১ জানুয়ারি থেকেই বিশ্বকাপের টিকিট

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে টিকিট বিক্রি শুরু করার একটা পরিকল্পনা আগে ছিল। কিন্তু স্থানীয় আয়োজক কমিটির (এলওসি) পরে মনে হলো, এত আগে টিকিট ছাড়লে অনেক আগেই টিকিট শেষ হয়ে যেতে পারে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাতে তা পৌঁছাবে না। তাই গত পরশু এলওসির সভায় ঠিক হয়েছে, বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ জানুয়ারি। টিকিট কোথায় কীভাবে বিক্রি হবে—এসবের বিস্তারিত ঠিক হবে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই। তবে এলওসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ৬৪টি জেলাতেই টিকিট কেনার সুযোগ পাবে মানুষ। যদিও রাজধানীর বাইরে টিকিট যাবে কম।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে হলেও বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের আয়োজক, এই বিষয়টিই দেশবাসীকে বিশ্বকাপ নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহী করে তোলার জন্য যথেষ্ট। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক সাফল্য। ‘টিকিট চাই, টিকিট চাই’ বলে শোরগোলই পড়ে গেছে সারা দেশে। কিন্তু আগ্রহ বিবেচনায় স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ মানুষের সীমিত। মোট আটটি ম্যাচের আয়োজক বাংলাদেশ। ২টি কোয়ার্টার ফাইনালসহ ৬টি ম্যাচ হবে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ-ভারত উদ্বোধনী ম্যাচের পর গ্রুপ পর্বে আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ তিনটিও হবে মিরপুরে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে ইংল্যান্ড ও হল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বাকি দুটি গ্রুপ ম্যাচ।
টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়িটা আরও বাড়ছে দুটি স্টেডিয়ামেরই আসনসংখ্যা কমে যাওয়ায়। মিরপুরে আসনসংখ্যা ২৮০১৪ ও চট্টগ্রামে ১৮২২৮। এর মধ্যে মিরপুর স্টেডিয়ামে তিন হাজারের বেশি টিকিট আইসিসির কর্মকর্তা, দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্পনসরদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। চট্টগ্রামের কত হাজার সংরক্ষিত থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি এলওসি।
টিকিট কম, কিন্তু বিপুল চাহিদা। কীভাবে টিকিট বিক্রি করা হবে? জানা গেছে, বিশ্বকাপে আইসিসির বাণিজ্যিক কয়েকটি অংশীদারের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে। প্রথমত নির্বাচিত হয়েছে হিরো হোন্ডা ও রিবক। মানিগ্রাম ও ক্যাস্ট্রলও যোগ হতে পারে তালিকায়। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান মানিগ্রামের যেহেতু বাংলাদেশে নিজস্ব অফিস নেই, তাই প্রতিষ্ঠানটি যেখানে যে ব্যাংকের সঙ্গে সংযুক্ত, সেখান থেকে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারে। তবে টিকিট বিক্রির কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পূর্বশর্ত, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থার নিশ্চয়তা। টিকিট বিক্রি ও বণ্টনের স্বত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান কায়াজুঙ্গা এলওসির সঙ্গে বসে এটি চূড়ান্ত করবে।
একটা ব্যাপারে অবশ্য এলওসি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পাওয়া গেলে স্থানীয় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিছু বিক্রি হতে পারে। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড এই চেষ্টাটা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
গ্রুপ ম্যাচের টিকিটের মূল্য সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২১ হাজার টাকা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারির টিকিটের দাম ২০০ টাকা, উত্তর ও দক্ষিণ গ্যালারি ৪০০ টাকা, ক্লাব হাউজ ৭০০, আন্তর্জাতিক গ্যালারি (দক্ষিণ) ২ হাজার, আন্তর্জাতিক হসপিটালিটি গ্যালারি ১০ হাজার এবং করপোরেট বক্স ২১ হাজার টাকা। গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের টিকিটের দাম ৩ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে সাধারণ গ্যালারির টিকিটের দাম ২০০ টাকা, দোতলার আন্তর্জাতিক গ্যালারি ২ হাজার ও নিচতলার ‘মার্কি’ আন্তর্জাতিক গ্যালারি ১০ হাজার টাকা, গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড ৩ হাজার টাকা এবং করপোরেট বক্স ২১ হাজার টাকা। মিরপুরে অনুষ্ঠেয় দুটি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের টিকিটের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি। গ্যালারি ৩০০ ও ৫০০, ক্লাব হাউজ ১ হাজার, আন্তর্জাতিক গ্যালারি ৩ হাজার, গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড ৪ হাজার, আন্তর্জাতিক হসপিটালিটি গ্যালারি ১৪ হাজার এবং করপোরেট বক্সের টিকিটের দাম ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ধরা হয়েছে। এখন টিকিট কেনা মানে মূল টিকিটের ভাউচার হাতে পাওয়া, সেটি দেখিয়ে খেলার ৭ থেকে ১৫ দিন আগে সংগ্রহ করতে হবে মূল টিকিট। ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিটের দাম ধরা হয়েছে গ্যালারি ৫০০ টাকা, আন্তর্জাতিক গ্যালারি ৫ হাজার টাকা এবং গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড ২০ হাজার টাকা। ২৪৩৪০ আসনের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিক্রির জন্য টিকিট ছাড়া হবে অর্ধেকেরও বেশি।
টিকিট ক্রয়সংক্রান্ত পরামর্শ ও নির্দেশনার জন্য ১০টি কল সেন্টার থাকবে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটামোদী বিপুল জনগোষ্ঠী তাকিয়ে আছে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দিকে।

No comments

Powered by Blogger.