রাজনৈতিক আলোচনা- ৭২-এর সংবিধানের আলোকে কি রূপকল্প বদল করা উচিত নয়? by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

বারের বিজয় দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। সেটা কেবল এ কারণেই নয়, মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের পর ঊনচলিস্নশ বছর পার করে এবার আমরা চলিস্নশ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। এবারের বিজয় দিবসের আরেকটি বিশেষ তাৎপর্য হলো, এবার আমরা দেশকে আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার আইনগত সাংবিধানিক ম্যান্ডেটসহ সেপথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সুযোগ পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন হলো, সে সুযোগ কি কাজে লাগানো হবে?
মনের মাঝে তা নিয়ে সংশয় দানা বেঁধে আছে। অতীতের অভিজ্ঞতা সেই সংশয়বোধের উদয় ঘটায়। কারণ আমাদের জাতির যেমন রয়েছে বড় বড় বিজয় অর্জনের ইতিহাস, তেমনি আগাগোড়া তার রয়েছে বেদনাদায়ক 'সুযোগ হাতছাড়া করারও ইতিহাস।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় রচিত সংবিধানের মৌল বৈশিষ্ট্য বিনাশকারী ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে দিয়েছে। অবৈধ ৫ম সংশোধনী দ্বারা '৭২-এ রচিত আদি সংবিধানের নীতি, দর্শন ও মূলভিত্তিকে প্রতিক্রিয়াশীল ও পশ্চাদমুখী ধারায় বিকৃত ও রূপান্তরিত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কার্যত পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে দেশের সংবিধানকে পুনরায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় পুনঃস্থাপিত করে আদালত তার চূড়ান্ত রায় প্রদান করেছে।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার চরিত্র ছিল অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, জাতিগত নিপীড়নমূলক, সামন্তবাদী-পুঁজিবাদী শোষণমূলক এবং সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পদানত। সেই চরিত্র ধারণ করেই রচিত ছিল পাকিস্তানের সংবিধান। পাকিস্তানের সেসব প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যকে নেতিকরণ (হবমধঃব) করেই অভু্যদয় ঘটেছিল বাংলাদেশের। রাষ্ট্রের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে সংগঠিত করা হয়েছিল এক যুগান্তকারী মৌলিক দিক-পরিবর্তন। পাকিস্তানকে নেতিকরণ তথা হবমধঃব করে প্রতিষ্ঠিত নতুন চরিত্র সম্পন্ন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সংবিধানেও এই হবমধঃরড়হ-এর প্রতিফলন লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। 'জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা'_ এই চারটি নীতিকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিরূপে ঘোষণা করা হয়েছিল। সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে এটাই ছিল দার্শনিক-রাজনৈতিক ভাষায় রাষ্ট্র ও তার সংবিধানের চরিত্রের ক্ষেত্রে প্রথম নেতিকরণ বা ভরৎংঃ হবমধঃরড়হ।
'৭২-এর সংবিধান তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারা অনুসরণ করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বেশিদিন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে একটি মৌলিক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল পট-পরিবর্তন সংঘটিত হয়।
'৭১-এ সূচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারা, যার মূর্ত প্রতিফলন ছিল '৭২-এর সংবিধান, তাকে পুনরায় পাল্টা ধারায় নেতিকরণ করে দেশকে প্রতিক্রিয়ার পথে টেনে নামানো হয়। এই ঘটনা ছিল রাষ্ট্র ও তার সংবিধানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় নেতিকরণ অর্থাৎ ংবপড়হফ হবমধঃরড়হ। হেগেল ও মার্কসীয় বিশেস্নষণ পদ্ধতি অনুসারে নেতিকরণের নেতিকরণ অর্থাৎ হবমধঃরড়হ ড়ভ হবমধঃরড়হ-এর সূত্র ধরে এর ফলে বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছিল নব্য পাকিস্তানি ধারায়। বিগত প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে আমাদের দেশ সেই ধারাতেই পথ পরিক্রমণ করেছে।
৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা ও '৭২-এর সংবিধানের সংশিস্নষ্ট ধারাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃস্থাপনের ঘোষণার মাধ্যমে এবার সংগঠিত হয়েছে তৃতীয় নেতিকরণ অর্থাৎ ঃযরৎফ হবমধঃরড়হ। এর ফলে এবার দ্বিতীয় দফায় নেতিকরণের নেতিকরণ ঘটল। এভাবে দ্বিতীয় দফা হবমধঃরড়হ ড়ভ হবমধঃরড়হ-এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারার পথে দেশের সংবিধানের পুনঃউত্তরণ ঘটল।
সংবিধানের ক্ষেত্রে এই মৌলিক উত্তরণের ঘটনাটি একটি বড় রকমের অর্জন। এই ঘটনার তাৎপর্যও খুবই গভীর। কিন্তু গোটা ব্যাপারটি এখনো পর্যন্ত সংবিধান-কেন্দ্রিক বিষয়ের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু তা নিছকই একটি ছাপানো কাগজ হয়ে থাকবে যদি গত সাড়ে তিন দশক ধরে বিকৃত সংবিধান অনুসরণ করে গৃহীত বিভিন্ন আইন-কানুন ও বিধি-বিধানকে '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃসম্পাদিত করা না হয় কিংবা 'রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম'_ সম্পর্কিত ধারাসহ '৭২-এর সংবিধানের মর্মবাণীর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অংশগুলো উপযুক্তভাবে বাতিল বা সংশোধন করা না হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিগত সাড়ে তিন দশক ধরে রাষ্ট্র ও সরকারের কাজকর্ম যে ধারায় চলছে তার যদি দিক-পরিবর্তন না ঘটানো হয় তাহলে সংবিধান সম্পর্কে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে '৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা ও সুযোগ অর্থহীন ও নিষ্ফল হয়ে থাকবে।
সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পরেই অহেতুকভাবে একথা বলে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল যে, কোর্টের রায়ের বিষয়টি আগে জাতীয় সংসদে পর্যালোচনা করতে হবে এবং তারপর সংসদে প্রয়োজনীয় সংশোধনী অনুমোদন করিয়ে নিয়ে তারপরই কেবল স্পিকারের অনুমোদনক্রমে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা যেতে পারে। কারণ সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা একমাত্র সংসদের রয়েছে, আদালতের সেই অধিকার নেই। এই বক্তব্যের মধ্যে ভ্রান্তিটি ছিল এই যে, আদালত কিন্তু তার রায়ের দ্বারা মোটেও সংবিধান সংশোধনের দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়নি। বরঞ্চ সংসদের পরিবর্তে সামরিক ফরমান দ্বারা সংবিধানের যে ৫ম সংশোধনী সাধন করা হয়েছিল, তা যে অবৈধ, আদালত কেবল সে রায়ই ঘোষণা করেছে। ফলে '৭২-এর সংবিধানের সংশিস্নষ্ট ধারাগুলো স্বয়ঃক্রিয়ভাবে পুনঃস্থাপিত হয়ে গেছে। সংবিধান সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উঠলে সে বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দায়িত্ব হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টের; সংসদ বা অন্য কারো নয়। এক্ষেত্রে এটাই করা হয়েছে। এই রায় মোতাবেক সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা তো বটেই, সেই অনুসারে রাষ্ট্র ও সরকারের কাজকর্ম পরিচালনা করা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় ঘটানো হলে তা হবে আদালত অবমাননামূলক ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ।
স্বাধীনতার পর দেশ গণতন্ত্রের পথ গ্রহণ করেছিল। নানা বাধা, প্রতিবন্ধকতা ও পদস্খলন সত্ত্বেও জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, মৌলিক অধিকার সব স্তরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা স্ব-স্ব স্তরের রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক কাজের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষিত লক্ষ্য নিয়ে দেশ অগ্রসর হচ্ছিল। 'ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার', রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করা প্রভৃতি নীতি অনুসরণের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভূত থেকে দেশকে বের করে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ধারায় দেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল।
বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল নতুন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিকাশের নীতি-দর্শন ও ধারা। 'সমাজতন্ত্র'কে লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে উৎপাদন ও বণ্টনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল। পরিকল্পিত অর্থনীতির পথ, কৃষিব্যবস্থায় উপকরণ উৎপাদন সংগ্রহ-বিতরণে রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালন, ব্যাংক-বীমা-বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় খাতের প্রাধান্য স্থাপন, ব্যাপক সমবায় কার্যক্রম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের প্রচেষ্টা, প্রাকৃতিক সম্পদের নিরঙ্কুশ জাতীয় মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা ইত্যাদি নীতি অবলম্বন করে দেশ চলতে শুরু করেছিল। একথা ঠিক যে, এসব নীতি ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পথে ঘুষ-দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা-অদক্ষতা ইত্যাদি বিরাজমান ছিল। কিন্তু এসব সত্ত্বেও সামগ্রিক বিচারে দেশ অগ্রসর হচ্ছিল প্রগতির পথে।
১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রীয় নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হয়। রাষ্ট্র ও সরকারে চেপে বসে সামরিক কতর্ৃত্ব, নির্বাসিত হয় গণতন্ত্র। সরাসরি সামরিক শাসন অথবা বেসামরিক লেবাসে সামরিক শাসনের পর্যায়ক্রমিক দীর্ঘ কালপর্ব শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভূত আবার চেপে বসে। দেশকে সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত: মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাসে পরিণত করা হয়।
অর্থনৈতিক নীতি-দর্শন সম্পূর্ণ উল্টিয়ে দেয়া হয়। সাম্রাজ্যবাদী ও বহুজাতিক পুঁজির ওপর দেশের অর্থনীতিকে নির্ভরশীল করে তোলা হয়। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার নির্দেশে ঢালাও বিরাষ্ট্রীয়করণ, উদারিকরণ, বি-নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি নীতি গ্রহণ করা হয়। অন্ধভাবে 'খোলা বাজার অর্থনীতির' দর্শন প্রয়োগ করা হয়। পুঁজি সঞ্চয়ের সুযোগ করে দেয়ার যুক্তিতে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় অবাধ লুটপাটের সুযোগ। বেসরকারিকরণের ধারায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন ইত্যাদি প্রায় সব বিষয়কে পণ্যে পরিণত করে গোটা অর্থনীতিসহ সমাজের প্রায় সবক্ষেত্রে মুনাফাতাড়িত কুৎসিত বাণিজ্যিকীকরণের ধারা প্রসারিত করা হয়। বাণিজ্যিকীকরণ ও লুটপাটের ধারায় সমাজে দুবর্ৃত্তায়নের ধ্বংসাত্মক প্রবণতার বিষময় ছোবল সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে।
পঁচাত্তর-পূর্ববর্তী ও পঁচাত্তর-পরবর্তী_ এই দুই পর্বে অনুসৃত রাষ্ট্র ও সরকারসমূহের নীতি-দর্শন-কার্যাবলীর ধারা নিয়ে আরো অনেক বিস্তৃত আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু মোদ্দা কথা হচ্ছে এই যে, এ দুটো সময়কাল হলো দুই পৃথক পর্ব, দুই পৃথক ধারা, গুণগতভাবে দুই ভিন্ন চরিত্রবিশিষ্ট অধ্যায়। একটি আরেকটির পড়হঃরহঁধঃরড়হ নয়। একটিকে নাকচ না করে অন্যটির দেখা পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পঁচাত্তর-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ধারা হলো পরস্পরের নেতিকরণ তথা হবমধঃরড়হ-এর ফসল। একই সাথে উভয় ধারার সহাবস্থান কখনই সম্ভব হতে পারে না।
