সিলেটে ওএমএসের চাল ডিলারদের 'গলার কাঁটা'

ক মাস আগেও সিলেটে খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) চালের জন্য দীর্ঘ লাইন থাকত। কিন্তু এখন চাল নিয়ে ডিলাররা পড়েছেন দ্বিমুখী জটিলতায়। তাঁরা না পারছেন চাল বিক্রি করতে, না পারছেন ফিরিয়ে দিতে। এবারের বরাদ্দ করা চাল আতপ হওয়ায় এবং এর গুণগত মান যথাযথ না হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আতপ চালে অভ্যস্ত না থাকায় স্বল্প আয়ের লোকজনদের মধ্যে চাল ক্রয়ে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সরবরাহ করা চাল যেহেতু বিক্রি করতেই হবে_তাই ডিলারদের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে না দাঁড়িয়ে নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ট্রাক নিয়ে যেতে হচ্ছে। ফেরি করার মতো রাত পর্যন্ত চাল বিক্রির চেষ্টা করছেন তাঁরা। ডিলাররা ওএমএসের জন্য আতপ চালকে 'গলার কাঁটা' বলে মন্তব্য করছেন। ডিলাররা জানিয়েছেন, এখন পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে চাল বিক্রি করছেন।
দৈনিক জনপ্রতি পাঁচ কেজি করে চাল বিক্রির নিয়ম থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদার চেয়ে বেশি চাল গছিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু একবার ক্রেতারা এই চাল নেওয়ার পর দ্বিতীয়বার চাল কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ক্রেতাদের অভিযোগ, এ চাল রান্না করার পর হাঁড়িতে বসে যায় এবং নরম হয়ে যায়। খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে কম মূল্যে সরকার ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরের অংশ হিসেবে সিলেট নগরেও ওএমএসের চাল বিক্রি করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় চাল বিক্রির জন্য ১৫ জন ডিলার রয়েছেন। প্রত্যেক ডিলারকে প্রতিদিন তিন টন (তিন হাজার কেজি) চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই হিসাবে সিলেট নগরে প্রতিদিন ৪৫ হাজার কেজি চাল বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনই সেই পরিমাণ চাল নিতে হচ্ছে ডিলারদের। ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, সিলেটে খোলাবাজারে আতপ চালের চাহিদা একেবারেই কম। এ জন্য তাঁরা চাল বিক্রি করতে পারছেন না। নগরের পাড়া-মহল্লার অলিতে-গলিতে ট্রাক নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থেকেও চাল কেনায় ক্রেতাদের সাড়া পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় তাঁরা এই বিপুল পরিমাণ চাল নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। প্রতিদিনই তাঁদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরেজমিন কয়েকটি জায়গায় দেখা যায়, আগে যেখানে চালের ট্রাকের জন্য লোকজন অপেক্ষা করতেন, এখন সেখানে বলতে গেলে ক্রেতাই নেই। ওএমএসের চাল বিক্রির সময় কোথাও কোনো স্বল্প লাইনও দেখা যায়নি। ক্রেতারা পাঁচ কেজি চাল কিনতে এলে তাঁদেরকে অনেকটা জোর করে ১০ কেজি দিয়েও দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলে চৌকিদেখি এলাকার ডিলার মাহবুব আহমদ বলেন, 'সবাই জানেন সিলেটের মানুষ আতপ চালে অভ্যস্ত। কিন্তু ওএমএসের চালের ক্রেতারা খুবই স্বল্প আয়ের, যাঁদের প্রায় শত ভাগই বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দা এবং তাঁরা সিলেটের স্থানীয় নন। অন্য জেলার লোকজন আতপ চালে অভ্যস্ত নন এবং তাঁরা সিদ্ধ চাল খেয়ে থাকেন। প্রতিদিন ট্রাকের ভাড়া, তিনজন মজুরের মজুরি, চাল বিক্রি না হলে গুদামজাতকরণ সব মিলে আমাদেরকে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান মাহবুব।' একই কথা বললেন মদিনা মার্কেট এলাকার ডিলার বজলুর রহমান, কানিশাইল এলাকার মো. শহিদ ও মেডিক্যাল এলাকার আজমল আলী। তাঁরা জানান, সারা দিন-রাত পরিশ্রম করেও দুই হাজার কেজি চাল বিক্রি করতে পারছেন না। ডিলারদের কথার সত্যতা পাওয়া গেল কয়েকজন ক্রেতার মুখ থেকে। আম্বরখানা, চৌকিদেখি, মীরাবাজারের কয়েকজন ক্রেতা জানান, কম দামে তাঁরা সিদ্ধ চাল খেতে চান। আতপ চাল খেয়ে তাঁরা অভ্যস্ত নন। এটা রান্না করাও কষ্টকর। বিষয়টি স্বীকার করেছেন সিলেট সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অমরেন্দ্র কুমার শর্মা। তিনি বলেন, 'ডিলাররাও আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁরা আতপ চাল চালাতে পারছেন না। কিন্তু এটা সরকারের বরাদ্দ। আমাদের কিছু করার নেই।' আগামী কুরবানির ঈদের পর আবারও সিদ্ধ চাল আসবে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.