গাফিলতির দায়সরকারের by তানভিরুল হক

ঢাকার আবাসন ও নগরপরিকল্পনা নিয়ে সব সরকারের আমলেই অনেক বৈঠক হয়েছে। কিন্তু পূর্ত মন্ত্রণালয়ে সরকার, নগরবিশেষজ্ঞ ও রিহ্যাবের সদস্যদের সাম্প্রতিক বৈঠকে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা দুঃখজনক। এমনটি আগে কখনো দেখিনি।


সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা মহানগরের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ডিটেলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ চূড়ান্ত করা নিয়ে। পরিকল্পনায় সমস্যা থাকতে পারে, কিন্তু তার চেয়ে বড় সমস্যা সময়ের কাজ সময়ে না হওয়া। নিয়ম হলো আগে পরিকল্পনা প্রণীত হবে, পরে সে অনুযায়ী কাজ হবে। ড্যাপ তো বহু আগেই চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিষয়ে তোড়জোড় হয়; এবং বলা হয়, ২০০৮ সালেই কাজ শেষ হবে, কিন্তু হয়নি। ড্যাপ বাস্তবায়িত হলেও রিভিউ করার ক্ষমতা কি সরকারের আছে? সরকারের এসব গাফিলতির দায় কেন ব্যবসায়ীরা নেবেন? একটা সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরের নির্বাচন নিয়ে ভাবতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কোনো কিছু করার সময় ও মনোযোগ অনেক সময় তারা দিতে পারে না। এর জন্যই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
পরিকল্পনাহীনতার মধ্যবর্তী সময়ে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন তো বন্ধ থাকেনি। এখন যেহেতু পরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে, সরকারকে ডেভেলপারদের সঙ্গে বসে সমঝোতায় আসতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেখানে যার ক্ষতি, তাকে সেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। এটা পারস্পরিক আলোচনার ব্যাপার। সব কাজ গায়ের জোরে হয় না এবং ডেভেলপারদের একচেটিয়াভাবে দোষারোপ করাও যৌক্তিক নয়।
আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদনের প্রশ্ন এখন আসছে। এটা হয়েছে ২০০৪ সালের পর, আগে তা লাগত না। তাই এর আগের প্রকল্পগুলোকে অনুমোদনহীনতার জন্য দোষারোপ করা যায় না। আজকে যদি ঠিক করি, এ বছর থেকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে, পাঁচ বছর পর আবার রিভিউ করতে হবে এবং সময়ের প্রয়োজন মেটাতে হবে; তাহলে দৃঢ় হাতে সমস্ত শক্তি এক করে কাজ করতে হবে। সরকার-ডেভেলপারসহ বহুপক্ষীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে। সরকার যদি মনে করে এখানে খাল থাকার কথা, কিন্তু ভবন তৈরি হয়েছে, তাহলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জমির বিনিময়ে জমি দিয়ে সেখানে খাল সৃষ্টি করতে পারে। প্রয়োজনে ডেভেলপারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিরস্কার, শাস্তি বা অসহযোগিতার মাধ্যমে গঠনমূলক সমাধান হবে না।
দুর্নাম তো রাজউকেরও হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কিছু মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। সেটা বেসরকারি ডেভেলপারদের বেলাতেও হয়। পরিকল্পনা না থাকার কারণেও হয়। চেষ্টা করতে হবে, যাতে ক্রেতা-ভোক্তার ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়।
ড্যাপ প্রণয়ন করার সময় রিহ্যাবের সঙ্গে বসা হলেও তাদের সব কথা শোনা হয়নি। আমরা লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। ড্যাপ করেছে চারটি বড় বড় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। আমরা মতামত দিয়েছি, বৈঠক বৈঠকের মতো হয়েছে, কিন্তু তাকে অর্থপূর্ণ করা হয়নি। এখান থেকেই সরকারের সঙ্গে আবাসনশিল্পের উদ্যোক্তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সক্ষমতা ও সমন্বয় বাড়াতে সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌথতা দরকার। সরকারকে ব্যবসায়ী, ক্রেতাসহ সবার দায়িত্ব নিতে হবে।
তানভিরুল হক: সাবেক সভাপতি, রিহ্যাব।

No comments

Powered by Blogger.