জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি বরাদ্দ অব্যাহত থাকবে

গন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করা হবে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকারি বরাদ্দ অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করলে তিনি এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ পাবে।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নিজস্ব তহবিল গঠনের বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। আইন সংশোধনের দাবিতে
আন্দোলনে গত সপ্তাহজুড়ে পুরান ঢাকার এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ছিল উত্তাল। আন্দোলন গড়ায় রাজপথেও। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের আগে পূজার ছুটি দিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়। এ পরিস্থিতিতে গতকাল শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। একে অপরকে মিষ্টিমুখও করান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ছাত্রলীগ বিকেলে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি অর্থায়ন বন্ধ সংক্রান্ত আইনের ধারা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে এবং এ খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও সমাজের সম্পদশালীদের কাছ থেকে এ ফান্ডের জন্য অনুদান সংগ্রহ করতে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের পরামর্শ দেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ এবং জাতিসংঘে 'শান্তির মডেল' উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও মুখ্য সচিব শেখ ওয়াহিদ-উজ জামান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দলে ছিলেন অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. রুহুল মোমেন, অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া, অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম, অধ্যাপক ড. এসএম আনোয়ারা বেগম, ড. অরুন কুমার গোস্বামী প্রমুখ।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, 'ব্যতিক্রমী আইনের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে কালো মেঘের যে ঘনঘটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা কেটে গেছে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।' তিনি আরও জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।
কুমিল্লা ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনও সংশোধন হবে : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইনও সংশোধন করবে সরকার। শিক্ষা সচিব কালাম আবদুল নাসের চৌধুরী গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি কুমিল্লা ও নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খুব শিগগিরই আইন সংশোধন করা হবে।'
আইনের ২৭ (৪) ধারায় যা আছে : বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়। তবে আইনে ২৭ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পাঁচ বছর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ভার তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে, যা দেশের প্রচলিত অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ২৭ (৪) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় জোগাতে সরকার প্রদেয় অর্থ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে এবং পঞ্চম বছর থেকে ব্যয়ের শতভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ও উৎস থেকে বহন করতে হবে। ২০০৮ সালের জুন ছিল প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময়। এ হিসাব অনুযায়ী ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়কে ৬ কোটি, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে বরাদ্দ বন্ধ থাকার কথা ছিল।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন :আইন পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, পরিবহনসহ সব সংকট নিরসনের দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ও প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এদিন প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর করা হয়। সাড়ে ৩ ঘণ্টা এ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। টানা চারদিন আন্দোলনের পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আজাদ চৌধুরীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। তারাও বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ধারা পরিবর্তনের বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাবি কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ :ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ডিজিটাল করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী শেখ হাসিনা তার শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে ব্যক্তিগতভাবে অনেক বই দান করবেন বলে ঘোষণা দেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কমিটির সভাপতি আশরাফুদ্দিন আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.