চরাচর-বৃক্ষের কী গুণ! by আজিজুর রহমান

সব প্রাণীর জীবনধারণের জন্য বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষ একদিকে যেমন খাদ্যপুষ্টি, ওষুধ, কাঠ ও জ্বালানির জোগান দিচ্ছে, অন্যদিকে বায়ু ও তাপের সমতা বজায়, খরা ও অতিবৃষ্টি রোধ, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে।


প্রাণিকুলের জীবনধারণের জন্য বৃক্ষ আরো বড় ধরনের যে কাজটি করে থাকে, তা হলো মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর প্রশ্বাস এবং কলকারখানা ও যান্ত্রিক যান থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড ও বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করে, সেসব শুষে নিয়ে বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখে। পাশাপাশি অক্সিজেন ছেড়ে প্রাণিকুলকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে। এ জন্য বৃক্ষকে বলা হয় অক্সিজেন উৎপাদন ও বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখার প্রাকৃতিক কারখানা।
৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি বৃক্ষ কী পরিমাণ আর্থিক সুবিধা দেয়, কয়েক বছর আগে ভারতীয় বিজ্ঞানী-গবেষকরা সে সম্পর্কে যে হিসাব দিয়েছিলেন তা এমন_বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশকে রক্ষা করে ১০ লাখ টাকার, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় পাঁচ লাখ টাকার, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় পাঁচ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা শক্তি বাড়িয়ে বাঁচায় পাঁচ লাখ টাকা, গাছে বসবাস করা প্রাণীর খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় পাঁচ লাখ টাকা, আসবাব, জ্বালানি কাঠসহ ফল সরবরাহ করে পাঁচ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন জীবজন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় আরো ৪০ হাজার টাকা (সূত্র : ইন্ডিয়ান ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট)।
বৃক্ষের প্রধান একটি কাজ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে তাতে বিশুদ্ধ অক্সিজেন যোগ করা। একটি পিপুল গাছ, যার মাথা ১৬২ বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত, সেটি ঘণ্টায় এক হাজার ৭১২ কেজি অক্সিজেন বাতাসে যোগ করে। আর বাতাস থেকে টেনে নেয় দুই হাজার ২৫২ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড। একটি ৫০০ মিটার চওড়া সবুজ এলাকা বাতাসে জমে থাকা সালফার ডাই-অক্সাইডের ৭০ শতাংশ শুষে নিতে পারে। একটি গাড়ি ২৫ হাজার কিলোমিটার পথ চলে যে দূষণ সৃষ্টি করে, একটি বড় গাছ তার সবটাই শুষে নিতে পারে। এক হেক্টর পাইন বন বাতাস থেকে প্রতিবছর ৩৬ টন বিষাক্ত গ্যাস, ধুলো-ময়লা মুক্ত করতে সাহায্য করে। এক হেক্টর বিচ বৃক্ষের বন প্রায় ৬৮ টন দূষিত বাতাস প্রতিবছর বিশুদ্ধ করে। পৃথিবীর প্রায় এক হাজার ৪০০ বৃক্ষ প্রজাতিরই ক্যান্সার নিরাময়ের ক্ষমতা রয়েছে। রোগ বহনকারী ব্যাকটেরিয়া বনের নির্মল বাতাসের সংস্পর্শে এলে বিশুদ্ধ হয়ে যায়। রক্ত আমাশয়ের জীবাণু ম্যাপল বৃক্ষের সংস্পর্শে এলে তা মরে যায়। বৃক্ষের গুণের তথ্য আমরা কিছুটা হয়তো জেনেছি, কিন্তু আরো অজস্র তথ্য হয়তো এখনো অজানাই রয়ে গেছে।

আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.