পদ্মা সেতু প্রকল্প-প্রস্তাব জমা দিল মালয়েশিয়া-চুক্তি জুলাইয়ের পর, আজ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন

মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতায় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য খসড়া চুক্তিপত্র তৈরি হচ্ছে ৩০ জুনের মধ্যে। চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হবে জুলাইয়ের পর। বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল সোমবার মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধিদল এই সেতু নির্মাণে তাদের প্রস্তাবপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু বিভাগে উপস্থাপন করেছে।


মালয়েশিয়ার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দাতো সেরি স্যামি এস ভ্যালুর নেতৃত্বে ২৬ জনের এই প্রতিনিধিদল যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। এই প্রস্তাব নিয়ে গতকাল সেতু ভবনে সেতুর অর্থ জোগাড়, টোলের হারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটা ট্রাস্ট গ্রুপের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে অংশ নেন। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলটি আজ মঙ্গলবার পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিদর্শনে মাওয়া ও জাজিরা এলাকায় যাবে।
সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধিদল প্রস্তাবের দুটি কপি যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের হাতে তুলে দেয়।
৯ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ : মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুরে সেতু ভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'মালয়েশিয়ার প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয় আরো মাসখানেক ধরে খতিয়ে দেখা হবে। আশা করি, কয়েক মাসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারব। আগামী সাড়ে আট থেকে ৯ মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে বলে আমরা মনে করছি। প্রতিনিধিদল আউটলাইন দিয়েছে, এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার পর দুই দেশ একমত হলে চুক্তি হবে।' তিনি আরো বলেন, কেউ কারো স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চুক্তি করবে না। মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে কী আছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'এগুলো আমরা এখনই বলতে চাচ্ছি না। চূড়ান্ত চুক্তির সময় সবাইকে জানানো হবে, কোনো কিছু গোপন করা হবে না।' প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, চুক্তি হলে পুরো ব্যয় মালয়েশিয়াই বহন করবে।
কাতারের সংশ্লিষ্টতা নেই : পদ্মা সেতু প্রকল্পকে 'জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট' বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে, তবে এ বিষয়ে সবার সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে অন্য কোনো দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, মালয়েশিয়া অন্য কোনো দেশকে সঙ্গে নেবে কি না, সেটি তাদের বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত রবিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মালয়েশিয়ার পাশাপাশি কাতারকে পাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, 'পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটি তাঁর বক্তব্য। তিনি দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের জন্য কাতারের সহযোগিতা চেয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু এ প্রকল্পে আমি কাজ করছি প্রধানমন্ত্রীর গাইডলাইন মেনে। আমি কাতারের বিষয়ে কিছু জানি না।'
উল্লেখ্য, ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিল ২০১১ সালের এপ্রিলে। পরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তা স্থগিত করে দেয় সংস্থাটি। এ অবস্থায় পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর জন্য গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.