সিলিন্ডার গ্যাসে ভর্তুকি-লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়

বাংলাদেশে রান্নার জ্বালানির জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবিধা রাজধানী ঢাকাসহ সীমিত কয়েকটি শহরে সীমাবদ্ধ রয়েছে। যারা গ্যাসের সরবরাহ পেয়েছেন তাদের ঘরে যেন সোনার হরিণ হাজির। এ সুবিধার জন্য ব্যয়ের পরিমাণ সিলিন্ডার কিংবা জ্বালানি কাঠ বা কেরোসিনের তুলনায় নামমাত্র।


পাইপলাইনে গ্যাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় অনেককেই সরকারি ও বেসরকারি খাতের এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান যে এলপি গ্যাস সরবরাহ করে তাতে ভর্তুকি প্রদান করা হয়। কিন্তু লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায় যে! সরকারি ভর্তুকি সুবিধা গ্রাহকরা পাচ্ছেন না_ এমন খবর সমকালে প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'এলপিজির ভর্তুকির টাকা যাচ্ছে ডিলারদের পকেটে'। ডিলার ও ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে ভর্তুকির অর্থ নিজেরা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকার জনসাধারণের স্বার্থের দিকটি বিবেচনায় রেখে এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীদের সিলিন্ডারপ্রতি ৪০০ টাকা ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। কিন্তু অতি মুনাফার ফেরে পড়ে ভর্তুকির অর্থ পুরোটাই সংশ্লিষ্ট ডিলার এবং এর সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের পকেটস্থ হচ্ছে। এতে সরকার এবং গ্রাহক উভয়েই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এলপি গ্যাস কম উৎপাদিত হয়। এ কারণে বাজারে সংকট রয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে সরকার ৭০০ টাকায় যে সিলিন্ডার সরবরাহ করতে বলছে, তার জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অনেক বেশি দাম। সরকারি তদারকি ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার কৌশলও ডিলার ও সংশ্লিষ্টদের জানা। তারা সরকারি সিলিন্ডারের গ্যাস বেসরকারি প্লান্টের সিলিন্ডারে বিক্রি করছে। চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যতদিন না সামঞ্জস্য বিধান করা যাচ্ছে ততদিন এ ক্ষেত্রের নৈরাজ্য দূর হওয়া দুরূহ। সরকার ইতিমধ্যে আরও দুটি বড় এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তা উৎপাদনে যেতে ২০১৪ সাল লেগে যাবে। ততদিন কি এ অরাজকতা চলতে থাকবে? এটাও মনে রাখতে হবে সিলিন্ডারের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অন্যদিকে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাসের জোগান প্রায় বন্ধ রয়েছে। কবে নতুন করে সরবরাহ করা হবে সেটা অনিশ্চিত। এ অবস্থায় সিলিন্ডার গ্যাসের ওপর চাপ বাড়ছে এবং অসাধু ডিলার চক্র এ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। সরকারকে এ বাড়তি চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরও এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের বিকল্প নেই। এজন্য বেসরকারি খাতে এলপিজি উৎপাদন বৃদ্ধিকেও উৎসাহিত করতে হবে। তাদের প্রণোদনাও দিতে হবে। তবে একই সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি করে গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলতে না পারে সে বিষয়টিও তদারকি সংস্থাকেই দেখতে হবে। যতদিন চাহিদা ও জোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান না হচ্ছে ততদিন একে শুধু বাজার ব্যবস্থার ওপর সমর্পণ করা উচিত হবে না। তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল অপরিহার্য। একই সঙ্গে চাই অপরাধের কঠোর শাস্তি। কেবল অসাধু ডিলারদের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। ভুললে চলবে না যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরেও রয়েছে দুর্নীতিবাজ চক্র। এলপিজি খাতে সরকারি ভর্তুকির অর্থ যাতে গ্রাহকরা না পান সে জন্য তাদের কারসাজি থাকা স্বাভাবিক। কারণ এতে রয়েছে নগদ লাভ।
 

No comments

Powered by Blogger.