রহস্যে ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশ

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিউরী গ্রামের যুবলীগকর্মী সাগর হত্যার সাত মাসেও মামলার কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। সন্দেহভাজন খুনীদের একজন লৌহগাঁওয়ের একদিলকে পুলিশ গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ জানায়, এ সময় সে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয় এবং নিজে এর সঙ্গে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে। পরের দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে বলেও রাজি হয়। কিন্তু ২৯ সেপ্টেম্বর সকালেই একদিল আচমকা বেঁকে বসে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবে না বলে সে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। ফলে পুলিশ সাগর হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে ফের ঘুরপাকের মধ্যে পড়ে।
থানা হাজতে কে বা কারা একদিলকে ইন্ধন দিল, এ নিয়ে পুলিশের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, গভীর রাতে কেউ একদিলকে ফাঁসির ভয় দেখায়। তাই সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। পুলিশের বিপথগামী কোনো সদস্য আসামি পক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থানা হাজতের ভেতর একদিলকে অসৎ পরামর্শ দিয়ে থাকতে পারে বলেও গুঞ্জন ওঠে। পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে বাজিতপুর থানার ওসি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের 'রোল কল' করে এর ব্যাখ্যা চান। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত এ 'ষড়যন্ত্রের' রহস্য জানা যায়নি।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদে একদিল জানায়, হত্যা পরিকল্পনাকারীরা ঘটনার দিন তাকে মদ পানের দাওয়াত দেয়। রাতে এসে একদিল দেখে, চারজন হাওরের নির্জন ভিটায় অপেক্ষা করছে। তাদের মধ্যে সাগরও ছিল। পরে তারা সবাই মদ পান করে। একপর্যায়ে মাতাল অবস্থায় সবাই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। ওই সময়ই চারজন মিলে সাগরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে সাগরের পরনের লুঙ্গি খুলে লাশ হিজল গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সূত্রটি জানায়, একদিল যাদের নাম প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে আল-আমিন নামের সাগরের চাচাতো ভাইও আছে। তার দেওয়া তথ্যমতে বৃহস্পতিবার পুলিশ পিউরী থেকে আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে সাগর হত্যা মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়।
পুলিশ আরো জানায়, একদিলের বক্তব্যের সঙ্গে আল-আমিনের বক্তব্যের মিল রয়েছে। তবে আল-আমিন হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আল-আমিন জানায়, ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে সে প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। নয়তো পরিকল্পনাকারীরা তাকেই খুন করত।

No comments

Powered by Blogger.