অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন-সমঝোতার বিকল্প নেই

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে উচ্চ আদালতের রায়ের পর দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পয়েন্ট অব নো রিটার্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিল বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করছিল। আওয়ামী লীগের তরফে বলা হচ্ছিল, উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে এ ব্যবস্থা বহাল রাখার সুযোগ নেই।


অপরদিকে বিরোধী দল অনড় প্রতিবাদী অবস্থান গ্রহণ করায় সাধারণ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সময়ের পৌনে তিন বছর আগেই রাজনৈতিক অস্থিরতার যুগে দেশ প্রবেশ করল বলে শঙ্কা সৃষ্টি হয়। তবে দুটি দলের সর্বশেষ অবস্থান পর্যালোচনা করলে টানেলের অপর প্রান্তে খানিকটা আশার আলো হয়তো দৃশ্যমান। বিএনপি ১২ ও ১৩ জুনের হরতালের পর আরও হরতাল ও লংমার্চের কর্মসূচি প্রদানের ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন গত ১৬ জুন বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ কী হবে, কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন এবং নির্বাচন কমিশনের প্রধান কে হবেন_ এসব বিষয় নিয়ে তার দল সংসদের ভেতরে কিংবা বাইরে যে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনায় রাজি। আমরা এ অবস্থানকে স্বাগত জানাই। দেশবাসীও এ ধরনের অবস্থানে স্বস্তিবোধ করবে। 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত আওয়ামী লীগ'_ শুক্রবার এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রদত্ত এ অভিমতকে বিএনপির সর্বশেষ অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে আশার আলোর শিখা আরও কিছুটা উজ্জ্বল হলো বলেও আমরা ধরে নিতে পারি। সংবিধান সংশোধন কিংবা এ ধরনের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতেই আলোচনা সর্বোত্তম উপায় বলে আমরা মনে করি। সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে তারা জাতীয় সংসদের হাতেই নির্বাচনকালীন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের ভার অর্পণ করেছেন। আদালতের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশিত হলে বিষয়টি সম্পর্কে সংসদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে, তাতে সন্দেহ নেই। বিএনপিকে তাদের অভিমত তুলে ধরার জন্য সংসদেই যেতে হবে। ১৯৯৬ সালে সফল অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কিছুটা আপারহ্যান্ড পেলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদেই গৃহীত হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে যে নেপথ্যে রাজনৈতিক সমঝোতাও কাজ করেছিল সেটা স্পষ্ট। এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেই সেটা রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতি আনতে পারে না। জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদের সামরিক শাসনামলে জাতীয় সংসদ সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল, যা আদালতে নাকচ হয়ে গেছে। বিচারকদের বয়স দুই বছর বাড়ানোর জন্য সংবিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জাতীয় সংসদেই। কিন্তু এর পরিণতিতে রাজনৈতিক অঙ্গন অশান্ত হয়ে উঠেছিল এবং এর মূল খেসারত দিতে হয় তার উদ্যোক্তা দল বিএনপিকেই। নিকট অতীতের এসব অভিজ্ঞতা সব পক্ষই বিবেচনায় রাখবে বলে আমরা আশা করি। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে কতটা অপরিহার্য সেটাও সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। বিএনপিও রাজপথ উত্তপ্ত করার পরিবর্তে সমঝোতার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, এটাই কাম্য। এ ধরনের মনোভাব থাকলে সমঝোতার সূত্র মিলবেই।
 

No comments

Powered by Blogger.