভাবিকভাবেই সম্প্রতি লবণের বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তা সরকারকে চিন্তিত করে তুলেছিল। জনসাধারণের মধ্যেও প্রচুর ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ ভারতে মনোপলির শিকার হয়েছিলেন ক্রেতারা, কিন্তু বর্তমানে বাজারে গিয়ে বাংলাদেশের ক্রেতারা অনেক ক্ষেত্রেই অলিগোপলির শিকার হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বহু পণ্যের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কোনোভাবে সরবরাহে কমতি পড়ার লক্ষণ দেখা দিলেই মূল্যবৃদ্ধির ঘোড়া ঊর্ধ্বগামী হতে থাকে। লবণের বাজারে খবর হলো, বছরের চাহিদা ১৫ লাখ টন। দেশের লবণচাষিরা উৎপাদন করছেন ১২ লাখ টনের কাছাকাছি। এ ঘাটতির অজুহাতে দাম বেড়ে চলছিল। বাড়তে বাড়তে গত কয়েক মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতিটি ছিল উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় সরকার লবণের ঘাটতি পূরণের সিদ্ধান্ত নেয়। ৩০ জুন পর্যন্ত লবণের আমদানি উন্মুক্ত করে দেয় সরকার। ব্যবসায়ীরা ২ লাখ টনের বেশি লবণ আমদানির এলসিও খোলেন। কিন্তু বাজারে তৎক্ষণাৎ কোনো সন্তোষজনক প্রভাব পড়েনি। এখন ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা জানিয়েছেন, কেজিপ্রতি ৩ টাকা দাম কমানো হবে। বিষয়টি ইতিবাচক। এতে স্পষ্ট যে, ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত লাভ করছিলেন। ভোক্তাদের পকেট দিনের পর দিন কাটার পরেই কেবল তারা 'সদিচ্ছা' দেখাবেন বলছেন। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করতে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, লবণের দাম যেখানে কয়েক মাসেই দ্বিগুণ হয়ে গেল সেখানে ৩ টাকা দাম কমানো কি যথেষ্ট? আমদানি করার পর চাহিদা অনুসারে ঘাটতি থাকার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে পূর্বের দামে না হোক তার কাছাকাছি কেন পেঁৗছতে পারবে না লবণের দাম? এত মুনাফার যুক্তি কোথায়? শুধু লবণই নয়, সম্প্রতি অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে। রমজান সামনে রেখে তারা সক্রিয়। এসব পণ্যের দিকেও সরকারের দৃষ্টি পড়া দরকার। বাজারে অলিগোপলি সক্রিয় থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সরকারের তরফে থাকতে হবে। নইলে বাজার নিয়ন্ত্রণ বরাবরের মতোই কঠিন হবে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপট-দৌরাত্ম্যে জনমতও বিগড়ে যাবে।
 

No comments

Powered by Blogger.