পবিত্র কোরআনের আলো-সত্য ও ন্যায়ের প্রতি বিদ্রোহীদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম

১০। ইন্না ল্লাযীনা কাফারূ লান তুগনিয়া আ'নহুম আমওয়া-লুহুম ওয়ালা- আওলা-দুহুম্ মিনা ল্লা-হি শাইয়ান; ওয়াউলা-ইকা হুম ওয়াক্বূদুন্না-র। ১১। কাদা'বি আ-লি ফিরআ'ওনা ওয়াল্লাযীনা মিন্ ক্বাবলিহিম; কায্যাবূ বিআ-ইয়া-তিনা-; ফাআখাযাহুমু ল্লা-হু বিযুনূবিহিম; ওয়াল্লা-হু শাদীদুল ই'ক্বা-ব।


১২। ক্বুল লিল্লাযীনা কাফারূ ছাতুগ্লাবূনা ওয়াতুহ্শারূনা ইলা- জাহান্নামা ওয়াবি'ছাল মিহাদ। [সূরা : আল ইমরান, আয়াত : ১০-১২]
অনুবাদ : ১০। যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর ওপর অর্থাৎ সত্য ও ন্যায়ের ওপর ইমান আনতে অস্বীকার করেছে, তাদের ধন-সম্পত্তি এবং সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর দরবারে তাদের বাঁচানোর জন্য কোনো উপকারেই আসবে না। এরা জাহান্নামের জ্বালানি হবে।
১১। তাদের পরিণতি হবে ফারাওদের বংশধর এবং তাদের পূর্ববর্তী নাফরমান জাতির মতো। তারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। অতএব, তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদের পাকড়াও করেছিলেন। পাপীদের শাস্তি প্রদানে আল্লাহতায়ালা অত্যন্ত কঠোর।
১২। (হে নবী) যারা আল্লাহ ও তার সত্য এবং ন্যায়কে অস্বীকার করে, তাদের আপনি বলে দিন, অচিরেই তোমরা পরাজিত হবে, আর পরিণতিতে তোমাদের জাহান্নামের আগুনের কাছে জড়ো করা হবে। এই জাহান্নাম হচ্ছে অতি নিকৃষ্ট ঠিকানা।
ব্যাখ্যা : ১২ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছে বিশেষভাবে ইহুদিদের উদ্দেশ্য করে। এর আগের ১০ ও ১১ নম্বর আয়াত দুটিও অনুরূপ প্রসঙ্গ ধরেই নাজিল হয়েছে। বদরের যুদ্ধে জয়লাভের পর রাসুল (সা.) কায়নুকার বাজারে ইহুদিদের একত্রিত করে একটি বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, 'কোরাইশরা আমাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য মদিনা আক্রমণ করতে আসছিল, কিন্তু তারা আমাদের কাছে পরাজিত হয়ে গেছে। আপনারা (ইহুদিরা) কোরাইশদের সঙ্গে সখ্য রাখেন, তাদের পথ চেয়ে বসেও থাকেন। আপনাদের অবস্থা তাদের মতো হওয়ার আগেই সত্য ও ন্যায়কে গ্রহণ করুন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর পথে আসুন।' তখন ইহুদি নেতারা বলল, 'কোরাইশরা ছিল যুদ্ধে অনভিজ্ঞ, তাদের পরাজিত করতে পেরেছেন বলেই আপনি ভুল ধারণায় পড়ে থাকবেন না। আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে বুঝতে পারবেন পরাজিত কারা হয়। আল্লাহর শপথ, আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে আপনারা পরাজিত হবেন। কারণ আমরা কোরাইশদের চেয়ে অনেক অভিজাত এবং যোদ্ধা জাতি। আমাদের মতো যোদ্ধা জাতির সঙ্গে আপনার এখনো কোনো যুদ্ধ হয়নি, এ জন্যই আপনি বুঝতে পারছেন না।' তাদের এসব কথার উত্তরেই আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)-কে স্পষ্ট করে বলে দিতে বলেন যে তোমরা পরাজিত হবে। আর এই পরাজয়ের ধারাবাহিকতায়ই তোমাদের জাহান্নামের আগুনের পাশে জড়ো করা হবে।
এর আগের দুটি আয়াতে কাফের বা সত্য পথ অস্বীকারকারীদের করুণ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। যারা সত্যকে অস্বীকার করছে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর পথকে অস্বীকার করছে, তাদের বিত্তবৈভব যত বেশিই দেখা যাক, ধনবল এবং জনবলের যত প্রাচুর্যই তাদের দেখা যাক, এসব ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্তুতি তাদের কোনো কাজেই আসবে না। ১১ নম্বর আয়াতে তাদের জন্য প্রাচীনকালের উদাহরণ সামনে আনা হয়েছে। ফারাও সম্রাটদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ এবং বনি ইসরাইল বংশোদ্ভূত আল্লাহ নবীদের সঙ্গে লড়াইয়ে তাদের পরাজয়ের কাহিনীর ইঙ্গিত এখানে দেওয়া হয়েছে। ফারাওদের সঙ্গে ইহুদিদের সংগ্রামের কাহিনী উল্লেখ করেই এখানে ইহুদিদের সত্য পথ অনুসরণ করার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আল্লাহর আয়াতগুলোকে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চায়, সেই পাপিষ্ঠদের প্রতি আল্লাহতায়ালা যে ভীষণ কঠোর_এ কথাই এখানে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.