আন্তর্জাতিক- জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক by অজয় দাশ গুপ্ত

ইকিলিকস এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ খুব শীঘ্রই ফেস অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড হতে যাচ্ছে। বিশ্বখ্যাত টাইমস ও অন্যান্য মিডিয়ার জরীপে সে ফলাফল আসন্ন প্রায়। এদ্দিনে আমরা এর কারণ, ব্যাখ্যা ও পেছনের ঘটনা নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ আজ হিরো তাঁর এই নায়কোচিত ভূমিকা যতটা উজ্জ্বল ঠিক ততটাই অন্ধকার মুরুব্বী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চেহারা।
জুনিয়ান মানব সভ্যতার ইতিহাসে নতুন কেউ নন, তার আগেও সাহসী মানুষরা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে ইতিহাস উজ্জ্বল করে আছেন। মুসকিল এই, তাদের বেশির ভাগই নির্মমভাবে নিহত, অপহূত অথবা রহস্যজনকভাবে অন্তর্হিত হয়ে ছিলেন। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ধন্যবাদ দিতে হয়, এ অবদি সে পরিনতি বরণ করতে হয়নি। সাংঘাতিক ভুল বা উন্মাদনার শিকার না হলে সাম্রাজ্যবাদ সহসা সেটা করতেও পারবে না, মানুষ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়, ভুল থেকে, ভ্রান্তি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করে, জুলিয়ান নিঃসন্দেহে মেধাবী, তাই তিনি সঠিক সময়ে সঠিক থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে জানে বেঁচে গেছেন। ওয়েস্ট মিনিস্টারের পরিবর্তে লিভারপুল বা অন্য থানায় আত্মসমর্পণ করলে কি হতো? বলা দুরূহ, ওয়েস্ট মিনিস্টারের সাথে সভ্যতার সূতিকাগার নামে পরিচিত বিলেতের আত্মসম্মান জড়িয়ে। তা ছাড়া ঐ জায়গাটি মিডিয়ার আগ্রহ ও খবরাখবর তৈরির কেন্দ্র বিন্দুও বটে। মেধাবী জুলিয়ান জানতেন, ঐ থানায় আত্মসমর্পণ অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
জুলিয়ানকে ধন্যবাদ দেয়ার দ্বিতীয় কারণ তিনি নিজে কিছু করেন না। তাঁর উইকিলিকসে মানুষ তথ্য দেয়। মানুষ জানিয়ে দেয় কোথায় কি অন্যায় ঘটতে যাচ্ছে। বলাবাহুল্য, অনুসন্ধান ও তথ্য আদায়ের সে প্রক্রিয়াকে সর্বতো সমর্থন করা যায় না। এক জাতীয় অনুপ্রবেশের মাধ্যমেই গোপন নথিপত্র নিয়ে আসা হয়। যদি নৈতিকতার প্রশ্নই তুলি, কোনটি ভয়ানক? দেশে দেশে অস্ত্র ব্যবসা, জঙ্গিবাদের মদত, তেল, গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে আগ্রাসন, নাকি তা জানিয়ে দেয়া?
লক্ষণীয় আনীত অভিযোগগুলোর কোথাও জুলিয়ানকে উইকিলিকসের জন্য দায়ী করার প্রচেষ্টা নেই। এর দুটো কারণ, প্রথমতঃ বিষয়গুলো নিয়ে নাড়া-চাড়া মানেই নিজেদের বিপদ ত্বরান্বিত করা। তাকে ফাঁসাতে হলে অন্য কোন ঘুর পথ, সেই পুরনো ধান্দা নারী, যৌন কেলেংকারী এগুলোর বিকল্প নেই। সে চোরা গোপ্তা পথটাই বেছে নিয়েছে তথ্য সাম্রাজ্যবাদ। তারা এখন বলছেন, জুলিয়ান সাংবাদিক নন, প্রচলিত অর্থে তাকে সাংবাদিক বলা যাবে কিনা এ নিয়ে তর্ক হতেই পারে। প্রচলিত সাংবাদিকতা কি এখন তার বৃত্ত ভেঙ্গে তিনি এগুতে চাইছে না? কি দ্বৈত ভূমিকা, কী অসভ্য আচরণ। যে দেশ দুনিয়া জুড়ে তথ্য আর গণতন্ত্রের স্বাধীনতা ফেরি করতে প্রাণান্ত, সেই কিনা উইকিলিকসের ব্যাপারে প্রাচীন পন্থি। চাইছে, প্রাগৈতিহাসিক সংজ্ঞার মোড়কে ফেলে শাস্তি নিশ্চিত করতে। কিন্তু তা কি সম্ভব? জুলিয়ান তো নতুন যুগের দূত। তিনি এসেছেন নব হাওয়ার তোড়ে পুরনো কে ভেঙ্গে অজানা সত্য তুলে ধরতে। তিনি এখন একা কোন মানুষ নন। তার সাথে মিলে মিসে একাকার হয়ে গেছে সভ্যতা ও যুদ্ধবিরোধী প্রগতির জনস্রোত। খোদ আমেরিকান সিভিল সোসাইটিও বলছে তিনি অর্থাৎ জুলিয়ান এসেছেন তার উইকিলিকস এসেছে আমাদের গণতন্ত্রকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে।
