সেই দুঃস্মৃতি ভুলতে চায় জিম্বাবুয়ে

দুঃখের স্মৃতি ভুলে সবাই সুখের স্মৃতিই মনে রাখতে চায়। জিম্বাবুয়ের আপৎকালীন অধিনায়ক প্রসপার উতসেয়াই বা উল্টো পথে হাঁটবেন কেন?
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে কাল দুপুরে উতসেয়া যখন মিডিয়ার সামনে দাঁড়ালেন, তাঁকে নস্টালজিক করে দেওয়ার চেষ্টা হলো। গত বছরের নভেম্বরে এই চট্টগ্রামেই মাত্র ৪৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। আরেকবার যখন চট্টগ্রামে খেলতে আসা উতসেয়াদের মাথায় নিশ্চয়ই কাঁটা হয়ে খোঁচাচ্ছে সেই অঘটনের স্মৃতি! উতসেয়া সেটাকে পাত্তা তো দিতে চাইলেনই না, উল্টো বাংলাদেশকেই মনে করিয়ে দিলেন সেবারের শেষ ম্যাচটার কথা, ‘এখানে এক বছর আগেও খেলে গেছি। সেবার প্রথম ম্যাচে আমরা খারাপ পারফরম্যান্স করলেও পরের ম্যাচটাতে ২২০ (২২১) রানের মতো করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছিলাম।’
২০০৯ সালের নভেম্বরে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে আসলেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল। ব্রেন্ডন টেলরের সেঞ্চুরির সুবাদে জিম্বাবুয়ের করা ২২১ রান বাংলাদেশ টপকে ছিল মাত্র ১ ওভার আর ১ উইকেট হাতে রেখে। উতসেয়া মনে করিয়ে দিতে পারতেন ৪৪ রানে অলআউট ম্যাচের বাংলাদেশ ইনিংসের কথাও। ওই ৪৪ রান টপকাতেই যে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল সাকিব আল হাসানের দলের!
৪৪ রানের সেই তিন নম্বর উইকেটেই হবে এবারের সিরিজের শেষ ওয়ানডে। তার আগে কালকের ম্যাচটি পাঁচ নম্বর উইকেটে। তবে চট্টগ্রামের উইকেট নিয়ে এবার বাংলাদেশ দলের মধ্যে এমনই আতঙ্ক যে, কোনো উইকেটকেই ভরসা মানতে পারছেন না। কিউরেটর জাহিদ রেজা যতই বলুন, উইকেট ‘স্পোর্টিং’, ‘২৬০-৭০ রান সম্ভব’ ‘...২৫০ রানও তাড়া করা যাবে এখানে’, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মতো প্রসপার উতসেয়ারাও এখানে ২০০-২২০ রানকেই যথেষ্ট মনে করছেন। ‘এখানকার উইকেটে ঢাকার চেয়ে বেশি স্পিন ধরবে। স্কোর বোর্ডে ২২০-এর মতো রান করতে পারলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে’—বলেছেন উতসেয়া। রে প্রাইসেরও ধারণা, ‘এই উইকেটে বল একটু নিচু হয়ে ধীরে আসে। নেটের উইকেটের সঙ্গে ম্যাচের উইকেটের বেশি পার্থক্য নেই। ২০০-২২০ রানই ভালো স্কোর এখানে।’ তবে জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি স্পিনারের বিশ্বাস, গতবারের ৪৪ রানের উইকেটের চেয়ে এবারের উইকেট ভালো, ‘আগেরবার উইকেট একটু নরম ছিল। বর্ষাকাল ছিল, বৃষ্টিও হয়েছিল। এবারের উইকেট সে রকম নয়। একটু মনে হয় ঘাসও দেখলাম।’
গতবারের দুঃস্মৃতি পিছু নিলেও উতসেয়া-প্রাইসরা এবার যেন সিরিজ জেতার জন্যই এসেছেন চট্টগ্রামে। কালকের ম্যাচটা জিতে ১২ ডিসেম্বরের শেষ ম্যাচটাকে ‘ফাইনাল’ বানিয়ে নিতে চান প্রাইস, ‘সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের এই ম্যাচে ভালো খেলতেই হবে। এ ম্যাচ জিতলে শেষ ম্যাচটা হবে ফাইনাল।’ আর এই ‘ফাইনালে’ যেতে জিম্বাবুয়ের বড় ভরসা উতসেয়া-প্রাইসের স্পিনই, উতসেয়াও বলছেন সেটাই, ‘আমাদের অন্যতম অস্ত্র স্পিন। জিম্বাবুয়ের হয়ে আগেও স্পিনাররা ভালো খেলেছে। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তাই অনেক। আশা করি, গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচেও তারা সেটা পূরণ করবে। সবাই জানে, চতুর্থ ওয়ানডেতে জিততে পারলে শেষ ম্যাচে সিরিজ জয়েরও সুযোগ থাকবে।’
উতসেয়ার স্বপ্ন সত্যি হলে ঢাকার দর্শকদের মতো চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের দর্শকেরাও দেখতে পাবে রে প্রাইস আর ক্রিস্টোফার পোফুর আনন্দ উদ্যাপনের অদ্ভুত সেই দৃশ্য। অবশ্য ম্যাচ জেতা লাগে না, তাঁদের উইকেটে পাওয়ার উৎসবটাও যে দেখার মতো! কাল প্রাইসই জানালেন, এই উদ্যাপন কেনিয়া থেকে ‘আমদানীকৃত’, ‘ক্রিকেট খেলাটাকে সব সময়ই উপভোগ করতে চাই আমরা। এ রকম উদ্যাপন কেনিয়ান খেলোয়াড়দের প্রথম করতে দেখি। এরপর আমি আর পোফু ভাবলাম, আমরাও তো একটা কিছু চেষ্টা করে দেখতে পারি। তাতেই আমাদেরও উদ্যাপনের একটা আলাদা ভাষা হয়ে গেল।’
শেষ দুই ম্যাচে নিশ্চয়ই সে ভাষাতেই গান গাইতে চাইবে জিম্বাবুয়ে দল।

No comments

Powered by Blogger.