জন্মদিনে শুভেচ্ছা-দ্বিজেন শর্মা-কথা by বদিউর রহমান

দ্বিজেন শর্মা একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান। এই নাম আর প্রতিষ্ঠানের পেছনে যে মানুষটি, তিনি আজ ৮৪ বছরে পা রাখলেন। দীর্ঘদিন অক্লান্ত পথ হেঁটেছেন তিনি। এখনো হাঁটছেন। বনে-বাদাড়ে, মেঠো পথে, সবুজের পথ চিরে। কারণ বৃক্ষ আর লতা-গুল্মই তো তাঁর পথের সাথি, জীবনসাথি।


তিনি উদ্ভিদবিজ্ঞানী, তিনি নিসর্গপ্রেমী, তিনি সৌন্দর্যপিয়াসী, সমাজসচেতন, প্রগতিমুখী। তিনি নান্দনিক ভাবনার এক ঋদ্ধ পুরুষ। ১৯২৯ সালের ২৯ মে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শিমুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। উদ্ভিদবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেন ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চাকরির সুবাদে সে বছরই চলে যান বরিশালে। যোগ দেন সত্য প্রেম পবিত্রতার ধারক মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্তের ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে। জন্মভূমির ঠিক বিপরীত প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটান চার বছর। উপভোগ করেন ভাটির দেশের নানা গাছপালার সৌন্দর্য। ব্রজমোহন কলেজে গড়ে তোলেন হাজারো বৃক্ষের এক বিশাল উদ্যান। সে উদ্যানে তাঁর লাগানো নাগলিঙ্গম বা ক্যানন বল গাছটি আজও সগর্বে দাঁড়িয়ে। বছর ঘুরে সময় এলে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে যেন তাঁরই নাম ঘোষণা করে। গাছের তো মানুষের মতো অতীত কিংবা জন্মদাতাকে ভুলে যাওয়ার জ্ঞান নেই। যা হোক, এরপর চলে আসেন ঢাকায়। চাকরি নেন নটর ডেম কলেজে। সেখানে ১৩ বছর অধ্যাপনা করে ১৯৭৪ সালে পাড়ি জমান ভিনদেশে। অনুবাদকের চাকরি নেন মস্কো প্রগতি প্রকাশনায়। ১৭ বছর কাটান পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে। সেই সুবাদে ঘুরে বেড়ান ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ফিনল্যান্ডসহ সমাজতান্ত্রিক বহু দেশ। দেশে ফেরেন ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের পর। এরই মধ্যে লেখেন বেশ কয়েকটি বই। পরিচিত হন অধ্যাপক-লেখক-অনুবাদক হিসেবে। দ্বিজেন শর্মা কাজ করেছেন বাংলাদেশের একমাত্র কোষগ্রন্থ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির 'বাংলাপিডিয়ায়'। আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত ২৮ খণ্ডের বিশাল 'উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ' সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে। দ্বিজেন শর্মার পরিচয় কেবল এই একাডেমিক সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আরো কিছু; তাঁর বিচরণ বিচিত্র পথে। নানামুখী কৌতূহলী অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি দ্বিজেন শর্মার চারদিকের হাজারো দরজা খুলে দিয়েছে। একাডেমিক বিষয় হিসেবে উদ্ভিদজগতে তাঁর সার্থক বিচরণ যেমন তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করেছে, তেমনি তাঁর সমসাময়িক সময় অর্থাৎ প্রায় ছয় দশকের নিজ দেশ-সমাজসহ বিশ্ববীক্ষা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে। উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পথ চলতে তিনি স্বাভাবিকভাবেই বেছে নিয়েছেন প্রগতির পথ; প্রগতির অগ্রযাত্রা। তিনি তাঁর পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। বিজ্ঞান আর শিক্ষাক্ষেত্রে সচেতন মানুষের দায়বদ্ধতার কথা উচ্চারণে দ্বিজেন শর্মার উচ্চকণ্ঠ ক্ষণিকের জন্যও নিচু হয়নি। তাঁর বিশ্বাস আর কাজে কোনো ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই। তিনি যেন আমাদের সামনে এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ৮৪তম জন্মদিনে তাঁকে আমাদের অভিনন্দন। তাঁর সুদীর্ঘ জীবন আমাদের প্রত্যাশা।
বদিউর রহমান

No comments

Powered by Blogger.