বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফিরিয়ে আনতে দীপু মনির চিঠি

বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির মধ্যে চারজনের হদিস নেই। তারা কোন দেশে অবস্থান করছেন, সে তথ্যও পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নেই। অপরদিকে কানাডা ও আমেরিকায় অবস্থান করা দুই আসামি মেজর (অব.) এমএইচ নূর চৌধুরী ও কর্নেল (অব.) এএম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনতে চলছে রশি টানাটানি। তাদের ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। পলাতক অপর চার খুনি হচ্ছেন_ লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার বিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান জানান, বঙ্গবন্ধুর খুনি এম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও নূর চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে কানাডার
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ডকে চিঠি লিখেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি গতকাল বুধবার চিঠি দুটিতে স্বাক্ষর করেছেন। গতকাল বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ও কানাডার অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি দুটি পাঠানো হয়েছে। তারা সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি পেঁৗছে দেবেন।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা দেশে ফিরলে আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ রয়েছে। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয়েছে তা বলা যায় না। সাজার বিরুদ্ধে তাদের আপিল, রিভিউ এবং সর্বশেষে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাজেই দেশে ফিরলেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে বলে বিদেশে কোনো আসামি বলে থাকলে তা ঠিক হবে না। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বিচারার্থে বা দণ্ডদানার্থে বিদেশে অবস্থানরত আসামিদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পর্যালোচনা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের সভাশেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস, স্বরাষ্ট্র সচিব মনজুর হোসেন, আইন ও বিচার সচিব সহিদুল করিম, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা ।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অগ্রগতি হচ্ছে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। কানাডায় পলাতক নূর চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে কূটনৈতিক চ্যানেলে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তনের কারণে পলাতক চার আসামির অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা গেলে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের অবস্থান জানতে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোকেও তাদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়। ছয়জনের মধ্যে দু'জনের অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে।
পলাতক খুনিদের ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নূর চৌধুরীর পাসপোর্টটি কানাডা সরকার ইতিমধ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। তিনি সেখানে পাসপোর্টটি ফিরিয়ে নিতে এবং রিফিউজির (শরণার্থী) মর্যাদা পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন; কিন্তু কানাডা সরকার তার সব আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। কানাডায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান (ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট) নেই। এ কারণে আইনি মোকাবেলা করতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দু'দেশেই পৃথক কেঁৗসুলি নিয়োগ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, চীনের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে কানাডা ফিরিয়ে দিয়েছিল। কী প্রক্রিয়ায় তারা ফেরত পেয়েছিল_ সে বিষয়টিও যাচাই করে দেখা যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালত ১২ জনের ফাঁসির আদেশ দেন। এর মধ্যে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ ফারুক রহমান, মুহিউদ্দিন আহমদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা এবং একেএম মহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর থাইল্যান্ড থেকে বজলুল হুদা এবং ২০০৭ সালের ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফেরত আনা হয়। পলাতক সাতজনের মধ্যে লে. কর্নেল (বরখাস্ত) আবদুল আজিজ পাশা (আর্টিলারি) জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো : বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। হত্যা, গুমের বিষয়ে মামলা করলে বা ক্রসফায়ারসহ অন্যায় কিছু হলে থানা, আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা খতিয়ে দেখবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.