জলাশয় দখল চিরকালের জন্য অবৈধ-সচিবালয় বৈঠকে অপ্রীতিকর ঘটনা

রাজউকের ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) যাতে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়, সে লক্ষ্যে সমাজের সর্বস্তরের নাগরিক ও সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়া, জলাবদ্ধতা, অসহনীয় যানজট, সেই সঙ্গে নিমতলী ও বেগুনবাড়ির মতো ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সবাইকে সংকীর্ণ স্বার্থ পরিহার করতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।


এই মহানগরকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলতে দেরিতে হলেও সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সর্বতোভাবে সফল করে তুলতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই যে আজকের ‘ভূমিদস্যু’দের বাড়বাড়ন্ত রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি। এরা সমাজের নানা শক্তির কাঁধে ভর করে এখন নিজেরাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। তবে তাঁরাও এই সমাজের বাসিন্দা। এই নগর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়লে ভালো-মন্দনির্বিশেষ সবার অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ নগরের অন্যতম। এ জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার পরিকল্পিত নগরায়ণ। দুর্ভাগ্যবশত রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয় অতীতে বিভিন্ন সময়ে নানা চাপ, তদবির ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এর ফলে নগরে আমরা নানা ধরনের বৈষম্য দেখতে পাচ্ছি। কোথাও কেউ জলাশয়, খালবিল, ভরাট করেও হয়তো পার পাচ্ছে। কোথাও রাজউক বা কর্তৃপক্ষ তা ঠেকিয়ে দিচ্ছে।
পরিকল্পিত রাজধানী একটি জাতির বড় গৌরবের জায়গা। কিন্তু আমাদের রাজধানী ঢাকায় যেখানে যেভাবে আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কথা সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। এই পটভূমিতে সরকার এবং সামাজিক শক্তিগুলো যথার্থই উপলব্ধিতে নিয়েছে যে এভাবে চলতে পারে না। সে কারণেই বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে অনুমোদিত ঢাকার মাস্টারপ্ল্যানের দ্রুত বাস্তবায়ন আজ সময়ের দাবি।
গত ১৩ জুন এ বিষয়ে রিহ্যাব ও বিএলডিএর সঙ্গে একটি সভার বিবরণ গতকাল গণমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আমরা এটা জেনে বিস্মিত যে বাংলাদেশের জনপ্রশাসনের সর্বোচ্চ কেন্দ্রে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সভায় সৌজন্য ও শিষ্টাচারের ঘাটতি পড়েছিল। গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে এবং তাঁদের প্রতি অসৌজন্য প্রকাশ করার এমন ঘটনা বিরল। মন্ত্রিসভার সদস্যপদ প্রজাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সাংবিধানিক পদ। প্রকাশ্যে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার কোনো চেষ্টা অনভিপ্রেত। এ ধরনের ঘটনা সামগ্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্ব ও ভাবমূর্তিকে ম্লান করে।
আমরা আশা করব, পূর্ত মন্ত্রণালয় কোনোক্রমেই অন্যায্য চাপ বা হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না। রোববার যে সংলাপের সূচনা হলো তা যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি যৌক্তিক পরিণতি লাভ করে। মনে রাখতে হবে, পরিকল্পিত নগরায়ণ বিশেষ করে বেআইনিভাবে দখল কিংবা ভরাট করে নেওয়া নদীনালা, খালবিল, জলাশয় ইত্যাদি পুনরুদ্ধার সরকারের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। পদে পদে বাধা আসবে। এ কাজে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে আমরা বিরোধী দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই। আমরা একই সঙ্গে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে একটি সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। পরিকল্পিত নগরায়ণ ও পানিপথ পুনরুদ্ধারে একটি সামাজিক আন্দোলনেরও বিকল্প নেই। আবাসন ব্যবসায়ী, রাজউক, পূর্ত মন্ত্রণালয় বা বিচার বিভাগসহ সকল মহলকে এটা উপলব্ধি করতে হবে যে পানিপ্রবাহ, নদী ও বায়ু প্রকৃতির দান। রাষ্ট্র এর হেফাজতকারী মাত্র। রাষ্ট্র এ ধরনের সম্পদ কারও কাছে কখনো বিক্রি করতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.