এত নগ্ন কায়দার লুটপাট চলতে পারছে কাদের প্রশ্রয়ে?-এলপি গ্যাসের বাজার

বিভিন্ন খাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির তুলনায় এলপি গ্যাস বিক্রয়ে ১৫০ কোটি টাকা লুটপাট খুব বড় ব্যাপার নয়। টাকার অঙ্কের থেকে এখানে বড় হয়ে ওঠে লুটপাটের কায়দাকানুন। এত খোলামেলা লুটপাট বছরের পর বছর চলে আসতে পারায় বোঝা যায়, এই খাতে লুটপাটই এখন নিয়ম হিসেবে চালু আছে।


সোমবারের প্রথম আলোর একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরকারি এলপি গ্যাসে বছরে ১৫০ কোটি টাকা লুটপাট হয়ে থাকে। সরকারিভাবে উৎপাদিত এই গ্যাস সিলিন্ডারে করে বিক্রি হয় কেবল রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে। উৎপাদনমূল্য এক হাজার ১০০ টাকা হলেও সরকার-নির্ধারিত বিক্রির দাম ৭০০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি সিলিন্ডারে ভর্তুকি পড়ে ৪০০ টাকা। কিন্তু বাজারে এর দাম প্রায় এক হাজার ২০০ টাকা। এভাবে প্রতি সিলিন্ডারে ৫০০ টাকা কার্যত গ্রাহকদের কাছ থেকে লুটে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সরকারের ভর্তুকি গ্রাহকদের উদ্দেশে হলেও তা ভোগ করে মূলত বিপণনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। জনগণের করের টাকা এভাবে জনগণের নামে কার্যত একশ্রেণীর ব্যবসায়ীকে আঙুল ফুলে কলাগাছই করছে। অন্যদিকে, বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারের দামের ব্যাপারেও সরকারের তদারকি নেই। এই গ্যাস বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায়। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি-সংকট এভাবে এলপি গ্যাসের দুর্বৃত্ত বাজারকে আরও চাঙাই করছে।
দিনের পর দিন এটা চলতে পারছে কারণ, সরকারের একদল কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত। লাভের একটা ভাগ নিশ্চিতভাবেই তাঁরা পেয়ে থাকেন।
দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি-সংকট, জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রতারণা কোনোভাবেই তাই ছাড় পেতে পারে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সরকারি তেলের ডিপো থেকে লাখ লাখ গ্যালন তেল চুরির ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এসব ঘটনায় স্পষ্ট যে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের উৎপাদন ও বিপণনপ্রক্রিয়ার মধ্যে মস্ত বড় এক লুটেরা চক্র ঘাঁটি গেড়ে বসেছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় নিয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। নিজের হাত পরিষ্কার করতে হলে এলপি গ্যাস বিক্রির বিষয়টি আগে তাদের পরিষ্কার করতে হবে। এই মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনের সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করা জাতীয় স্বার্থেই জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.