ভয়টা কোথায় সেটা আমাদের কারো অজানা নয়। শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রতাপশালী শাসক জানে আমেরিকার ভিত্তি মূলত গণতন্ত্র, নির্বাচন থেকে ক্ষমতারোহণে গণতন্ত্রই চালিকা শক্তি, ফলে আগামী দিনগুলোতে জবাবদিহিতা, মুখোমুখি হবার দুঃস্বপ্নকে ভয় পেয়ে জুলিয়ানকে এক হাত নিতে চাইছেন তারা। তা ছাড়া মুখ ও মুখোশের দ্বন্দ্বে মুখোশহীন মানুষগুলোর কদর্য চেহারা নিজেদেরকেই আতঙ্কিত করে তুলেছে হয়তো বা।
জুলিয়ান অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এদেশের নাগরিক হিসেবে তার অধিকার, মর্যাদা, পর দেশে লাঞ্ছিত হবার সময়কালে রাষ্ট্রের ভূমিকা আমার জন্য কৌতূহলের, এমনকি চমকে ওঠার ব্যাপারও বটে। নাগরিকত্বে আমিও অস্ট্রেলিয়ান, এ যাবৎ বিভিন্ন দেশে ছোট বড় অপরাধ বা অন্য কারণে অপমানিত অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকায় বরাবর গৌরব বোধ করে এসেছি। কখনো কখনো সরকারি আচরণ এক দেশে বা নিজ নাগরিকের প্রতি সমর্থনে অন্ধ হবার পরও মনে হয়েছে একেই বলে সভ্য দেশ, একেই বলে গণতান্ত্রিক মানবিকতা, ইন্দোনেশিয়ায় মাদক পাচারে দোষী সাব্যস্ত শেকল করবি থেকে অনেক দৃষ্টান্তেই তা প্রমাণ করা সম্ভব। অথচ জুলিয়ানের ক্ষেত্রে সে জাতীয় অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো কর্তৃপক্ষ মনে করছে, তার বিরুদ্ধে তথ্য হরণের জন্য মামলা হওয়া উচিৎ। তাদের মতে যথাযথ অনুমোদন ব্যতীত সরকারি নথিপত্র সংগ্রহ ও বিতরণ মামলাযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এ দেশের বুদ্ধিধারী লেখক, শিল্পী, তথ্য কমর্ী, সাংবাদিকরা তা মনে করেন না। বিশেষজ্ঞ আইনজীবী রবার্টসন সিডনি থেকে লন্ডন উড়ে গেছেন। উদ্দেশ্য আইনী সহয়তা দান। মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াস চমস্কি থেকে এ দেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষের স্বাক্ষর করা প্রতিবাদ পত্র গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডের হাতে। জুলিয়ানের জন্মভূমি ব্রিসবেন শহরে মিছিল বেরিয়েছে। সে মিছিলে উচ্চকিত শেস্নাগান ছিল 'আমরাই জুলিয়ান এসেঞ্জ। বিলেতে বসবাসরত অসি বুদ্ধিজীবী, লেখক, সাংবাদিক জন পিলজার জানিয়েছেন, উইকিলিকস ও জুলিয়ানের পক্ষে দাঁড়ানোই এখন তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের জন্য ভয়ংকর হয়ে ওঠা জুলিয়ানের পরিণতি এখন সময়ের হাতে। কিন্তু উইকিলিকস কি আমার জন্য জন্মেছে? আমার জন্য জন্মেছিলেন মার্টিন লুথার কিং? থেমেছেন কি ফিদেল ক্যাস্ট্রো?
দুনিয়া কাঁপানো এই উইকিলিকস আর তার স্রষ্টা জুলিয়ান এসেঞ্জকে তুলনা করা হচ্ছে আর্জেন্টাইন বিপস্নবী চে গুয়েভারার সাথে, তবে কি সে পরিণতিই বরণ করতে হবে তাকে? দুনিয়াজোড়া বস্নগ ও অন্যান্য লেখালেখিগুলোয় চে' বিরোধীরাও একমত, ইনিই নতুন যুগের চে'!
====================================
প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া  নথি প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার অ্যাসাঞ্জের  ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকার  শিক্ষা আসলে কোনটা  জীবন ব্যাকরণঃ হিরালি  ন্যাটো ও রাশিয়ার সমঝোতা ইরানের ওপর কি প্রভাব ফেলবে  জার্নি বাই ট্রেন  পারিষদদলে বলেঃ  চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা  সচেতন হলে শিশু প্রতিবন্ধী হয় না  স্মৃতির জানালায় বিজয়ের মাস  বিচারপতিদের সামনে যখন ‘ঘুষ’  কয়লানীতিঃ প্রথম থেকে দশম খসড়ার পূর্বাপর  শ্বাপদসংকুল পথ  মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম  ১২ বছর আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে  চট্টগ্রাম ইপিজেডে সংঘর্ষে নিহত ৪  ড. ইউনূস : প্রতিটি বাংলাদেশির গৌরব  জলাভূমিবাসীদের দুনিয়ায় আবার..  আসুন, আমরা গর্বিত নাগরিক হই  স্মৃতির শহীদ মির্জা লেন  ইয়াংওয়ান গ্রুপের পোশাক কারখানা বন্ধ  ট্রানজিটে ১১ খাতের লাভ-ক্ষতির হিসাব শুরু  চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ছাড়ছে হাতি  ট্রেন


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ অজয় দাশ গুপ্ত


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.