সংবিধানের ৫ম সংশোধনী করা হয়েছিল '৭২-এর সংবিধানের মর্মবাণীকে নেতিকরণ করে। তেমনি আবার ৫ম সংশোধনী অবৈধ ঘোষিত হওয়ায় তার মর্মবাণীর নেতিকরণ সাধন করেই '৭২-এর সংবিধানের মূলভিত্তি ফিরে এসেছে। তাই এখন যদি দেশকে সংবিধান সম্মতভাবে পরিচালনা করতে হয় তাহলে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে গত সাড়ে তিন দশক ধরে যে ধারা অনুসরণ করা হয়েছে তা আমূল ঢেলে সাজাতে হবে। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের আগে সংবিধানের যে চরিত্র ছিল, সেটাকে ভিত্তি করে রচিত কর্মসূচি এখন, যখন কিনা সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রসম্পন্ন '৭২-এর সংবিধানের মূলভিত্তি পুনঃপ্রবর্তিত হয়েছে, হুবহু বহাল রাখা যেতে পারে না। যদি তা হুবহু বহাল রাখাটা যুক্তিসঙ্গতই হতো তাহলে ধরে নিতে হয় যে '৭২-এর সংবিধানের সাথে ৫ম সংশোধনীর পরবর্তী সংবিধানের কোনো মৌলিক তফাৎ নেই। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে ধরে নিতে হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারার সাথে (যা '৭২-এর সংবিধানে প্রতিফলিত) সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানি ধারার (যা ৫ম সংশোধনীর দ্বারা প্রতিফলিত) কোনো মূলগত পার্থক্য নেই। আমরা সবাই জানি যে একথা সত্য নয়। দুটোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সে কারণেই আগে প্রণীত কর্মসূচি হুবহু বহাল রাখা সম্ভব হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার, রূপকল্প, ভিশন-২০২১ ইত্যাদি দলিল রচনা করে সে সবের আলোকে পথ চলার ঘোষণা দিয়েছে তা '৭২-এর সংবিধানের মর্মবাণীকে ভিত্তি করে রচিত হয়নি। '৭২-এর সংবিধানের মূলভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোন কর্মসূচিও সেসবের মধ্যে ছিল না। কিন্তু এখন যেহেতু '৭২-এর সংবিধান এবং 'সমাজতন্ত্র'সহ চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ফিরে এসেছে তখন কি রূপকল্প, ভিশন-২০২১ ইত্যাদি নতুন করে রচনা করা আবশ্যক নয়? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারার প্রতি প্রকৃতই তার আনুগত্য আছে কিনা, এই বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের দ্বারাই আওয়ামী লীগকে তার প্রমাণ দিতে হবে।
========================
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ :নতুন যুগের বার্তাবাহক  প্রশাসনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি  পরিবেশ সুরক্ষায় তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা  রাত যায় দিন আসে  শিক্ষা ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি অসম্ভব  ভালবাসা নিভিয়ে দেয় হিংসার আগুন  মহান মুক্তিযুদ্ধঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি  রহস্যের পর্দা সরিয়ে দ্যুতিময় এমিলি ডিকিনসন  বেগম রোকেয়াঃ নারী জাগরণের বিস্ময়কর প্রতিভা  শিক্ষারমান ও সমকালীন প্রেক্ষাপট  বিজয় দিবসঃ অর্জন ও সম্ভাবনা  একটি ট্রেন জার্নির ছবি ও মাইকেলের জীবন দর্শন  ডক্টর ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক  উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা  বাংলাদেশ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন  ক্ষুদ্রঋণ ও বাংলাদেশের দারিদ্র্য  শেয়ারবাজারে লঙ্কাকাণ্ড  মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার  শক্ত ভিত ছাড়া উঁচু ভবন হয় না  ট্রেন টু বেনাপোল  বনের নাম দুধপুকুরিয়া  নথি প্রকাশ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার অ্যাসাঞ্জের  ছিটমহলবাসীর নাগরিক অধিকার  শিক্ষা আসলে কোনটা  জীবন ব্যাকরণঃ হিরালি  ন্যাটো ও রাশিয়ার সমঝোতা ইরানের ওপর কি প্রভাব ফেলবে  জার্নি বাই ট্রেন  পারিষদদলে বলেঃ  চরাঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনা  সচেতন হলে শিশু প্রতিবন্ধী হয় না  স্মৃতির জানালায় বিজয়ের মাস  বিচারপতিদের সামনে যখন ‘ঘুষ’  কয়লানীতিঃ প্রথম থেকে দশম খসড়ার পূর্বাপর  শ্বাপদসংকুল পথ  মুক্তিযুদ্ধে গ্রাম  ১২ বছর আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে  চট্টগ্রাম ইপিজেডে সংঘর্ষে নিহত ৪  ড. ইউনূস : প্রতিটি বাংলাদেশির গৌরব  জলাভূমিবাসীদের দুনিয়ায় আবার..  আসুন, আমরা গর্বিত নাগরিক হই  স্মৃতির শহীদ মির্জা লেন  ইয়াংওয়ান গ্রুপের পোশাক কারখানা বন্ধ


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্যে
লেখকঃ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.