অপুষ্টির উদ্বেগজনক চিত্র-সমস্যা গরিবের, দায় রাষ্ট্রের

যে শিশুটি অপুষ্টির কারণে ধুঁকে ধুঁকে মরে গেল তার জন্য শোক-দুঃখ ও কষ্টবোধ কেবল আপনজনের। সমাজ ও রাষ্ট্র হয়তো এ ক্ষতিকে তেমন আমল দেয় না। কিন্তু যে শিশুটি অপুষ্টিকে জীবনসাথী করে বড় হচ্ছে, তার বিষয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র না ভেবে পারে না।


এমনকি অপুষ্টির শিকার হয়ে ঝরে পড়াদের ক্ষেত্রেও রাষ্ট্র ও সমাজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাখা সাজে না। কারণ আজ যে শিশু সেই তো আগামী দিনের শ্রমজীবী, কর্মজীবী পেশাজীবী। অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে। আর তাদেরই একটি অংশ যদি অপুষ্টির মধ্যে বড় হয় তাহলে তাদের মেধার উপযুক্ত বিকাশ হয় না এবং কায়িক শ্রম করার যথেষ্ট শক্তিও তাদের থাকে না। মেধার উপযুক্ত বিকাশ না হলে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন সাফল্য পায় না। ফলে তাদের ভাগ্যে ভালো কর্মসংস্থানও জুটে না। এ কারণে তাদের অধিকাংশের পারিবারিক জীবন হয় একেবারেই আটপৌরে তথা অসচ্ছলতার মধ্য দিয়েই চলে তাদের। অথচ শিশু বয়স থেকে উপযুক্ত পুষ্টি পেলে তারা যেমন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারত, তেমনি তারা শিক্ষা-দীক্ষায় নিজের, পরিবারের ও জাতির জন্য অনেক সাফল্য বয়ে আনতে সক্ষম হতো। ইউএসএআইডি পরিচালিত দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনে অপুষ্টি কীভাবে আমাদের জাতীয় ক্ষতির কারণ হচ্ছে তা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করে দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার সমকালে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে গবেষণা তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, অপুষ্টির কারণে প্রতি বছর প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের ক্ষতি হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, ব্যক্তির অপুষ্টি জাতীয় বিরাট ক্ষতির কারণ হয়। অথচ বছরে ৯শ' থেকে এক হাজার কোটি টাকা শিশু পুষ্টি খাতে ব্যয় করলে এ সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে সমাধান করা সম্ভব।
গবেষণা তথ্য থেকে আরও জানা যায়, অপুষ্টির শিকার অধিকাংশ শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাদের একটি অংশ অকালে ঝরেও পড়ে। অথচ সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিলে শিশু অপুষ্টি দূর করা সম্ভব। তবে এ জন্য সরকারের সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি সংস্থা ও সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.