শেয়ারবাজারে দিনভর সূচকের ওঠানামা

টানা তিনদিন দরপতনের পর গতকাল বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ছিল মিশ্র অবস্থা। দিনের শুরুতে বেশির ভাগ শেয়ারের দর ও সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত অস্থিরতার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেনদেন। উভয় শেয়ারবাজারের মোট লেনদেনও ছিল প্রায় অপরিবর্তিত। এদিকে বাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আইসিবির আটটি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি।
 চলতি বছরের ডিসেম্বরে ফান্ডগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এসইসির এ সিদ্ধান্তে শেয়ার বিক্রির চাপ কমবে। এতে বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর বেশির ভাগ শেয়ারের দর বাড়লেও সূচক বেড়েছে মাত্র এক পয়েন্ট। বড় মূলধনী ও সর্বাধিক মূল্যের কিছু কোম্পানির শেয়ারদর কমার কারণে অপেক্ষাকৃত
ছোট মূলধনী ও কম দামি শেয়ারের দর সামান্য বৃদ্ধিই এ অবস্থার কারণ ছিল বলে জানান বাজার সংশ্লিষ্টরা। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৮টি কোম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজের মধ্যে ১৫২টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯০টির। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৭৯টি কোম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজের মধ্যে ৭৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৯টির। পাশাপাশি নির্বাচিত খাত সূচক কমেছে প্রায় ৫৭ পয়েন্ট।
আইসিবি আট ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধি : গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নিয়মিত সাপ্তাহিক সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালিত আইসিবি সিরিজের প্রথম আটটি মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ আরও এক বছর বৃদ্ধি এবং জনমত যাচাই শেষে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার সংশোধন অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি। ফলে ২০১২ সালের মধ্যে ফান্ডগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
গতকাল কমিশনের নিয়মিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংস্থার মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান। এছাড়া ভিআইপিবি এনএলআই ১ম মিউচুয়াল ফান্ড নামে ৫০ কোটি টাকা আকারের একটি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের প্রসপেক্টাস অনুমোদন করা হয় বলে জানান তিনি। এর আগে আইসিবি ফান্ডগুলোর মেয়াদ তিন দফায় বৃদ্ধির আবেদন করেছিল।
মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংশোধন : মিউচুয়াল ফান্ডের প্লেসমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ১ কোটি টাকা নির্ধারণ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকের মতো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা করতে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনা কাজ ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের (পেনশন ফান্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, এনডাওমেন্ট ফান্ড, ভেনচার ফান্ড প্রভৃতির) বিনিয়োগ তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে পারবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। এসইসিকে অবহিত করা সাপেক্ষে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও উপদেষ্টা সেবা প্রদানের অনুমতি রেখে এসইসি (মিউচুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১-এর সংশোধন চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে বলেও জানান এসইসির মুখপাত্র।
নতুন সংশোধনে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকেও উদ্যোক্তা হিসেবে ফান্ড গঠনের অনুমোদন, প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ডের নামকরণের ক্ষেত্রে শুরুতেই ফান্ড ব্যবস্থাপকের নাম সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিধির সংশোধন প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ের প্রাইভেট প্লেসমেন্টে মিউচুয়াল ফান্ডে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হলেও চূড়ান্ত সংশোধনীতে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রাইভেট প্লেসমেন্টে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে লক-ইন এক বছরের পরিবর্তে ছয় মাসে নামিয়ে আনা, মেয়াদবিহীন (ওপেন এন্ড) মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন আকার ২০ কোটি টাকা থেকে আরও কমিয়ে ১০ কোটি টাকা করা, যে কোনো আইপিওর ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর জন্য নির্ধারিত কোটা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.